পর্ব-০১


বড় বড় দুটি চোখ দিয়েও রাখিল করে কানা,
কেন এমন, সেযে তার সৃজন বাহার, হলোনা জানা বিধাতার সে ভেদখানা ।
দুনিয়ায় এত আলো,
কেন তবু আঁধারে রাখিলো,
মাগো একটু নাহয় প্রদীপটা জ্বালো,
যেদিকে তাকাই যেন শুধু দেখতে পাই ঘন কালো,
মা তুমি জাগো, বলোনা মাগো আমি কেন ভালো দেখতে পাইনা ।
ক্ষুধা পেয়েছে মাগো,
মা তুমি নাহয় আবার, একটু জাগো,
কাতর ক্ষুধায়, এক অসহায় জোনাকির ছানায় করিছে অঝোরে কান্না ।
সামাণ্য ঐ একটু সময়,
কেমন করে বলো ওরে পেটভরে খাওয়া হয়,
ভাল দেখা যায়না, কম আলোতে খুঁজে কুড়িয়ে নিতে হয় যাকে তার নিজের খানা ।
কষ্টের আবেগে বলে, এক জোনাকি মা,
বিষাদ ও সাধগুলি সব মা, যতনে রেখে দে করে জমা,
বড় হতভাগি আমি মাগো, পারলে তুই ওরে মা আমারে করে দিস ক্ষমা,
কভুতো রাজার সনে হয়নি বিবাদ, কি অপরাধ মাগো তা আমারইতো আজও হয়নি জানা ।
গোধূলী সাঁঝের পরে,
যখন সবে প্রদীপ জ্বালে তার আপন ঘরে,
জানিনা কখনযে দিন আর,
কিবা দিন কিবা রাত সকলই আঁধারে একাকার ।
এই একই দশা দেখছি জনমভর,
তুমি কি মাগো দাওনা ঠিকমত রাজার খাজনা-কর,
আমরা কি মাগো মহারাজার পর,
তোমার পূজা রাজার কাছে হয়তো মনে হয়নি মনোহর,
কি সে চায় বলো মা নাহলে, কেনরে এত নাখোশ রাজায় আমাদের উপর ।
অন্ধকার ঝোপের ভিতর,
শাখে শাখে ঘর্ষণ লেগে করে কড়কড়,
ডালপালা পাতাগুলি করে কেমন নড়বড় ও কাঁপে থরথর,
দমে দমে খোদারে ডাকা,
পাতার তলে সবটুকু বলে প্রাণপণে আকড়ে ধরে থাকা,
কেমনে বুঝাই মাগো কিযে তা কষ্টকর,
বৃষ্টির সনে দমকা বাতাস ছিটকে এসে গায়ের ‍উপর,
হেলেদুলে যখন ওরে আছড়ে পড়ে, এলোমেলো ঐ দামাল ঘূর্নিঝড়,
কেন আঁধারে ভরে রয়েছে মোদের জগত, হেথা নিয়ে চলো কই মাগো আমাদের আলোময় ঘরখানা ।


