নুড়ো কুঠোর মিল ঝিলিয়ে হাসমত হাসীর ঘর  
নাড়া কেটে নুড়ো নেড়ে কাটত দিনভর।
খুব নেই অভাব ওদের খুব নেই সুখ
একটুখানি শাক লতায় হাসত সদায় মুখ।  
ঘরে বাইরে ছিল ওদের ছোট একটি মেয়ে
থাকত সদা হেসে খেলে নেয়ে।  
মেয়েটির হল একটুখানি শখ
আলতা লিপস্টিকের করবে শুধু পরখ।
মা হাসী বলল তারে, ‘মারে, শোন, নুরী
যত পারছ কাজ কম্ম যা করি।
শিখতে হবে তোর অনেক কম্ম
কম্মই হইল গিয়া মাইয়া গো বড় ধম্ম।
শোন মা, মাইয়া গো করতে নাই এতো শখ
তাইলে পরে, কপালে আইয়া পড়ে অনেক দুঃখ।  
রান্না বান্না শিখে হলি পরে গুনি কন্যি
তোরে নিয়ে কইরবে সবে ধন্যি ধন্যি।  
আমি আর কদ্দিন
আমার কথা না শুনলে পরে ঝুটব না কপালে সুদিন।
মায়ের কথার মাথা মণ্ডূ কিছুই বুঝত না ছোট্ট নুরী
থাকত চেয়ে শুধু মায়ের পান জুড়ী।    
কথাগুলি বলতে বলতে হঠাৎ একদিন মা হইলেন গত
বাবা হাসমত তারপর করল বিয়া তার নিজ মত।
উঠতে বসতে সৎ মা দিয়া জাড়িজুড়ি
বলত কথায় কথায়, ‘অকর্মার ঢেঁকি একটা ছুড়ি।
কোন আটা কোন ময়দা মাখিতে থাকিস এতো ব্যস্ত?
এত কম্ম অ, করইবে, তোমার কোন দোস্ত?
সকাল বিকাল অটো চালিত সৎ মা নামক ক্যাসেট খান
নুরীর কানের কাছে করত ফ্যান ফ্যান।  
ছোট্ট প্রানে ছোট্ট মত
ছোট্টই অতি তার জগত
বুঝতনা সে অতশত
কার কখন চলে কী মত
অল্পতেই মিটত চাওয়া
অল্পতেই পাওয়া।
যদিও বাপের দ্বারা হইত না তা দেওয়া
সৎ মায়ের অসৎ বুদ্ধি আর কান পড়ার খেয়ে মেওয়া।
সৎ মায়ের অনেক মার অনেক বকা নিত্য খেত নুরী
হাসমত বাবা হাবা হয়েও দেখত না ঘুরিফিরি
বাবা হয়ে হাসমতের মেয়ে জন্মানোই ছিল শুধু সার
তাছাড়া অন্য ভাবনা ছিলনা যে তার।
সৎ পাত্রে কন্যারে করতে হবে দান
বুঝত না হাসমতের হাবা গোবা মন।  
স্কুল আপা এসে একদিন বলল হাসমতকে
‘বিনা মুল্যে পড়তে দেন আপনার মেয়েকে।
পড়াশুনা করতে কোন টাকা লাগবে না
বই খাতা কেনা লাগব না সবই পাবে ফ্রী ফ্রী’
হাবা হয়ে হাসমত ব্যাটা থাকল তাকিয়ে
মাইয়া গো কিয়ের এতো শখ? বলল সৎ মা মাথা ঝাঁকিয়ে
দৌড়ে গিয়ে নুরী স্কুল আপাকে বলল,
‘আপা খরচা পাতি না লাগলে আমি পড়ুম
কিন্তু কাম না করলে তো মায় আমারে খাইতে দিব না
তয় স্কুলে যামু কেমায়?’
নুরীর মাথায় হাত দিয়ে আদরের পরশে স্কুল আপা বলল,
‘বেশী অসুবিধা হইলে চল আমার লগে’ দেখি কি করা যায়
হাবা হয়ে হাসমত ব্যাটা আবারও থাকল তাকিয়ে
সৎ মা দেখল বারেক চোখ পাকিয়ে।
যেতে যেতে নুরী বলল স্কুল আপাকে,
‘আপা মাইয়া গো শখ থাইকব না ক্যান?
আমি পড়ুম, অনেক কিছু পড়ুম,  
খুকী, মনি, রেনু, বেনু, আনু খেন্তীরেও ডাইকা আনুম?
অগোও পড়নের খুব শখ
মিনু বলত পড়লে নাকি অনেক বড় হওন যায়?
খাওনের অভাবে অর বাপজান অরে বিয়া দিছে ফজু মেম্বারের লগে
নইলে মিনু ও পড়ত আমাগো লগে’
বাপে আমারে বিয়া দিত,
সৎ মায় কইল, বিয়া দিলে কাম করব কে?  
কন আপা সৎ মায় আমার ভালা করছে না?
একা একা বক বক করতে থাকল নুরী
কিছুই বলল না স্কুল আপা
আরেক দিকে তাকিয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুছল।