ঝিমঝিম রিমঝিম ঝমাঝম ,
রাতভর বৃষ্টি হরদম ,
থামে না যে বর্ষণ একদম ।
জানালার নীচে ছোট নদীটা দুরন্ত ,
ভরা যৌবন নিয়ে ছুটন্ত ।
রাতভর রূপালী বৃষ্টি ঝাঁক ঝাঁক ,
চপলা লাস্যময়ী  নদীর দেহে  বিচিত্র সব  বাঁক ।
আমি  সারারাত জেগে দেখি -
বিরামহীন  বর্ষা আর ভরন্ত  নদীর  পরকীয়া বেবাক ।
ছুটন্ত নদী বয়ে নিয়ে চলে -
মেঘের বুক -নিংড়ানো উদ্দাম জলরাশি ,
এক অজানা প্রাণের টানে ;
উন্মুক্ত সাগরে বিসর্জনের আহ্বানে ।


আমি অবাক হয়ে দেখি আর ভাবি ,
সাগরের বাষ্পায়ন , আকাশগর্ভে মেঘের জন্ম -
আর মেঘের শরীর নিংড়ে বারিধারা বর্ষণ ।
জলধারার এই পুনর্জন্ম  চলেছে  বারংবার ,
চক্রাকারে  হাজার কোটি বছর ধরে ,
আমাদের পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে ।
বর্ষণসিক্ত রাতে , এই দুকুল ছাপানো জলরাশির বুকে -
আমি ডুব দিয়ে খুঁজি সেই জলকণাগুলি ;
যারা জন্মেছিল সৃষ্টির আদিম বিস্ফোরণে ,
যেগুলি সিক্ত করেছিল আদম ও ইভকে -
মানবজাতির জন্মের শুভলগ্নে ।
খুঁজে ফিরি সেই জলবিন্দুগুলি , যারা   -
সাফ করেছিল  দুই বিশ্বযুদ্ধে রক্তাক্ত পৃথিবীকে  ,
যারা ছোঁয়া পেয়েছিল -
শহীদ ক্ষুদিরাম , ভগত সিং আর নেতাজীর ।


রাতভর বৃষ্টিতে ভিজি আর ভাবি ,
জলেরও কি স্মৃতি আছে ?
যখন ভিজি আমি  অঝোর বর্ষণে ,
আমাকে  সিক্ত  করে ইতিহাসের গন্ধমাখা -  
স্মৃতিসিক্ত  জলধারা টাপুর-টুপুর করে ।
তোমার কাজলা  চোখের পলক ভেজানো বৃষ্টিবিন্দুতে ,
হয়তো ছুঁয়ে আছে কবিগুরু অথবা জীবনানন্দর পরশ !
                                                               - অকবি-
( ' বর্ষার আয়োজন ' )