১.
কাঁচা হলুদ চিনেন?
ছোটোবেলায় খেলনা-বাড়িতে রান্না করতাম—
কাঁচা হলুদ ভেঙে!
আমার খুব হাতে নিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে!
যেরকম আস্ত কাঁচা হলুদ-ভাঙা-মুখে
আঙ্গুল বুলালে রং লেগে যায়—হাতের তালুতেও!...
আমারও মন বলে ওঠে—ওই বাহুতে
হাত ডললেই বুঝি রং উঠে আসবে—আমার হাতে।
কন্ঠের সুর, কথা বলার সময় টান টান মুখের চামড়া,
মাপা হাসি, কেঁপে কেঁপে উঠা কানের দুলগুলো দেখলেও
বড্ড হিংসে হয় আমার;
রাণী, তোমাকে পরাবো আমি চালতার ফুল—
কানের কাছের চুলগুলোয় গুজে দেবো,
আমার ছেলে-মানুষি খেয়ালে সাঁজাবো তোমায়!
উহু! তোমায় এতজনে কেন চায়?
তোমাকে গোপন করে ফেলবো আমি!
অতগুলো চোখ তোমাকে গিললে
সহ্য হয়না আমার; কানের ভেতর যে স্বাদ তুমি;
মহুয়ার বনে শন্শন্ শোনাবো তোমায়!
নজরুলের গান খুঁজেছিল যে পিয়ারে,
আমি লালন করেছি যে ফেরদৌসী মুখ—
বুকের ভেতরে, সেই রাণী তুমি;
আপনিই “তুমি” আমার, শতবার জন্মাবার খায়েশ!
খোদারে বলেছি:
“রাণী’র জন্য আমি আরও যৌবণ চাই”!


২.
আপনি যখন কথা বলতে থাকেন;
নতজানু বৃদ্ধ হয়ে আমি—
মাথা মুড়ে বসি হাঁটুতে,
অবশ হয়ে থাকি আমি, যেন অসহায়;
এ মুগ্ধতা-ই এক অসহায়ত্ব;
মুখের কথা কেড়ে নেয়!
তোমার গায়ে আমের মুকুলের ঘ্রাণ;
তুমি তো সদাই নববসন্তের ঘামে ভিজে থাকো!
আমি বেলফুল আনতে যাই,—
ছোট্ট-বাচ্চাটির মত খুঁটে আনি কতক—
বেল ফুলের বুলি; হারিয়ে ফেলি আবার!
বকুলের মালা তোমাকে পরাবো—
সে আমার আর সাধ্য আছে কই!
ইচ্ছে হয় আবারও তোমার জঠরে নিষিক্ত হই!
পাগলামি বেড়ে যায়;
তোমার জননে তো অন্য কারো অধিকার!
আমি শুনি তোমাকে রাণী, দেখি...
আর আমি নিজেকেই করি বারণ!
তোমার মুকুটে যে যৌবণ,
তোমার পোষাকে যে মাতৃঘ্রাণ,
তবু তো তুমি আমার প্রেমিকা নও!
তোমার শরীরের অভিযোজনে—
যে গম্ভীর উত্তাপ; তোমার হাঁটার, শোয়ার
যে দেহরেখায় যে পথহারা নদীর বাঁক—
পাড় ভেঙে একাকার হয়ে যায়,
আমার খুব ইচ্ছে করে খোঁজ নিয়ে দেখতে...
তুমি সুস্থির-আঁট-সাঁট এক মূর্তি,
আমি শোনার প্রয়োজনে কাছে যাই,—
তোমার সকল অঙ্গেই সুর!
গোপনে দেখার কামনায় আড়ালে বসি;
তোমার সবটুকুই মহিয়সী, নিবীড় আতিশয্যে—
তুমি আবার আমায় জন্ম দাও—
হয়তো প্রেমিক রুপে, নাহয় সন্যাসীর কাপড়ে!
আমি তোমার জন্য আরও যৌবণ চাই।।


৩.
আপনি কী ভীষন তরল নিঃশ্বাসের অধিকারিনী,
ফুলে ফুলে ওঠা নাসিকা-রন্ধ্রে
কত অভিজাত ফোঁস ফোঁস ধ্বনি কাটে।
এত ঐশ্বর্য্যেও—তোমাকে আমি আকাশের চাঁদ ভাবতে পারিনা;
দূরে থাকা জিনিস আমার হবে কী করে?
ঠোঁটের কাঁপন দেখে যার—
হাওয়ারা বাদ্যযন্ত্র হয়ে বাঁজে
মন্ত্র ভোলানে চোখের ইশারায় যার,
গলে যায় লৌহদন্ড-বীরের মনও;
যার মুখের প্রতিচ্ছায়ায় মুখোমুখি হলে আগুন—
হয়ে যায় জমাট স্বর্ণ; রানী,
তোমারে পরাবো কী দিয়ে বানানো মুকুট!
আমার সুধু আছে যৌবণ এতটুক!
কত শৌর্য তোমার বুকে লুটিয়ে দিলে তুমি খুশি, বলো!
আমি এই যৌবণে দাস হয়ে সেবা করতে পারলেই,
পরের যৌবনে তোমার সম্রাট হবো;
বলো কী চাও!
তোমার মাঝেই প্রেম, প্রিয়াস্পদ!
আদরিনী মা, তুমি স্বামীর দরদে কত সোহাগিনী!
আমি তোমার জন্য আরও প্রেম চাই!


১১.০২.১৬/আল আমীন
“রাণী ফেরদৌসী”