পর্ব-০২


ক্ষণে ক্ষণে একটু আলো দেখতে পাই,
আহা এই আছে তা আবার, এই যেন দেখিরে নাই,
অল্প কিছুক্ষণ, সন্ধা পূঁজার পূজারিগণ ঘরে ফিরতেই যায়যে তা ফুরাই,
ঘুমে আর সারাটা দিনের আলোয়,
তীক্ষ্ণ আলোর ক্ষুদ্র ঐ লেজের বাতিটা তার চার্জ হয়,
জীবনটা কঠিন আসলে,
সন্ধায় তা শুধু এক ঘন্টা মাত্র জ্বলে,
তাতেই দিনের ভোজন করা চাই সমাপণ, রহিবে উপোষ নাহলে,
এত অল্পতে ওরে তাহলে,
বলো কেমনে আহা সারাদিনের এ জীবনটা চলে,
ছানারা ডেকে তাদের মাকে বলে,
মোদেরে মাগো, শুধু একবার যে কোন ছলে,
তাতে কিছু হলে হলো,
তোমার রাজার কাছে নিয়ে চলো,
আর না হলেও ভাববো মোদের এ জীবনই সবচে ভালো, মাগো তুমি করোনা তাতে আর মানা ।
নিয়তির এমনই নির্মম লেখা,
হয়নি আজও চোখ মেলে কেউ কারে দেখা,
পারেনি ছানাদেরে মায়,
কভু মনভরে একদিন আদরে পেটভরে খাওয়ায়,
জিঙ্গাসিব গিয়ে মহারাজ দরবারে,
ঐ সৃজন, পালন ও জীবন-মরণ বিধাতারে,
কি নাই তার কাছে আর, কি নাহি ওরে সে করিতে পারে,
তার অসহায় জীবেরা কেন এত কষ্ট পায়, আর ঘাটে ঘাটে তারা হারে,
কেন দিয়েছে মোদেরে বড়বড় চক্ষু দুখানা, কেনইবা বাঁধিল তা আবার দিয়ে ভারি পর্দার ঢাকনা ।
তবু কান্না কিবা কোন ভয়, ভাবনা নয়,
যেটুকু আছে ওরে যা পেয়েছ, তাই দিয়ে জীবনটারে করিতে হবে জয়,
খেয়ে নাও এখনই নাহলে হারাবে,
অতি ঝটপট, ওরে সামাণ্য যেটুকু পাবে,
দেখিবে তাতেই তোমার নিশ্চিত পেটভরে যাবে,
সারাদিনতো তুমি গাঁধার মত, শুধু ঘুমিয়ে থেকেই কাটাবে,
এমন সেই অচেতন ঘুম,
নিরব শান্তির যেন পরম মধুর পরশ চুম,
কান্না করেনা আমার লক্ষ্মী যাদু সোনা, দেখিও তুমি টেরই পাবেনা, ওরে কোন ক্ষুধার  যাতনা ।


পর্ব-০৩


অ ভাই ক্ষুদে পোকা জোনাকি,
তোর আছে ডানা দুখানা, একটা ছোট পাখি,
আমারতো তাও নাই, সে বেদনা কেমনে ভুলে থাকি,
ভেবে দেখ তুই কি পেয়েছিস কি পাসনি ও কি পেতে বাকী,
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ যে মানুষ, তারওতো দেখি যেন অনেকেরই ষোলআনা ফাঁকি,
সন্ধা পিদিম জ্বেলে, নিজের শত কাজ ফেলে, আমি করেছি তাদেরে কত ডাকাডাকি,
বিদ্যান, ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী সবাই,
দেখছি যেন ওরে শুধুই তারা করে ঐ গালভরা বড়াই,
পেয়েও ষোলআনা, তাদের পাবার নেশা ও বাসনা আজও শেষ হয় নাই,
হয়নি কারোই তেমন দেখা-শেখা ও চেনা-জানা, কারণ আসলে তারা এখনও রয়েছে কানা ।
তোর মতই ওরে ভাই,
আমারও আছে কত না পাওয়া, অনেক নাই,
নাচেয়েও আমি যেন ওরে সারাদিন বারোমাসই পাই,
তবু সুশীতল শান্তি পরিমল, কোন সে বিশাল বৃক্ষছায়ার ঠাই,  
বসে গাছতলে নিরজনে,
দরশনের ঐ অপার জলরঙ বনে,
অসীমে গহীনে আমিযে নিরবে ওরে আপন মনে,
আকাশের নীলে আর জমিনের সবুজে মিলে এক অপার সুসম মিশ্রণে,
আমার সব কষ্টগুলি ভুলে থাকি,  
তার শত রুপ আর জীবনের অপরুপ সব বাহারি ছবি আঁকি,
ঐ পরম পাওয়ার সুখে,
একাকি গোপনে আমার গহীন বুকে,
হতাশাগুলির দুহাতে গলাটিপে ধরে হাত দিয়ে মুখে,
যত আহত স্বপ্ন আশা আর, অধীর বাসনাগুলি আমার, আড়ালে ঢেকে রাখি সব পেরেশানি তাড়না ।
আমি ওরে তাই,
আর কোন মোর কাজ নাই,
মনের মত একখান রঙতুলি পাই,
কাগজে কলমের আঁচড়ে কালি ভরাই,
অধম গোলাম, নাহিরে তার কোন দাম চাই,
আমিযে ওরে তার করুণা ও মহিমার সামাণ্য গুন গাই,
মাফ হবে দাদনের ঋন,
এই আশাতে মনভরে আমি নিশিদিন,
সেইতো পরম পাওয়া,
ঐ রোশনীর ঝিলের জলেতে ডুবিয়ে নাওয়া,
তা নহে মোর, ওরে আমার রাজার বড়াই, তার কাছেই একটু চাওয়া,
দুটি ভালো কথা বলে,
নাম লিখিয়ে উত্তম ও সেরাদের দলে,
সুপথে চলে আর, শুধু একটি ভালকাজে সব হারিয়েও আবার, অনেক বেশী পেয়ে জিতে যাবার বাসনা ।  


