দাদার সাথে বস্তি ঘরে
মিলেছে মোর ঠাঁই,
অনেক আদর করে আমায়
সুখের অভাব নেই।


আমার দাদা কৃষক ছিলেন
ছিলো চাষের জমি,
হালের গরু পুকুরে মাছ
ছিলো নাতো কমি।


এক রাতে বিলীন হলো
জমি বসত বাড়ী,
সর্ব হারা হয়ে দাদা
শহরে দিলো পাড়ি।


দাদা বলেন, ”শুন নাতিন
আমরা নদী ভাংগা,
আমাদের ঠাঁই কোথাও নেই
পানি কিংবা ডাংগা।”


নদী ভাংগা কাকে বলে
বলতে পার ভাই?
শতজনে প্রশ্ন করে
জবাব নাহি পাই।


নদী সদা কপাল ভাংগে
ভাংগে সুখের ঘর,
চির তরে ফকির বানায়
করে ছারখার।


নদী ভাংগা শহর বাসী
ঘুমায় রাস্তার ধারে,
প্রতি রাতে লাঠি হাতে
পুলিশ তাড়া করে।


আজব শহর লোকে ভরা
দালান সারি সারি,
কেউ কারো আপন নহে
টাকা কাড়ি কাড়ি।


আমার দাদি শ্যামলা ছিলো
দেখতে ছিলো ভালো,
অকালে সে চলে গেলো
নিভিয়ে সকল আলো।


আমার বাবার পঁচিশ হলো
দেখতে ছিলো বেশ,
বে-খেয়ালে রেলের কাটায়
এক নিমেশে শেষ।


আমার বাবার মরন হলো
আমি ছিলাম কোলে,
আমার মা পালিয়ে গেলো
আমায় ঘুমে ফেলে।


সেই যে গেলো চিরতরে
ফিরলো নাতো আর,
দাদা বলেন "জওয়ান বেটি
দোষ দেইনা তার।”


রেল লাইনের বস্তিঘরে
ভাগ্য দিলো ঠাঁই,
মায়ের স্নেহ বাবার আদর
দাদার কাছে পাই।


পলিথিনের ঘেরা দেওয়া
রেল লাইনের ধারে,
বহু বছর কাটলো দাদার
আমায় কোলে করে।


দুঃখ করে বলেন দাদা
"বয়স যখন হবে,
তুমিও একদিন আমায় ছেড়ে
দূরে চলে যাবে।”


ঘিঞ্জি বস্তি ঠাঁসা ঠাঁসি
দুর্গন্ধে বাস,
একটু জোরে নিঃশ্বাস নিলে
শুনে অন্য পাশ।


মাঝে মাঝে খালি ঘরে
একলা যখন থাকি,
নিজেকে আমি কেমন যেন
অন্য রকম দেখি।


ঠেলাগাড়ী চালায় দাদা
দেহ হাড্ডি সার,
আমার জন্য দিবা রাত্রি
যত চিন্তা তার।


বস্তি ঘরের চিপা পথে
যখন যেতে হয়,
দুই-চারটা উঠতি পোলা
আমার পিছু লয়।


ওরাই আপদ ওরাই বিপদ
সাক্ষ্যাৎ যম ওরাই,
ঐ বিপদের ভাবনা ভেবে
দাদার ঘুম নেই।


নদী ভাংগে বসত বাড়ী
সব করে ছারখার,
সর্ব দুঃখে বানায় দুঃখী
ফকির দুনিয়ার।


নদী ভাংগা দেখতে কারো
খেয়াল যদি থাকে,
রেল লাইনের বস্তি ঘরে
যেতে হবে তাকে।


দুনিয়া ছেড়ে যেতে দাদার
কোন মানা নেই,
আমায় কোথায় রেখে যাবে
ভাবনা করে তাই।


কেউ কি আছে দেখবে তাদের
নদী ভাংগা যারা,
নদী ভাংগার অপর নাম
চির সর্বহারা।


সারি সারি অট্রালিকা
লক্ষ লক্ষ গাড়ি,
ছিটে-ফোটা দিলে মোরা
বেঁচে যেতে পারি।


নারী যদি বস্তি ঘরে
ইজ্জত হারায়,
দায়-দায়িত্ব ষোল আনা
ধনীর কাঁধে যায়।


মানুষ যখন ভাগ্য দোষে
বস্তি বাসী হয়,
সৌভাগ্য চিরতরে
দূরে চলে যায়।


নদীর ভাংগন বস্তি গড়ন
এক সূত্রে গাঁথা,
সভ্য সমাজ কখনো কি
ভাববে এদের কথা?


হায়রে নদী ভাংলী কপাল
বস্তি হলো ঠাঁই,
এখান থেকে বাহির হওয়ার
কোন উপায় নেই।


বস্তিরে তুই বড় জালিম
নাইতো দয়ার লেশ,
রোগে শোকে অনাহারে
জীবন হবে শেষ।


জন স্বার্থের নামে দেশে
বহু কিছু হয়,
বস্তিবাসীর ভাগ্যে কেন
কিছুই নাহি রয়?


আছেন যত জ্ঞানী-গুনি
ধনী-মহাজন,
বদলে দিতে পারেন তারা
আমাদের জীবন।


অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান
স্বাস্থ্য-কিকিৎসা,
সবার কাছে বস্তিবাসীর
এ-টুকুই আশা।