প্রবাসীর আর্তনাদ
আলী আমজাদ আল আজাদ

এখানে আমি মানুষ নই, শুধু একটা নাম,
কফিলের ইশারায় চলে, নেই নিজের দাম।
ঘাম ঝরে আগুন বুকে, মুখে শব্দ নেই,
যন্ত্রের মত চলি আমি, “বাঁচো” — এমন কেউ নেই।

ভোর হয় অজানা দেশে, রোদ পড়ে গায়,
কিন্তু মজুরি? মাস গড়িয়ে, কপাল কাঁদে হায়।
“কাল দিচ্ছি”, “আরেকটু ধৈর্য”, এই মিথ্যে ছায়া,
আর এদিকে ফোনে মা বলে, “পাচ্ছি না খাইয়া।”

বোনের ওষুধ, ছেলের স্কুল, বাবার পড়ে যাওয়া দাঁত,
সব যেন আমায় চেপে ধরে, নিঃশ্বাস হয় পাত।
কিন্তু কাকে বলবো ব্যথা? কার দোরে রাখি মন?
আমার দেশে টাকা মানে, কষ্টের দাম নয়, শুধুই অর্জন।

কফিল চায় বশ্যতা, তার চোখে আমি দাস,
অভিযোগ করলে ডিপোর্ট, বাঁচার নাই কোনো পাশ।
পাসপোর্ট সে আটকে রাখে, ইচ্ছেমত শাসায়,
“নতুন কাজ চাই?” — উত্তরে লাথি, আরেকটা ভয় জমায়।

রাতে বিছানা না পেলে, মেঝেতে পিঠ রাখি,
জানলার ফাঁক দিয়ে দেখি তারা — মায়ের মুখ আঁকি।
নাক ডাকে পাশের রুমে, কেউ কাঁদে চাপা গলায়,
এই কান্নার কি কোনো ভাষা? কে বোঝে বুকের খালায়?

বাড়ি থেকে ফোন আসে, “আর কত দেরি ভাই?”
তাদের চোখে আমি যেন টাকার এক গাছ পাই।
কারো মাথায় আসে না, কত অভিমানে ভরি,
নিজের চোখে চোখ রাখি না, আয়নার দোষ ধরি।

হে আমার প্রভু, তুমি জানো সব, তুমি দেখো সব,
এই পাষাণ বুক ফুঁড়ে তুমি বর্ষাও দয়ার রসদ।
জানি, দুনিয়ার বিচার নেই, ন্যায় বড্ড কম,
তোমার কাছেই বিচার চাই — এই দুঃখের দাম।