থ্রী ইন ওয়ান চশমা
অচিন্ত্য সরকার


আমাকে খেতে দাও,আমাকে দু'মুঠো ভাত,
এক চামচ ডাল,আর একটা ডিম দাও।
তোমরা সুরম্য হোটেলে বসে তারা কিনে খাও,
চাঁদের সঙ্গ নাও,অন্য গ্রহে আধিপত্যের নকশা আঁকো,
না হয় ভাবো, কিভাবে স্বর্গে বানাবে সাঁকো,
আমার আপত্তি বা সন্মতি নিয়ে ভাবার কিছু নেই,
আমি তো ভোট দিয়েছি। শুধু মাটির পৃথিবীতে
আমার পা দু'টো রাখার একটু জায়গা দাও।
পারলে আমাকে বেঁচে থাকার মতো পুষ্টি দাও।
আমার মা তোমাদের কাছে ইজ্জত দিয়েও,
আমাকে পুষ্টি দিতে পারেনি,নিজেও তো অপুষ্ট ছিলো
তাই জিততে পারেনি, অকালে মরেছে।
আমি কিন্তু বাঁচতে চাই,আমাকে অন্তত
আরও কয়েক টা দিন বাঁচতে দাও।


তোমরা চিরদিন বেঁচে থাকার জন্য,নকল হৃদপিন্ড লাগাও,
পারলে সেকেলে মানব আত্মাটাকেও নকল লাগিয়ে
আলট্রা মর্ডাণ করে নাও,গাছের নিঃশ্বাস
সিলিন্ডারে ভরে সঞ্চয় করে রাখো।
কেবল আমি কালে ভদ্রে অসুস্থ হলে
দু'ফোঁটা হোমিওপ্যাথি ওষুধ যেন পাই।
তোমরা গায়ে ট্যাটু আঁকো, বিদেশি পোশাক পরো,
প্রয়োজনে,আভিজাত্যে কিংবা প্যাশনে,
আমি বুঝতে চাইনে তার মানে,
শুধু আমার লজ্জা ঢাকার মোটা বস্ত্র টুকু দিও।


তোমাদের লজ্জা আছে কি না, থাকলেও তা কেমন,
তা আমরা এত নিচু থেকে দেখতে পাইনে,
সাহস ও করিনে।কিন্তু তোমরা, তোমাদের মা বোনেরা,
উপরের ব্যালকনি থেকে উঁকি মেরে যদি
আমাদের উলঙ্গ দেখে ফেলো,ভাবোতো,
তোমাদের পূর্ব পুরুষদের কথা ভেবে
তোমাদের স্ট্যটাস ভয়ানক লজ্জা পাবে না!


তাই বলছি,আমি নিতান্ত বাঁচার জন্য যেটুকু চাইছি
তাতে তোমারও বিরাট স্বার্থ আছে।ভাবোতো,
আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচক তোমার সন্মান নিয়ে
কিভাবে ছিনিমিনি খেললো! আমার এই অভুক্ত,
উলঙ্গ শরীরের ক্ষীণ পিটপিটে চোখেও লজ্জা লেগেছে।


এক কাজ করো না, আমাদের দু'মুঠো ভাত দিতে
যদি বড্ড বাজেট ঘাটতি হয়,কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে
অর্থের যোগান কমে যায়,তবে থাক,খেয়ে কাজ নেই,
উন্নয়ন চলুক।


কিন্তু এখনও তোমাদের হাতে শেষ উপায় আছে,
ভারত মহাসাগর, হিমালয় পর্বত আর সুন্দরবনকে মর্টগেজ রেখে বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে লোন নাও,
কোনো 'শ্রী' কিংবা 'বিকাশ' প্রকল্প নামে আমাদের চোখে আধার নাম্বার যুক্ত থ্রী ইন ওয়ান একটা করে চশমা গড়িয়ে দাও, যাতে চোখে লজ্জা লাগবে না, রঙিন স্বপ্নে খিদে পাবে না,আর যা দেখবো, তোমাদের মতো করে দেখবো।
কিছুটা নোনা জল,অনুর্বর পাথর আর কয়েকটা অনামী গাছ গেলে কি এমন ক্ষতি হবে!
তবে এই প্রকল্প সফল হলে-
শিল্পায়ন হবে,কর্ম সংস্থান হবে,উন্নয়নে জোয়ার আসবে।
ভেবে দেখো, এতে ভোট,জোট,ঘোট,নোট সর্বোপরি প্রেসটিজ সব ক্ষেত্রেই শুধু লাভ আর লাভ।
থাকবে না খিদে,সমালোচনা, অভাব, চারদিক থেকে
লাগাতার আসবে শুধু প্রশংসা আর বহুগুণ লাভ।