পর্ব-০৪


কষ্টের আবেগে ভরা জোনাকির মন,
কাতরে তাদের দাতারে করেছিল তারা নিবেদন,
হে সৃজন প্রভু দাতা মহাজন,
কত সুখ নেয়ামত ও ধন অফুরন অগণন,  
কত হয় অপচয়, আছে পড়ে ভান্ডারে তব অপ্রয়োজন ।
শতকোটি বছর আগে ছিল যেমন,
অপার সুখ আর সহস্র নেয়ামত, ধন ও মানিক রতন,
আলো আর ভালো সবইতো ঢের তোমার ছিল, রয়েছে আজও ঠিক তেমন ।
যেটুকু আলো ও যেটুকু খাবার,
নিয়তির নিদান কেনরে জনমভর, একখানা ঘর ছিল কত দরকার,
তোমার এত আছে আর, আমার কেন এত নাই,
দেখিনি তোমারে কভু তবুতো আমি করি তোমার বড়ত্বের বড়াই,
শুনেছি মানুষের মোখে তাই,
করিতে জগতে তোমার, বাণী ক্ষমতা ও গুণ প্রচার, পাঠিয়েছ যারে খলিফা বানাই,
হেন কিছু নাই এ দুনিয়ায়, যা হয় তোমার অজ্ঞাতে ও অনিচ্ছায়, কিবা তুমি যা পারনা ।
দেয়না কেনরে সাড়া,
তা ওতো এক তার ভেদ ইশারা,
তবু কে আছে আর, প্রভু আমার তারে ছাড়া,
যে নিজে নিরাকার,
আহারে তার সৃজনের কতনা অরুপ বাহার,
নিজে খায়না তবে, কোটি জীবের ভিন্ন মজার যোগায় হরেক আহার ।
এমন রাজার গোলাম আমি সেইতো বড়াই
তাই ভেবে আমি ভাই ঐ জগতের কূলকিনারা হারাই,
তার নাম পরিচয় ধরে, সহস্র আকারে আমি তারে খুঁজে বেড়াই,
নানা অনটন, দুঃক্ষ-বেদন ও যত জ্বালাতন আমি সব ভুলে যাই,
পা হতে মাথা তার করুণা ও মহিমার জালেতে জড়াই,
মনের সবকটি জানালা ও দুয়ার খুলে, সব ভুলে জীবনের ঢের আমি স্বাদ খুঁজে পাই,
জনপ্রতি থেকেও সবার নয়ন তিনখানা,
দেখি যেন আজও মানুষ এমন কেন, হয়ে রঙের ফানুস, উড়ছে মেলে ডানা,
ঘুরছে অবিরত হারিয়ে আপন ঠিকানা, পথের বাঁকে বাঁকে পথহারা কত এমন হতভাগা পথিক কানা ।


রচয়িতা/লেখক/কবি


আবু হক মুসাফির
(আবু সাইয়িদ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক)
সেল ফোন-০১৬২৭৮ ৯৪৭৯৭/০১৩০১৭ ১৯৫৫৩
Email-abuhaawk@ymail.com   &  dactarkhana24@gmail.com