বন্ধু প্রতিম ভারত একে তো আমাদের সুপ্রতিবেশী তদুপরি এপার বাংলা ওপার বাংলা সমসংস্কৃতির এবং একই ভাষাভাষী । উপরন্তু রক্তের বাঁধনেও বাঁধা । তাই এমনিতেই নাড়ীর টান হৃদয়ের টান তাতে ছিল সবই বিদ্যমান । যেন মোদের দুটি দেহে একটিই প্রান । তারপর যদি আবার থাকে আকুল পারা আহ্বান । তবে কি সাধ্য আছে কারো ধরে রাখা যায় সেই প্রান ?  এমনি একটি কবিতা পোস্ট দিয়ে আমি সেদিন একটা প্রবল উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রানপ্রিয় কবিগনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে রওয়ানা করি কোলকাতার উদ্দেশ্যে । তবে বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক এবং সুখকর ছিল না । পাসপোর্টটি নবায়ন না থাকার জন্যে । জরুরী ভিত্তিতে তা করতে দিয়ে পেলাম ২৭ মার্চ বুধবার দিনে এবং বৃহস্পতিবার তা ভারতীয় ভিসার জন্য জমা দিয়ে সেটা পেলাম পরের বৃহস্পতিবার ৪ এপ্রিলে । অবশেষে যাওয়ার বন্দোবস্ত হল কোনভাবে, যা সব কিছু মিলেই ছিল প্রতিকুলে ।  যানজটে পড়ে রাতভর গাড়ী ছিল আরিচা ( পদ্মা নদীর ) ঘাটে অথচ যেখানে ভোরেই পৌঁছানোর কথা বেনাপোল হরিদাসপুর বর্ডারে । আমার আবার প্রতিটি আসরের জন্য নতুন কবিতা লিখার একটা প্রবণতা আছে কিন্তু কোলকাতার আসরের জন্য কোন কবিতাই লিখতে পারিনি সেখানে যাওয়ার ব্যতিব্যস্ততা, চঞ্চলতা আর উত্তেজনার কারণে । তবে এই যানজটটা যেন শাপে বর হয়ে সে সুযোগটা ঘটিয়ে দিল । লিখে ফেললাম “ জাগো বাংলা জাগো” কবিতাটি । এবং সেই আসরে সম্ভবত আমাকে দিয়েই শুরু হয় কবিতা পাঠ এই কবিতাটির মধ্য দিয়ে ।    


যাহোক শ্যামলী বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য সুধা পান করতে করতে ভ্রমন করি বলে পথের ক্লান্তি আমার কোন কালেই থাকেনা । প্রায় ১৮ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে কলকাতার মুকুন্দুপুরের সমাধান গেস্ট হাউজে ঢোকার প্রাক্কালে কাল বৈশাখী দিয়ে যেন বরণ হল ।
পরদিন সকাল বেলা এল সেই মাহেন্দ্রক্ষন । কোলকাতা যাদবপুরের সূর্য সেন হলে মোটামুটি এসেছেন প্রিয় সব কবিগন । তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা মমতা ভালোবাসা সবই পেলাম । যেন তাদের হৃদয়ে মুহূর্তে দ্রবীভূত হয়ে গেলাম । জেনে বিস্মিত হলাম প্রিয়কবি তমাল ব্যনার্জি মহাশয় এলেন বুকে হার্টের ব্যথা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছি শুধু নাকি তাদের সাথে দেখা করতে । প্রিয়কবি কবি মৌটুসী মিত্র গুহ ( কেতকী ) এসেছেন আমেরিকা থেকে প্রিয়কবি পরিতোষ ভৌমিক ( অমায়িক কবি ) প্রায় ৪০ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ত্রিপুরা থেকে । প্রানের দাদা সঞ্জয় কর্মকার এসেছেন শিলিগুড়ি থেকে । অর্থাৎ প্রায় সব কবিগন বিশাল ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন এক বুক ভালোবাসা নিয়ে । সময় অর্থ দণ্ড পথের ক্লান্তি ব্যস্ততা বিসর্জন দিয়ে । কিন্তু সবার চোখে মুখে উৎসবের দ্যুত্যিই যেন যথাযথভাবেই ঠিকরাচ্ছিল ।  সেই কি হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ তা আমার ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য ব্যপার । যদিও আমি কবি চাঁছাছোলা তবে আমার হৃদয় তো খোলামেলা । তাই কারো সাথে মুহূর্তে মিশে যেতে আমার হয়না কোন ঝামেলা ।


