এই ভূখণ্ডের মানুষকে কবিতার সঙ্গে যুক্ত করবার ঐতিহাসিক দ্বায়িত্ব পালনে তিনি এক কবি পথিকৃত্। জন্ম ১৫ আগস্ট ১৯২২ সালে খুলনা জেলায়। গত বছরের ২৯ জুন ৯২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। ১৯৪০ সালে প্রথম বই ‘নববসন্ত’ বের হয়। প্রথম জীবনে রচিত ঘোড়সওয়ার, বাংলার মেয়ে প্রভৃতি কবিতা তাঁকে বিখ্যাত করে তোলে। যাঁকে বাংলা কবিতার আধুনিক ধারার পথিকৃত্ হিসেবে অনেকে বিবেচনা করে। প্রায় ৩০ টির মতো গ্রন্থ রচনা করেছেন। বহু সংবর্ধনা ও পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে আছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৩) ও একুশে পদক ( ১৯৮০)


তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয় আবুল হোসেন।।।
কবির একটা সাক্ষাতকার পড়লাম ।।যা ইত্তেফাক  পত্রিকাতে ছাপা হয় ।।।



মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে তাঁর এই একান্ত সাক্ষাত্কারটি নিয়েছিলেন তরুণ কবি শ্যামল চন্দ্র নাথ
৪০ দশকে আপনার সমকালীন কবিদের মধ্যে কে বা কারা আপনার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ?
আবুল হোসেন : সুকান্ত ভট্টাচার্য ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় অবশ্যই। তাঁরা অনেক ভালো লিখেছেন। আমার মনে হয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যপূর্ণ।



এখানে কবি বলেছেন সহজ ও কথ্য ভাষার সম্পর্কে ও কঠিন। ও সাধু ভাষার কবিতা সম্পর্কে।।।।



আপনার কবিতায় কথ্যরীতির ব্যবহার দেখতে পাই, কিন্তু কেন ?
আ. হো. : কাব্যিকপনাকে আমি ঘৃণা করি। কারণ বাংলায় একটা কাব্যিক ভাষা গড়ে উঠেছিল, যা সাধারণ মানুষের ভাষা থেকে অনেকখানি ভিন্ন। আমি এই কৃত্রিমতাকে বর্জন করতে চেয়েছি। কবিকে আমি বিশেষ জীব বলে কখনো ভাবিনি। কবিও সমাজের অন্যান্য লোকের একজন। আমি নিজের পথটা খুঁজতে চেয়েছিলাম। কাব্যের একটা প্রচলিত ভাষা আছে, যে ভাষায় বা রীতিতে লিখলে সহজেই কবিখ্যাতি পাওয়া যায়, কিন্তু সেই সোজা সড়কে চলতে আমার ইচ্ছে হয়নি। অনেক পাঠক ভাবেন, আমি কেবল গদ্য কবিতা লিখি। যদিও আমার গদ্য কবিতা খুব কম। কথ্যরীতি ব্যবহার করে বাংলা কবিতা ক্রমেই সাধারণ লোকের কাছাকাছি আসতে পারবে। তাই আমি কথ্যরীতির প্রতি মনোযোগ দিয়েছি।



এখানে দেখা যায় তিনি কথ্য ভাষা কেন পছন্দ করেন
তার উত্তর দিয়েছেন।।   মানুষ যে ভাষা ব্যবহার করে।
তিনি বলতে চেয়েছেন কবিরাও কথা বলে সে ভাষাতে।


কিন্তু কঠিন কাব্যিক ভাষা কথ্য নয় ।সেটি কেও ব্যবসার করে না।। তাই তিনি মানুষের মুখের ভাষাতে কবিতা রচনা  করতে চেয়েছেন।।।।মানুষ যে ভাষা কম বুঝে সেটাকে পছন্দ করেন নি।।।


