লাখো মানুষের ভীড়েও আপনাকে চিনা যাইত আইজ্ঞা ।
মাথায় ধবধইপা সাদা চুল, পরনে সাদা ধুতি পাঞ্জাবী
সবল্যে বড় আপনার ধবধইপা সাদা দিলদরিয়া মন -
এমন মানুষকে কি কেউ পাসুইরে যাইতে পারে আইজ্ঞা ?


হামি আইজ্ঞা কুলতলির দিনমজুইরা সনাতন মাঝি
পহলা মুলাকাতেই মাষ্টরবাবুকে দমে ভাল লাইগেছিল ।
উনার ছুট ছুট কথাগুল্যানে আগুনের ফুলকি উইড়ত,
হামদের ডরফুক দিলটোতে তাগদ ভইরে দিত –
তিন টেকায় কেউ কাজ করবেক নাই,
বেগার খাইটে, শাগে ভাতে দিন চইলবেক নাই ।
কাজ কইরলে রোজের হাজরী দু’কুড়ি টেকা খুরাকী চাই,
সঙে চাই মুড়ি-চা, তেল-তামুক ।
হকের পাওনা কড়ায় গন্ডায় বুইঝে লিতে হবেক,
মালিকের চইখ রাঙানিতে ইঁদুর গাঢ়ায় সামনোর
দিন খতম, ইবার শির উঁচায়ে বাঁইচতে হবেক ।


বাপের কিরা, আপনার কথাগুল্যান বড় মনে লিয়েছিল
যেমন পান্তা ভাতে নুন লঙ্কার চাখা ।
ডরে সুঁইটকে যাওয়া সনাতন মাঝিকে শির উঁচায়ে
লইড়তে শিখাঞ্ছিলি, খেত খামারে ডিংরি টিলায়
লড়াই লড়াই লড়াই চাই লড়াই করেই বাঁইচতে চাই ।


বোশ্যাখের ধুরুপ রোদেই হোক বা মাঘের কনকইনা
জাইড়ে – গরীব ভুখাদের কান্নায় মাষ্টার বাবু
বিরুলের পারা দৈড়ে বেড়াতেন ই গাঁ থাইকে উ গাঁ
ই পাড়া থাইকে উ পাড়া, পৌঁছাই দিতেন লড়াইয়ের ডাক ।
ই মাটি সবার; ই আকাশ সবার, কারু বাপুত্যা লয় ।
সবার লাগে সব কিছু সমান না হওয়া তক
লড়াই চইলবেক – মাষ্টরবাবুর কথাগুল্যান হামদের
হাড় পাঁজরায় বিঁধে যাইত, দিমাগে আগুন ছুইটত ।


মাষ্টরবাবু, তুই চইলে গেলেও ই আগুন নিভবেক নাই
ঘুইটঘুইটা আন্ধার ফাটাই সুজ্জি একদিন উইঠবেক
সমাজের এবড়্যা খেবড়্যা ডাং ডহর কাইটে
হামরাই একদিন সমান করে দিব খেত খামার
জাইত ধরমের আইলগুলানও আর নাই রইবেক ।
ঝকঝইকা সানকিতে শিউলির পারা গরম ভাত
টুকু মাথা গুঁজার ঠাঁই আর জাইড়ের মটা কম্বলেই
মুদের সমাজতন্তরের ঢাক গুড়গুড় কইরে বাইজবেক ।