হল তাই বিশ্বাস ছিল যা । মনে হয় পরম আত্মীয়দের বাড়িতেই এসেছি । যে কারণে সেদিন খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই সেথা কাটিয়েছি । তাছাড়া সৌমেনদারা যে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টেও সিদ্ধহস্ত তা আমি একেবারে মুগ্ধ মনে প্রত্যক্ষ করেছি আরও প্রত্যক্ষ করেছি তারা পরস্পর কতটা যে আন্তরিক যেন সত্যিকার একটা পরিবার । প্রতিটি বিষয়ে কত যত্ন মমতা আর হৃদ্যতার ছোঁয়া ! তা আসলে বিশেষ নজর ছাড়া মাপা মুশকিল । মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন পর ধনে ধান্যে পুষ্প ভরা সঙ্গীতটি পরিবেশন করে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল সাহেবের সভাপতিত্বে । কবিতা পাঠ ও আলোচনা শুরুর প্রারম্ভে কবি পলক রহমান সাহের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও পরিবেশন করি উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে। অতপর পর্যায়ক্রমে সব কবিগনকে উত্তরীয় পড়িয়ে ফুল ও মেমেন্টো দিয়ে বরণ করে নেন । তার আগে সব উপস্থিতিগণকে ব্যাজ পড়িয়ে দেন । বাড়তি একটা আমেজ এনে দিল প্রিয়কবি রিনা বিশ্বাস হাসিদির হাতে বানানো খুবই চমৎকার হাণ্ডিক্র্যাফট কাগজে ফুলের তোরার স্যুভিনিয়র যা একটা চির স্মরণীয় বিষয় হয়ে রবে। অনুষ্ঠানটি দারুণ পরিপাটি ও মনোজ্ঞ ছিল। ছিল খানপিনারও বাহুল্য । কিন্তু একটি বিষয় আমাকে একটু পীড়া দিচ্ছিল তা হল এবার আসরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী কবি সম্মেলন । অথচ এপার বাংলা থেকে আমরা কবি গিয়েছি হাতে গনা ৫ জন । এই ধারা অব্যাহত রাখলে আশা করি অচিরেই আমরা সমানে সমান ভাবে মিলিত হব সামনের দিনগুলিতে । তাই আমরা সবাই যারা লিখছি তারা যেন একাত্ম হয়ে লেখনীর মাধ্যমে আমাদের দুই বাংলার বিরাজমান সামাজিক সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো জোরালো ভাবে তুলে ধরি । কারণ বর্তমান সময়টি যাচ্ছে চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে । মানুষ আর কিছুতেই যেন কোন কিছুর উপর আস্থা রাখতে পারছেনা । তাই আমাদের এই কর্মকাণ্ড নিছক বিনোদন মূলক না হয়ে; হয়ে উঠুক সমাজ সংস্কারের অন্যতম এক মাধ্যম ।  যেহেতু নতুন কোন অবতার বা নবী আসবেনা আর সেহেতু কবিরাই তুলে নিক সার্থক সমাজ গড়ার দায়ভার ।


এই অনুষ্ঠানের আয়োজক অংশগ্রহণকারী এবং শুভানুধ্যায়ী সকলকে আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা এবং প্রাণঢালা অভিনন্দন জানালাম । এমন আয়োজন আরও বেশী বেশী হোক সমাজ সুশীল হোক সবার সুকুমার বৃত্তি গুলো ছড়িয়ে পড়ুক দশদিগন্তে এ প্রত্যাশাই রাখলাম ।  


স্মর্তব্য- লেখাতে কোন ভুলত্রুটি বা উপেক্ষার কোন বিষয় থাকলে তা আমার স্বল্প জ্ঞানেরই বহিঃপ্রকাশ বিনা কিছু নয় । তাই ত্রুটি মার্জনীয় কিংবা সংশোধন করে দিতে সবার প্রতি আমার আজ্ঞা হয় । অনেক অনেক ধন্যবাদ দীর্ঘ সময় ব্যয়ে পাঠের জন্য ।    
রচনাকালঃ- বেলা ১১.১৫টা সোমবার ২ বৈশাখ ১৪২৬, ৮ শাবান ১৪৪০, ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ঢাকা, মিরপুর ।