এই তো,এই তো প্রায় এসেই গেছি আমার অন্তঃশীলা অপেক্ষার তীরে!!
আর একটু ধুলো উড়িয়ে চলো মন,ঐ যে দেখা যায় গাছে গাছে সবুজের স্রোত,তার পাশে ঐ যে ভালোবাসা প্রান্তর জাগে সারা রাত্রি সারা দিন,ওটাই তো ময়নাপাড়ার মাঠ।ঐ আলোর বাগানেই তো থাকে  কবির ছলছলে কালো ভূমিকন্যা কৃষ্ণকলি।
যার অদেখায় এ মাঠের বুক কাঁপে আজও।
হাওয়ার ছোঁয়ায় আমরা এগিয়ে চলি চলো।রোমাঞ্চ দোলে বুকে!!পায়ের নিচের লাল কাঁকর খিলখিল করে ঠাট্টা ছড়ায় আমার অস্থির অবস্থার সুযোগে।কি দেখবো আমি আর একটু পরেই।পিঠের পরে মুক্ত বেণী লোটা কৃষ্ণকলিকে?
দুদিকে দিগন্ত ছোঁয়া মাঠের বুকে অম্লান যে কুটির দেখি,কৃষ্ণকলি কি করে এখন সেখানে??
একটি লাজুক পাখি গাইছে শুনি এক ফুলপাগল গাছের শাখে।এই নিটোল নিস্তব্ধতায় সে কি অমিয় মধুর  বার্তা দেয় অতিথি আসার?
কি যে বলে বুঝি না ছাই। কঠিন হেঁয়ালি যেন।
বাতাসের স্পর্শে পাই আর্দ্র কোমলতা।এ বাতাস নির্ঘাত কৃষ্ণকলিকে ছুঁয়ে এসেছে,না হলে এত সুগন্ধি কেন সে!!
আকাশটা বড় হয়ে ছড়াতে ছড়াতে স্বাগত জানায়।
সত্যি মন,কৃষ্ণকলির দেশে কতো আয়োজনে ক্লান্তপদ আতিথ্য-প্রত্যাশী কোন পর্যটকের হয় অভিবাদন দেখো তুমি!!ধুয়ে মুছে দেয় যত সত্তার ক্ষত!!শুভ্র সন্তোষের ভাষা খুঁজে আনে হৃদয়ের আহ্লাদ!!
কিন্তু এতটুকু পথ পেরোতে এত সময় লাগে যে কেন আমার কে জানে!!কিছু কি ভুল চুক হল?না না তা কেন হবে।আমি জানি এটাই সঠিক পথ।আসলে বশে আনতে পারছি না উৎসাহে আবৃত মনকে।স্পন্দিত হচ্ছে এক অচেনা হৃদয়,সেই মেয়ের টানে।
কালো হরিণ-চোখের ইন্দ্রজালের কথা তো জেনেছি কবির গানে কত।দীর্ঘ প্রতীক্ষায় সেই দারুণ স্ফটিক আভা.. কি গান,কি সুর,কি নিষ্কম্প আলোর মাধুরী ছড়াবে যার মায়ায় পরাজিত হবে পৃথিবী,দেখব তাই।যুগল ভুরু কি আজও ছড়ায় কালো মেঘের ঘটা আকাশ- মনে?এই অর্ধবৃত্তাকার মেঠো পথে তার শ্যমল গাই কি ফেরে বাঁধনহারা আজও?রুদ্ধশ্বাস এইসব জিজ্ঞাসার দুরু দুরু চলছে শুধু বুকে।
আচ্ছা,এত উতলা কেন হয়ে চলেছি?এভাবে কেন ভাবছি হবহু দেখবো সবটা!!দূর তেপান্তরে ফেলে আসা কবির কৃষ্ণকলির কি স্ব-ছন্দে বাড়ে নি বয়স? পৃথিবীর নিয়ম বিরুদ্ধ হয়ে সে কি করে ছটফটে আয়ুকে বেঁধে রাখবে সময়ের পাটাতনে?তবে কি শিকারী সময়ের কারসাজিতে ক্ষয়ে গেছে তার সেই রূপ!!অনেক পুরোনো এক পৃথিবীর নারী সে?নাকি স্নিগ্ধ লঘু যৌবন প্রান্তে আজও দাঁড়িয়ে আছে অবিকল,কবির সৃষ্টির যাদু গুনে!!


তখন হঠাৎ বুঝি,আমি কাকে খুঁজতে চলেছি মানবচক্ষে!!সে যে কেবল মানসনেত্রের মাধুরী!!
ওগো কৃষ্ণকলি!!তুমি যে সেই কল্যাণী মায়া যাকে টেনে আনা যায় না দৃষ্টির দরবারে!! যাকে শুধু বেঁধে রাখা যায় অনুভবের আঁচলে এই কোমল অন্তর ভুবন তীরে!! তুমি তো দু-চোখ বিভোর করা সেই প্রেম কবির,যে শুধু আরাম দেয় মনকে মধুর দুপুরে শীতলপাটিতে ক্ষণ-বিশ্রাম সম!!তুমি আষাঢ়ের বনজ্যোৎস্না!!শ্রাবণের আকুল করা প্রেমের নির্ঝর!!তুমি এক ও অবিকল্প থাকবে নিঃসন্দেহে!!যুগে যুগে মানুষ এসে চিনে নেবে তোমাকে আত্মার গহিনে।সময় যতই ধাবিত হোক,তবুও কবির প্রেমের বয়স বাড়ে না যে!!!