মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি;
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি ।
জেগেই দেখি কৈশোর আমাকে ঘিরে ধরেছে ।
যেন বালিশে মাথা রাখতে চায় না এ বালক,
যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে মশারি,
মাতৃস্তনের পাশে দু'চোখ কচলে উঠে দাঁড়াবে এখুনি;
বাইরে তার ঘোড়া অস্থির, বাতাসে কেশর কাঁপছে।
আর সময়ের গতির ওপর লাফিয়ে উঠেছে সে।


না, এখনও সে শিশু । মা তাকে ছেলে ভোলানো ছড়া শোনায় ।
বলে, বালিশে মাথা রাখো তো বেটা । শোনো
বখতিয়ারের ঘোড়া আসছে ।
আসছে আমাদের সতেরো সোয়ারি ।
হাতে নাঙ্গা তলোয়ার ।


মায়ের ছড়াগানে কৌতূহলী কানপাতে বালিশে
নিজের দিলের শব্দ বালিশের সিনার ভিতর।
সে ভাবে সে শুনতে পাচ্ছে ঘোড়দৌড় । বলে, কে মা বখতিয়ার ?
আমি বখতিয়ারের ঘোড়া দেখবো ।


মা পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে হাসেন,
আল্লার সেপাই তিনি দুঃখীদের রাজা ।
যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,
আর মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই আসেন তিনি । খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি ।
দ্যাখো দ্যাখো জালিম পালায় খিড়কি দিয়ে
দ্যাখো, দ্যাখো ।
মায়ের কেচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়ে বালক
তুলোর ভেতর অশ্বখুরের শব্দে স্বপ্ন তার
নিশেন ওড়ায়।


কোথায় সে বালক ?


আজ আবার হৃদয়ে কেবল যুদ্ধের দামামা
মনে হয় রক্তেই ফয়সালা ।
বারুদই বিচারক । আর
স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে ওঠা ।


(কাব্যগ্রন্থ : বখতিয়ারের ঘোড়া । প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ১৯৮৫ ।)