তার পর বললেন রবী ঠাকুরের ও জীবনানন্দের কথা


আপনার সাহিত্যক ঋণ কাদের কাছে আছে বলে আপনি মনে করেন?
আ. হো. : ঋণের কোনো শেষ নেই। বাংলা ও ইংরেজি কবিতার একটা বড় অংশের কাছে আমি ঋণী। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র, ডক্টর সুবোধ সেনগুপ্ত, তারকানাথ সেন, ডক্টর রাধাগোবিন্দ বসাকসহ আরো অনেকেই রয়েছেন। এখন মনে পড়ছে না। এছাড়া সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা, যার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, সাহিত্যালোচনায় কাটিয়েছি। কিন্তু আমি সবচেয়ে ঋণী আবু সয়ীদ আইয়ুবের কাছে। তাঁর কাছে পেয়েছিলাম রুচি।
রবীন্দ্রনাথকে আপনি প্রথম কবে দেখেন এবং প্রথম কথা হয় কিভাবে?
আ. হো. : সেটা ১৯৩৮ সালের দিকে, শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গিয়ে। তখন কথাবার্তা হয়নি। দূর থেকে দেখেছিলাম। এরপর ১৯৪০ সালে, তখন আমার সাথে ছিল সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র। আমি ওখানে সম্ভবত ইংরেজি কবিতা সম্পর্কে বলি। আমার ভাষণটা নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছিল। ওই দিনও কথা হয়নি। এর পরের দিন আবার গেলাম দেখা করতে । রবীন্দ্রনাথ বললেন, আপনারা অদ্দুর থেকে এসেছেন—দরজা ভেঙ্গে এলেন না কেন? রবীন্দ্রনাথ খুব নাটকীয় ছিলেন তাঁর কথাবার্তায়। আমি উনাকে বললাম, সাধারণ শিক্ষার অভাবেই আমরা সাহিত্যে পিছিয়ে পড়েছি। রবীন্দ্রনাথ তখন বললেল—‘এই পথেই তোমাদের মুক্তি হবে।’
জীবনানন্দ দাশের সাথে দেখা বা কথা বলার স্মৃতি কি এখনো আপনার মনে আছে ?
আ. হো. : সব মনে নেই। তবে যতদূর মনে পড়ে, জীবনানন্দ একটু বিষণ্ন ছিলেন, কোনো চাঞ্চল্য আমি লক্ষ করিনি। জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ নিয়ে আমি আলোচনাও করেছি। আমি উনাকে বলেছিলাম, দেখুন আপনার লেখা একেবারে ভিন্ন, অন্যদের চেয়ে আলাদা। আবার মাঝেমাঝে বুঝতে পারি না। জীবনানন্দ আমার কথা শুনে হাসলেন।
================
সব শেষের প্রশ্নটা ছিল কবির কবিতার ধারা ও দিক সম্পর্কে।




যে ধারণা বুকের গভীরে লালন করে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন, জীবনের এই শেষ পর্যায়ে এসে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির কি কোনো পরিবর্তন ঘটেছে?
আ. হো. : ছেলেবেলায় যখন কবিতা লিখতে শুরু করি, কবিতার ভাষা, ছন্দ, মিল, বিষয়—এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা ছিল না। লিখতে ভালো লাগত তা-ই যথেষ্ট। অনেক বিষয়েই লিখেছি। পরে অনেক ভেবেচিন্তে কবিতাকেই বেছে নিলাম। আমি মানুষের মুখের ভাষার প্রেমে পড়ি। ফলে অপ্রত্যাশিত লাভ হলো। মানুষের মুখের ভাষার প্রতি প্রেম থেকে আমার কবিতা সহজ সরল হয়ে গেল।


#এখানে একটা বিষয় বুঝতে বাকি নাই সেটি হল 'কবি মানুষের মুখের ভাষা ও সহজ সরল ভাষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
প্রাধান্য দিয়েছেন সাধারণ ভাষাকে।।তিনি বলেছেন ;
কবিরা আলাদা কোন জীব বা মানুষ না।।সকল মানুষের মতই।
তাই কবিতা হওয়া দরকার এমন যেন সেটা কঠিন ও কাব্যিক না হয়।।।সহজ ও সরল ভাষাতে হয়।।