চারুলতার চিঠি পেলাম আজ_
লিখেছে সে অনেক বেদনার কথা,
লিখেছে সে ক্রোধ আর মায়ার সংমিশ্রণের কথা।
চিঠিটি এই রকম__


প্রিয় কবি দা,
ভাল আছ নিশ্চয়ই?
শুনেছি তুমি শহরে এখন মস্ত টাকা কামাও
জীবনটাকেও গুছিয়ে নিয়েছ তুমি।
সংসারও হয়েছে বুঝি?
না হলেও হতেই বা কত বাঁকি...
বড় হও তুমি, মস্ত বড়
বিশাল ওই আকাশটাকেও ছাড়িয়ে যাও।
কিন্তু তুমি বোধ হয়, ভুলে গেছ কিছু কথা...
ক্লান্ত কিছু বেদনার জল, শান্ত নীরবতা।
সেই যে তুমি দুর্যোগে গ্রাম ছেড়ে গেলে...
ফিরে তো এলে না আর!!
কতবার বাবা খুঁজেছে তোমায়,
পায়নি দেখা তোমার।
বহুদিন কেটে গেছে এভাবেই
তোমার অপেক্ষায় বুক বেঁধে ছিলাম আমি,
অনেকগুলো বছর।


তারপর হঠাৎ,
একদিনে গাঁয়ের মজলিশে কথা উঠল;
যুবতি মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখার,
গাঁয়ের জন্য নাকি তা বড্ড লজ্জার ব্যাপার;
তাই ব্যাবস্থা হল আমার বিয়ে দেবার।
দু’দিনের মাথায় বিয়ে হল আমার।
আহামরি কেউ নয় সে ছেলে
অতি সাধারণ খেটে খাওয়া এক জেলে।
দু’সপ্তাহ পর মারা গেল সে, নৌকাডুবিতে।
শ্বশুরালয় থেকে বিতারিত হলাম আমি,
অলক্ষ্মী আর অপয়া নামেই হলাম বদনামী।


তারপর কাটলো ১২টি বছর বাপের বাড়ীতে,
বিধবা নামের অভিশাপখানা মাথার ওপর নিয়েই।
এখন আমি কেমন আছি, তাই ভাবছ বুঝি?
এখন আমি ভাবিনা আর, অনেক ভেবেছি।
কোন এক মরনব্যাধী হয়েছে আমার,
সম্ভাবনা খুবই কম, বেঁচে থাকার।
বুকের ব্যাথাটা বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন।


আচ্ছা,
তুমি এখন মস্ত মানুষ;
তাই বলে কি শেষ দেখা দেখবে না আমায়?
দেখবে না? কি করে তোমার চারু
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে যায়?
আসবে তুমি... দেখবে তুমি...
এই আশাতেই তো চিঠিটা লেখা;
বহুদিন পর আবার আমি পাবো তোমার দেখা।


হৃদয়ে স্থান?
সে না হয় নাইবা পেলাম,
তোমার লেখাতেই নাহয় একটু স্থান দিও!!
তোমার চারু আজও তোমাকেই ভাবে,
এটুকুই জেনে নিও।


ইতি,
মৃত্যুপথযাত্রী চারুলতা