রান্নাঘর আছে অপেক্ষায়।উনুন সেজেছে মাটির ভালোবাসার প্রলেপে।এবারে তাপ পাবে তার হৃদয়খানি।তৃষার্তের মতো অপেক্ষায় আছে শব্দহীন।
এক নাছোড় প্রশ্ন ঘোরে রান্নাঘরের উচাটন মন-বাতাসে।উতলা জিজ্ঞাসা তার,হে আগুন!!কখন গায়ে মেখে নরম মাটি,ধাতুর পাত্রটি বসবে আমার উনুনের বুকে ব্যাস্ত আঁচের পরে??
এক অবিশ্বাস্য তেজের ঋণে ঋণী হবে প্রতিটি চালের কণা।
বিপুল বদল আসতে চলেছে যে শস্যদানার জীবনজুড়ে।তৈরী হবে আলো-চালের ভাত!! চতুর্দিকে শুধু শব্দ শুনি নানা পাত্রের ঝনঝন্।ইচ্ছুক মন আজ হার না মানা প্রতীক্ষায় বসেছে।লগ্ন হয়েছে প্রস্তুত সুখের সমতলে।
কেন বল তো পূবাকাশের বৃহৎ তারাটি আজ অধিক লালে জ্বলে?? লতাপাতা দোলে ছন্দে?? চাঁদ চেয়ে আছে পৃথিবীর পানে?
উপবাসী বসুমতী সদ্য সেরে উঠেছে বিশীর্ণ অসুখের আঘাত।আজ সে মুখে তুলবে আলো চালের আশ্বাসভরা ভাতের গেরাস!!চলৎশক্তি ক্ষয়ে গেছে রোগশয্যায় তার।টালমাটাল পদক্ষেপ হলেও রৌদ্র তার মুখে এঁকেছে রকমারি আল্পনা।ভারী সুন্দর মানিয়েছে তাকে।
বিশ্বাসী শুশ্রূষায়  ফিরে পাওয়া যাবে যাবতীয় খোয়া যাওয়া মুহুর্তদের।পছন্দের গল্প হবে পা ছড়িয়ে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা।
রুগ্ন বুকে সাহস জাগাতেই তো সূর্যের উদয় হয়েছে আজ।
দুঃখরা বাসী হবে মুগ্ধ কথার বাঁকে এই দিনে।কচি পাতার নাচের তালে পাওয়া যাবে সহজিয়া আশা,যে আশা সঞ্জীবনী সুখ দেবে বৈশাখ হতে চৈত্র।
সূর্যের বান্ধবী আজ গায়ে জড়াবে হাজারো রঙের রৌদ্র সুতোয় বোনা গাঢ় সোনালি বেনারসি।
আবাঁধা কেশ নয়,কবরী সাজবে স্বর্ণ গন্ধরাজে।
সৌভাগ্যের তাঁত বোনা হবে এই মাহেন্দ্র ক্ষণে।


ঐ তো এসেছে দেখি আকাঙ্খার পাত্রটি।আনন্দরূপী তাপের প্রশ্রয়ে এবারে শুরু হবে ভাত রান্না।
ওথলানো ফেনায় আবেগের বুদ্বুদ জমে!!গরম ভাতের গন্ধে পুরোদস্তুর যন্ত্রণা ভোলার চেষ্টা করে বসুমতী।বাতাস বয়ে এনেছে আশীর্বাদ  অভ্যর্থনা-তরে।চঞ্চলতার সামর্থ্যে মাতিয়ে রাখবে তার নোনা ধরা মনটি।এতদিনের অতৃপ্তি অস্পষ্ট হবে এক নাম না জানা বনফুলের করস্পর্শে।
মাটির পাত্রের নম্র মায়ার ক্ষরণ কাছে টেনে নেবে তাকে।কি এক ভাস্বর মুহুর্ত তাই না?


শেষ হল নিতান্ত এক সাধারণ ব্যঞ্জন।তবু আশাতীত তার উন্মাদনা!!এর কারণ,এ মুহুর্ত ভালোবাসার ভারে ভারী।বিজয়ের গন্ধমাখা কাকলি-মুখর এক অধ্যায়।জড়িয়ে থাকবে অন্তহীন পূর্ণতা নিয়ে অনন্তকাল।
ঘরে জ্বালো উৎসব বাতি।
কপালে লাল টিপ পরা নববধূ বসুন্ধরা
তার গৌর হাসিতে শুরু করতে চলেছে চির-চেনা,চির-আপন,সুস্থ বাতাস-বওয়া ছন্দে আবর্ত আবার।পায়রা ওড়াবো আজ প্রচীনা মাটিতে দাঁড়িয়ে।রাত জাগবে বলেছে জ্যোৎস্নাদল।
শুধু দেখো হে সময়!!নিরাময়ে যেন কোন ফাঁক না থাকে।বহুবর্ণময় হোক এই বেঁচে থাকা।আঁধার অসুখের ক্লান্তির পর এক নিরাপদ পরমায়ুর বাসনা যে বড় উদ্ধার পাওয়া নিয়তির!!
জীবন অভিযানে এক রঙে ঠাসা কলম দাবি করি তোমার কাছে,যা দিয়ে লেখা হবে আগামীর প্রাঞ্জল পুঁথিখানি এই বিশ্ব আবাসে বসে।
দেবে তো??