ঐ যে দূরে মাঠ পেরিয়ে
   দেখছো সবুজ গ্রাম ,
নামটি এবার বলছি শোন
  " হিজলাবট " তার নাম।


হিজল কিংবা বট গাছ এখন
    খুঁজেও পাবে না সেথায়,
পুরোনো ঐতিহ্য খুঁজতেে গেলে
    উঠবে ভরে বুক ব্যাথায়।


পাশ দিয়ে এর বয়ে গেছে
    সরু গড়াই নদী ।
বর্ষায় এর ভয়ঙ্করী রুপ,
    ভয় পাবে দেখ যদি ।


এ গ্রামের বেশী অংশই এখন
    চলে গেছে নদী গর্ভে ।
অনেকেই তাই গ্রম ছেড়ে, নেমেছে
     বাঁচা-মরার লড়াইয়ের পর্বে ।


বৃটিশ আমলে,নীলকুঠি ছিল হেথা
     নীল চাষ হোত আশেপাশে,
ভাঙা ইমারত গুলো দেখলে এখনো
     হৃদয় পটে উঠে তা' ভেসে ।


অত্যাচারিত নীল চাষীরা তখন
     ধুকে ধুকে মরে গেছে ,
লাল তেতুলের গাছটি এখনো
     সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।


রক্তাক্ত কৃষকের শরীর
     মনে করিয়ে দেয় ঐ লাল তেতুল ,
মুক্তি পাগল গাঁয়ের লোকেরা
      একাত্তরে আর করেনি সে ভুল ।


একদিন এ গাঁয়ের সুনাম ছিল,
      সব কিছুতেই ছিল সে প্রথম ।
মুক্তি যুদ্ধেও যে ভূমিকা রেখেছিল
      এখনো হৃদয়ে শুনি সে মাতম ।


এখনো মনে হয়, এইতো সে দিন
     আমরা ছিলাম ছোট্ট যখন,
শীতের মৌসুমে হ্যাঁচাকের আলোতে
     মঞ্চস্হ হোত নাটক তখন ।


বাড়ী বাড়ী থেকে,শাড়ী চৌকি এনে
    মঞ্চ বানিয়ে, শীতের রাতে,
বিচিত্রা অনুষ্ঠান আর নাটক করতে
   কোন বছর দেখিনি ভুলে যেতে।


স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে গাঁয়ের সবার
    স্বেচ্ছা শ্রমেই সব কাজ হোত,
হাসি-খুশী সেই উজ্জল মুখ গুলো
    স্মৃতির পাতায় এখন, হয়ে গেছে গত ।


গাঁয়ের ছেলেরাই অভিনয় করতো,
    মজা পেত সকলে তা' দেখে ।
যুগের হাওয়ায় বদলিয়েছে সব,
     যায়নি কোন তার ছিটেফোটা রেখে ।


এখন গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে , কিন্তু
   বিদায় হয়েছে আগের মন-মনসিকতা,
স্বার্থপরের মত আচরণ শিখেছে সবে,
   এটাই এখন গ্রামবাসীর চরম ব্যর্থতা।


একদা এ গাঁয়ে লাইব্রেরী ছিল ,
    ছিল  সুন্দর খেলার মাঠ ।
প্রতিটি বাড়ীতেই ফুলগাছ শোভা পেত
    যেন একেবারে পরিপাট।


আদর্শ গ্রামের নামের তালিকায়
    প্রথম সারিতেই ছিল যে সে,
গড়াই নদীর গ্রাসে,মুছে গেছে সব।
    ঠাঁই হয়েছে এখন স্মৃতির পাশে।


ছবির মত সেই গ্রামটি এখন
     বিদ্ধস্ত কোন নিষ্ঠুর থাবায় ।
গ্রামবাসির চেহারায় বিষাধের ছায়া,
     গ্রাস করেছে তাদের হতাশায়।


কত জল গড়িয়েছে গড়াই নদী দিয়ে
     বৃটিশ,পাকিস্তান থেকে এখন বাংলাদশ ।
এক সময়ের নাম করা এ গ্রাম খানি
    নদী গর্ভে এখন হ'তে বসেছে নিঃশেষ ।


হয়তো একদিন গড়াই নদীর গর্ভে
     সম্পূর্ণ গ্রামই হবে বিলীন ।
"হিজলাবট" নমের গ্রামটির অস্তিত্ব
    জানিনা আর টিকবে কত দিন ।