(বাংলায় নবজাগরণের অন্যতম যুগপুরুষ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্মরণে)


বেড়ে বলেছিস বাপ ! বড় সোন্দর তুর কথাগুল্যান,
লকটা লদী লয়, হাপা-ডভা লয়, এক্কেইবারে সাগর ।
বিদ্যার রোশনাইয়ে জগতটোকে ঝলকাঁই দিলে হে !
হামরা বিদ্যাকানা হয়ে ই-আলর মম্ম কি বুঝব্য ।
হুঁই চাদর উঢ়া বামুন ঠাকুরটার পেটে এত বিদ্যা ?
হবেক নাই কেনে, বলে ন কষ্ট কল্লে কিষ্ট মিলে,
রাস্তার লম্ফর আলয় পঢ়েই যদি এত শিখে থাকে
হামদের মড়লের বাখ্যুলে জম্মালে কি নাই করথ্য ।
রাসু মড়লের ছুটকা বেটা শিবাটোকে দেখেছিস ন ?
টিপা ফোন কানে লাগাই দিনরাত ভটভটি উঢ়াছে
বাইস্কোপের ছবি দেখাই ছেল্যাগুলার বারটা বাজাছে ।
হ্যাঁরে, এত বিদ্বান হয়েও নসীবে মাষ্টারিটাই জুটল্য ?
গরমেন্টের আপিসে নকরি করল্যে উপরিটা’ত পাথ্য ।
হেঁই বাপ, গাঁয়ের ছেল্যা শহুরে যাঁয়ে পৈসা কামাবি,
দু’কাঠা জমিন কিনে সিমিটের ঘর বনাবি, তা’লয় !
আর লককে এত দয়া ধম্ম করার কি আছে বাপ,
যার উবগার করবি সেই ত আছুল্যা বাঁশ দিবেক,
পৈসার মম্ম বুঝে নাই বলেই জীবনভর দুখ পাল্য
তবে বাপ, বুঢ়ান্তিকালেও মায়ের লাগ্যে টানটো ভাল ।
হামদের মাদ্যোলার আবার টুকুও মায়ের টান নাই,
মনটো কেমন উড়ুউড়ু, টুকু ফাঁক পাল্যেই ফুড়ুৎ
আবগারি আপিসে আর্দালির কাজটা পাঁয়েও ছাড়ল্য
বলে ছুটু নকরি করবেক নাই, ব্যাঙ্কের বাবু হবেক ।
হেঁই বাপ, গতরের কাজের আবার ছুটু-বড় কি ?
শুনেল্যে, অত বড় বিদ্বান লকটা লকের মট বঁহেছে
তাতে উনার কি জ্যাত গেছল্য ন কুলি হয় গেছল্য ?
বাপের কিরা, বাঁচে থাকল্যে উনাকে পরধান বনাথি,
একটো সাচ্চা লকের ছুঁয়ায় যদি বাকিগুল্যা বদলায় !
সাগরে’ত হাজার লদীর, নালী-নর্দমার জল মিশছ্যে
তাতে সাগরের ক্ষেতি নাই বরং নালী-নর্দমারই লাভ ।


• পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে প্রচলিত গ্রাম্য কথ্য ভাষায় রচিত


শব্দার্থ


সোন্দর (সুন্দর); হাপা-ডভা (ছোটছোট জলাশয়); ঝলকাঁই (উদ্ভাষিত); বিদ্যাকানা (নিরক্ষর); মম্ম (মর্ম); উঢ়া (গায়ে নেওয়া); লম্ফর (কেরোসিন বাতির); বাখ্যুলে (গৃহস্থে); টিপা ফোন (মোবাইল ফোন); ভটভটি (মোটর সাইকেল); উবগার (উপকার); পরধান (প্রধান); বনাথি (বানাতাম); ক্ষেতি (ক্ষতি)