পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্রই দেখা যায় পূজোর অন্তত একটা দিন দুর দুরান্ত থেকে গ্রামের লোকেরা পরিবার পরিজন সহ শহরে ঠাকুর দেখতে আসেন । ওঁরা সাধারণত দুপুর থেকেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত । রাত্রে ষ্টেশন বা বাসষ্ট্যোন্ডে শুয়ে পরদিন সক্কালেই বাড়ী ফিরে যান । গরীব নিরক্ষর এক গ্রামবাসীর নিজের ভাষায় শোনা যাক অষ্টমীর সন্ধ্যের অভিজ্ঞতা ।



তুদের দুগ্গা পূজাটা দমে ডাগর পরব বটে হে !
হামদের মকর পরবেরল্লেও …….
এতনা বড় বড় প্যান্ডেল, দুগ্গার মেড় …….
কথায় লাগে হামদের কাগজ্যা চৌডল !
চাদ্দিক আলয় আলয় ফরফরাছে
লকের মাথায় মাথায় গিজগিজাছে
লাচায়-গানায় হামদের মনটোও হুদক্যে উঠছে ।


ইদিকে হামার লাতনি আদরীটা কাঁদে কাট্যে একশা,
জুয়ান ছুঁড়ি ভিড়ে সামাঁই যাঁয়ে ফাঁসে গেছল্য
হামার বুড়িটো বলছিল্য কন লিপীতা ছকরা নকি
উঁয়ার শরীলে হাত চালাঞ্ছে, বুকে নুচে দিছে ।
হামরা গাঁ-গেরামের সিধা-সাপটা লক
কন লঁদফঁদ জানি নাই বাপ ।
তুদের শহুরা ছঁড়াগুল্যার কি মা-বহিন নাই ?
নিখা-পড়া জানা ষাঁড় হওয়ারল্যে
হামদের আনপঢ় বাউন্ডুল্যা ছঁড়াগুল্যানই ভাল,
কমসে কম মায়ের জাতটোকে ইজ্জতটো দিতে জানে ।


কন কাগ ডাকা ভুরে ঘরল্যে বাহিরাঞ্ছি
বিন পৈসার টেরেনে তুদের শহুরে
মুড়ি বাঁধে আন্যেছিলি, ভাবরা কিনে খালি ।
হামার লাতিটো মিঠাই খাবেক বল্যে কাঁদছিল
দিলি একটো কিনে, কড়কড়্যা পাঁচ টাকা দিয়ে ।
মহাজনের কাছে পাঁচ কুড়ি টাকা মাগ্যে লিয়েছিলি
আঘ্যন মাসে ধান কাট্যে শুধত্যে হবেক
পাঁচকুড়ি টাকার লাগ্যে উ পাঁচদিন খাটাই লিবেক
হাড় কিপটা, গুড় খাল্যে পিঁপড়াকেও ছাড়ে নাই ।
রাত্যে ক’টা ঠাকুর দেখে ইষ্টিশনে ঘুমাব্য
ভোরেই একটো প্যাসিঞ্জার আছে, সিধা ঘর ।


তা হ্যাঁরে বাপ, তুই কন প্যাপারে লিখিস বললি,
লেখ’ন একটো চিঠি মা দুগ্গাকে সগ্গের ঠিকানায়
লিখবি উ চাঁদির একটো অসুরকে মারে কি হবেক ?
এখন’ত ন'কি রজেই শয়ে শয়ে অসুর পৈদা হছে
হামদেরকে শুষতে গেলে লেতাদের অসুর পুষত্যে হয়
মা’কে তিরশুল ছাড়্যে একটো মশিন বন্দুক আনতে হবেক
হুঁই মাওবাদীদের পারা গিড়গিড়াই গুলি চালায়ে
নিব্বংশ করত্যে হবেক অসুরগুল্যানকে ।
বহুৎ দেখলি, হামদের গরিবী ঘুঁচান দুগ্গার কম্ম লয় হে
কমসে কম লিজের জ্যাতটোকে ত বাঁচাই দেখাক !


কিছু আঞ্চলিক শব্দেষ অর্থ
ডাগর (বড়); পরবেরল্লেও (উৎসবের থেকেও); মেড় (একচালা প্রতিমা); চৌডল (কাগজের তৈরী টুসুর মন্দির যা মকর সংক্রান্তিতে জলে ভাসানো হয়); ফরফরাছে (উজ্জ্বল হয়ে গেছে); গিজগিজাছে (ভীড়ে গিজগিজ করছে); হুদক্যে (চঞ্চল হওয়া); সামাঁই (ভিতরে প্রবেশ করা); লিপীতা (দুশ্চরিত্র যুবক); চালাঞ্ছে (চালিয়েছে); নুচে (খামচানো); লঁদফঁদ (ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট); হওয়ারল্যে (হওয়ার থেকে); ভুরে (ভোরে); টেরেনে (ট্রেনে); ভাবরা (জিলিপি আকৃতির বেসনের তেলেভাজা); কিপটা (কৃপণ); তিরশুল (ত্রিশুল); পারা (মতো)