আমার জীবন ছড়ানো হাওয়ার মতো,
কখনো নদীর ঢেউ, কখনো বালুকাবেলা।
আমি হেঁটেছি নরম কাদায়,
ফেলে এসেছি পদচিহ্ন, মুছে গেছে জলের আঘাতে।

আমি কিছুই রাখিনি—
না স্মৃতির ছেঁড়া পাতা, না মুখস্থ গল্পের পঙ্‌ক্তি,
শুধু কিছু ধুলো তুলে দিয়েছি বাতাসে,
আর শুনেছি হারিয়ে যাওয়া শব্দের প্রতিধ্বনি।

কখনো আমি ছিলাম শিমুল তুলোর মতো হালকা,
আকাশের বুকে ভাসতে চেয়েছি অবিরাম।
কখনো আবার কুড়িয়ে নিয়েছি কিছু একলা সন্ধ্যা,
জমিয়ে রেখেছি বুকের গভীরে নিঃশব্দ আর্তনাদ।

আমার জীবন ছড়িয়ে পড়েছে অলস বিকেলের আলোয়,
কুয়াশার পাতায় লেখা হয়েছে নিভৃতে।
আমি এসেছি এইখানে,
কিছুই ধরে রাখিনি, শুধু উড়িয়ে দিয়েছি—
যেন হাওয়ার কাছে লেখা এক চিঠি।

আমি ভেবেছিলাম, জীবন একদিন থেমে যাবে—
একটি নিঃশব্দ রাতের কোলে মাথা রেখে।
কিন্তু জীবন তো থামে না,
জীবন কেবল ছড়িয়ে পড়ে,
ঝরা পাতার মতো, অচেনা গানের মতো।

আমি কি কখনো কিছু চেয়েছিলাম?
হয়তো চেয়েছিলাম একফোঁটা শিশির
যে নিভৃতে জলে গলে যায়
ভোরের প্রথম সূর্যের স্পর্শে।

হয়তো চেয়েছিলাম কিছু মেঘের ছায়া
যে ছুঁয়ে যায় নরম ঘাসের গা,
যে ভিজিয়ে দেয় মাটির গন্ধে
মনখারাপের পথঘাট।

কিন্তু কিছুই রাখিনি—
না ভালোবাসার সুতো, না আকাঙ্ক্ষার রঙ।
শুধু দিয়ে গেছি—
হয়তো এক চিলতে গান,
হয়তো কিছু নির্জনতার সুর।

জীবন কি তবে এক দোয়েলের ডানা,
যে উড়তে চায় অন্তহীন নীলিমায়?
জীবন কি তবে এক রোদঝরা দুপুর,
যে ক্লান্তির সঙ্গী হয়ে ফেলে আসে ছায়া?

আমি জানি না।
জানি শুধু, আমি এসেছি এখানে
ছড়াতে ছড়াতে, উড়িয়ে দিতে শিমুল তুলোর মতো।
হয়তো একদিন আমিও হারিয়ে যাবো—
নির্বাক বাতাসের বুকে,
একটি বিস্মৃত নামের মতো,
একটি শেষ বিকেলের মতো।