আমাদের কবিতার আসরের কবিদের অধিকাংশই হচ্ছেন বাংলাদেশ কিংবা পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী। যারা প্রবাসী, তারাও এই দুই ভূভাগেরই বংশোদ্ভূত। তাই আমাদের পক্ষে কোন একটি দেশকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে অপরটিকে কম গুরুত্ব দেয়ার সুযোগ নেই। এবং স্বভাবতই বাংলাদেশ থেকে কবিতার বই প্রকাশের পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য থাকছে পশ্চিমবঙ্গেও এভাবে বই প্রকাশ করা সম্ভব কিনা তা যাচাই করা। এক্ষেত্রে আলোচনা সভায় প্রনব দা-র "সুখবর" শিরোনামের লেখাটি সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে নিশ্চিতভাবে।


আমরা এই প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করছি গুরুত্ব দিয়ে। তবে শুরুতে আমার মনে হয় বাংলা-কবিতার ব্যানারে বই প্রকাশের ব্যাপারে আমাদের নীতিমালা সবার সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন।


১। কবিতার সার্বিক স্বত্বাধিকারী হলেন কবি নিজে। তাই কোন কবি চাইলে তাঁর কবিতা যেকোনো বই, ম্যাগাজিন কিংবা অন্য কোথাও প্রকাশ করার পূর্ণ স্বাধীনতা রাখেন। এক্ষেত্রে কবিতাটি ইতিপূর্বে আমাদের কবিতার আসরে প্রকাশ করা হয়েছে বলে আমাদের পক্ষ থেকে কোন বিধি-নিষেধ নেই।


২। কেউ যদি আমাদের আসরের কবিদের কবিতা নিয়ে নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে বই প্রকাশ করতে চান, তবে সরাসরি কবিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অনুমতি সাপেক্ষে এই কাজটা করতেই পারেন। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে কোন রকম সম্পৃক্ততা কিংবা দায়বদ্ধতা প্রযোজ্য নয়।


৩। তবে কোন বই যদি "বাংলা কবিতা ডট কম"-এর ব্যানারে প্রকাশিত হয়, তবে তা একমাত্র আমাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা ও তত্ত্বাবধায়নেই হতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে বইয়ের স্বত্বও বাংলা কবিতা ডট কমের হবে।


৪। সাধারণ ক্ষেত্রে বাংলা-কবিতার ব্যানারে যেকোনো বই প্রকাশের ব্যয়ভারও আমরা নিজেরাই বহনে আগ্রহী। তবে বেশি বেশি বই প্রকাশের সুবিধার কথা চিন্তা করে অপরের আর্থিক সহযোগিতার কথাও বিবেচনা করছি সম্প্রতি। সেক্ষেত্রে বইয়ের স্বত্ব "বাংলা কবিতা ডট কমের" হলেও আর্থিক লাভ বা লোকসান পুরোটাই অর্থ-দাতার হবে। আমরা আর্থিক বিষয়টিতে কোনভাবে জড়িত হবো না।


এবার শতরূপে ভালোবাসা বইটি প্রকাশ করায় যেসব সমস্যা বা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেব্যাপারে কিছু বলি।


১। অনেকে কবিতা জমা দিলেও সঠিকভাবে কবিতার পাতার লিঙ্কটি কপি করে দেননি বলে কবিতাটি যাচাইয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করতে পারিনি।


২। কবিতার প্রাথমিক বাছাইয়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য একাধিক বিচারকের দেয়া মানের গড়ের উপর ভিত্তি করে কবিতা বাছাই করলেও তা সবচেয়ে মানসম্পন্ন কবিতাগুলোই শুধু নির্বাচন করেছে, এমনটা নিশ্চিত করতে পারিনি।


৩। সব কিছুর পরেও পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে এমন নানা অভিযোগে আমরা নিয়মিত বিদ্ধ হয়েছি।


এসবের ফলশ্রুতিতে আমাদের ব্যানারে পরবর্তী বই প্রকাশের জন্য আমরা নিচের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।


১। কবিতা জমা দেয়ার উন্নত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যেন কারও জমা দেয়া কবিতাই বাদ না পড়ে।


২। বাংলা-কবিতা কর্তৃপক্ষ কিংবা আসরের কবিদের বাইরের প্রখ্যাত কোন কবি কিংবা সাহিত্যিক দিয়ে কবিতার মান যাচাই করে প্রকাশিতব্য কবিতার তালিকা তৈরি করতে হবে।


এবার আসি প্রনব দা-র প্রস্তাবিত "শতরূপে ভালোবাসা সম্পূর্ণা" প্রসঙ্গে।


১। যেহেতু "শতরূপে ভালোবাসা" নামে একটি বই প্রকাশিত হয়ে গেছে, তাই একে টেনে পরবর্তী খণ্ড "শতরূপে ভালোবাসা সম্পূর্ণা" পর্যন্ত না নিয়ে বরং নতুন বিষয়বস্তুর উপর নতুন করে কবিতা জমা নিয়ে বই প্রকাশিত হোক।


২। শতরূপে ভালোবাসার জন্য যাদের কবিতাগুলো নির্বাচিত হয়নি, নতুন বইয়ের জন্য তাদের কবিতাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হোক।


৩। তবে যেকোনো ক্ষেত্রেই বাছাই-পূর্বক শুধুমাত্র মানসম্পন্ন কবিতাগুলোকেই প্রকাশ করা হোক, কবিকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়। মনে রাখতে হবে যে কবিতার জন্যই কবির পরিচিতি, কবির জন্য কবিতার নয়।


৪। কবিতা বাছাইয়ের জন্য যদি আসরের বাইরের কোন প্রতিষ্ঠিত কবি রাজি হয়ে থাকেন, তবে খুবই ভালো। তা না হলে প্রকাশক যদি সাহিত্য-জ্ঞানসম্পন্ন কাউকে দায়িত্ব দেন, তাতেও চলবে। মূল কথা হল বাংলা-কবিতা কর্তৃপক্ষ ও আসরের কবিদের বাইরের কেউ হতে হবে।


৫। বইয়ের জন্য কবিতা সংগ্রহ করা থেকে নিয়ে প্রকাশের প্রতিটি ধাপেই আমাদের সম্পৃক্ত রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের নিয়মিত জানাতে হবে। আমাদের অনুমোদনের বাইরে কোন কাজ করা যাবে না।


৬। বই প্রকাশের পূর্বে এর চূড়ান্ত সফট কপি ইমেইলের মাধ্যমে আমাদের কাছে পাঠাতে হবে রিভিউয়ের জন্য।


৭। শারদীয়ার সময় নিশ্চয় আরও অনেক বই প্রকাশিত হয়ে থাকে। এই সময় কবিতার বইটি বের করলে অন্যান্য বইয়ের ভিড়ে তা কতটুকু গুরুত্ব পাবে, এবং অন্য কোন সময়ে প্রকাশ করলে তা আরও বেশি পাঠকপ্রিয় হবার সম্ভাবনা আছে কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে।


প্রনব-দা সহ অন্য সবার মতামত আশা করছি এবিষয়ে। ধন্যবাদ।