আমি বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়া এক বৃদ্ধা বলছি,
মাত্র চল্লিশ বছরে যৌবনের সব হারিয়ে,
আজ হলাম এক পথের ভিখারিনী।
অথচ সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে জন্মেছি আমি,
'৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরে।


সারা অঙ্গ আমার সুশোভিত ছিল পত্র-পল্লবে,
ফুল-ফল আর দামী অলংকারে।
ধীরে ধীরে আমি পদার্পন করলাম,
পূর্ণ যৌবনের ভরা মৌসুমে।


আর তখনই আমার টকটকে
নাদুস নুদুস চেহারা দেখে,
প্রতিবেশীরা উন্মুত্ত হয়ে উঠে
সব চিনিয়ে নিতে।


কিছু মীরজাফরের সহায়তায়
ওসব হিংস্র হায়েনা আর,
মানব জন্তুদের হিংস্র থাবায়,
আজ আমি পর্যুদস্ত এক অসহায়।
আমার সহায়-সম্বল সব নিয়ে ওরা আজ,
আমার হৃৎপিন্ড আর কিডনিতে দিচ্ছে হাত।


লাখো শহীদের রক্ত শুকিয়েছে আমার বুকে,
তাই আজো শিহরিত হই-
সবুজের বুকে লালের উত্তাল তরঙ্গ দেখে,
তাদের সেই রক্তের দায় আজ শুধিবে কে?


আমার মাঝে লুকিয়ে আছে কালের নির্মম স্বাক্ষী,
অথচ স্বার্থপরতার বেড়াজালে আজো আবদ্ধ আমি।
জীর্ন-শীর্ন হয়ে অস্তিত্ব হারিয়ে-
আমাকেই করতে হচ্ছে আজ অন্যের গোলামী!
স্বাধীন হয়েও কেন আজ-
আমি পরাধীনতার জালে বন্দী?


ওরে আমি ত্রিশ লক্ষ শহীদের জীবন্ত স্বাক্ষী বলছি,
আমার এ করুন দশা দেখে-
তারা ঢুঁকরে কাঁদছে নিশ্চয়ই।


ওরে ভয় পাসনে, তোরা সবে উঠে আয়-
দুশমনেরা আমাকে টেনে-হেঁচড়ে, ক্ষত-বিক্ষত করে,
নিয়ে যাচ্ছে দুর অজানায়,
কথা বলতে দিচ্ছেনা আমায় কন্ঠরোধ করে।


ওরে তোরা জাগ, আমায় মুক্ত করে দে,
আবারো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আমার কোলে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠেছ সবে,
আমারই সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো কি করে?


আমার বিশ্বাস আমি আবার মুক্ত হবো-
ঐ দূর থেকে একটি মিছিল ধেয়ে আসবে আমার পানে,
হায়েনার মুখ থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে-
আমায় বিজয়মাল্য পরিয়ে।


আমি তবেই হবো শান্ত-
যবে অত্যাচারী ঐ নরপশুদের
আগ্নেয়গিরীর লাভার মতো,
পেট থেকে বের করে দিব।


ওরে ভুলে সব হিংসা-বিদ্বেশ আর ক্লেশ,
গর্জে উঠো সবে আর একবার-
যদি তোমার মাকে মুক্ত করতে চাও আজ।
নয়তো রক্তেভেজা আমার এ শরীরে
তোমাদেরও কোন ঠাঁই মিলবেনা আর।
প্রতিশোধ নিতে উঠে আসবে শহীদেরা,
ঘূর্ণিঝড় আর টর্নেডো হয়ে-
সব নিয়ে যাবে তারা।


তবুও কি তোদের হুঁশ ফিরবেনা?
আমি আবার বলছি, শোনো-
তোরা জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়া।
আমিতো হাত-পা বাঁধা-
পাগলা কুকুর ভর্তি রুমে ছাড়া।


ওরে চক্ষু মেলে উঠে দেখ আজ-
বাংলাদেশ, হ্যাঁ আমি বাংলাদেশ,
তোমায় বলছি বারংবার,
আমাকে তোরা মুক্ত করে ছাড়।
আমার ঘাঁড়ে মস্তবড় ভূত সওয়ার।
মারবে অথচ কাঁদতে পারবো না,
এ কেমন নৃশংস ব্যবহার?


তাইতো মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই আর একবার,
জানান দিতে চাই বিশ্বজুড়ে আবার,
গর্বিত সে দেশ আমি
বাংলাদেশ নাম আমার।


গর্বিত সে সন্তানেরা, আমায় মুক্ত করেছ যারা,
শোভা পাবে তারা বাগানের ফুল
আর আকাশে পাখির ডানায়।
এ কোনো স্বপ্ন নয়, নয় কোনো রুপকথা,
এ যেন নির্মম কঠিন এক বাস্তবতা।