(কবিতাটি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত কথ্য ভাষায় রচিত । একজন আদিবাসী বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যেটুকু জানেন তা তার স্কুলে পড়া নাতনির কাছে শোনা । তবে তার ধারনা নেই রবীন্দ্রনাথ জীবিত না মৃত । অপ্রচলিত কিছু শব্দের অর্থ কবিতার শেষে দেওয়া হ'ল )


হেঁই রবি ঠাকুর !


আসচে বোশ্যাখে তুকে হামদের গেরামে আসত্যেই হবেক
হামার লাতনি পানমণি বলথ্য তুই বহুৎ ভাল মানুষ বটে
কবিতা লিখিস, গান লিখিস, কত ভাল ভাল কুথা লিখিস
তবে লিখিস নাই কেনে দু'কলম হামদের সুখদুখের গাঁথা ?


ই বোশ্যাখে ছাড়ছি নাই, তুকে আসত্যেই হবেক বুরুংডি
পানমণি বলথ্য ঠাকুর আল্যে বকুলফুলের মালা পরাবেক
শীতলপাটিয়ে বঁসাই মহুল্যাফুলের মাতাল রস খাওয়াবেক
লালপেঁড়্যা শাড়ী পরে তঁর গানে লাচবেক, তঁর গান গাইবেক ।


হেঁই রবি ঠাকুর !


মটরে আল্যে হুঁই লুহারদাগার ফটকগড়্যার কাছে নামবি
হঁথাল্যে দু'কোশ অ্যাল বরাবর হাঁটলেই পাবি হামদের গাঁ'ট
ধুপসীপড়া রোদে বিদকাফুটা জমিন,ভুখা-রুখা আমসি শুখা
মানুষগুল্যানকে দেখল্যে ঠিকেই বুঝে লিবি ইটোই বটে বুরুংডি ।


গটা গাঁয়ে একটো টিউকল, টুকু জলের লাগ্যে রোজেই কলকচর
ধরনের আগেই পখুর, ডভা, হাপা, কুঁয়াগুল্যান শুখাঁই খটখট্যা
একটো ইস্কুল আছে'ত মাষ্টর নাই, রগে মল্লেও ডাক্টর বদ্যি নাই
লকে বলে ডাহিন-ভুত আছে, তবে ঝাড়ফুঁকের গুনীনও আছে ।


হেঁই রবি ঠাকুর !


পানমণি'ট বলথ্য তুঁহেই ন'কি বল্যেছিলি তুই হামদেরই লক
কথাটো বড় মনে লিলেক, যেমন বাসি ভাতে নুন-নঙ্কার পারা
তুই গটা জগতের খাট্যে খাওয়া লকের দুখের কুথা লিখেছিস
কিন্তুক হামদের ভুখা পেটের ডুগডুগি বাজনাটোই শুনলি নাই ?


তুই হামদের লাগ্যে লিখিস আর নাই লিখিস তবুও তুকে আনব্য
বিন-চিকিচ্ছায় বছরভর খুঁকখুঁক্যা খাঁশি, ঘুঁষঘুঁষা জ্বরে ভুগ্যে ভুগ্যে
হামার আদরের লাতনিটো, হামার পানমণিটো যে থিঁরায় গেছে
তুকে মালা পরাত্যে, মহুল্যা রস খাওয়াত্যে যদি উ ফিরে আসে !


- - ০ - -


শব্দার্থ


হঁথাল্যে (সেখান থেকে); ধুপসীপড়া রোদে (প্রখর রৌদ্রে); বিদকাফুটা জমিন (ফেটে চৌচির জমি); ভুখা-রুখা আমসি শুখা (অভুক্ত-রুক্ষ-আমসির মতো শুকনো); কলকচর (ঝগড়াঝাটি); ধরন (গ্রীস্ম); পখুর, ডভা, হাপা (পুকুর-ডোবা-মাছ চাষের ভেড়ি); বাসি ভাতে নুন-নঙ্কার পারা (পান্তা ভাতে নুন লঙ্কার মতো); থিঁরায় গেছে (স্থির হয়ে গেছে অর্থাৎ মারা গেছে)