বয়স আশির উপরে হলেও
   মনে হয় এইতো সেদিন ,
পিছনের স্মৃতি হাতরাতে গিয়ে
   বুকে ব্যথা করে চিনচিন ।


এখনো চোখে ভাসে, বিয়ে করে এনেছিনু
     সুন্দরী কলেজ পড়ুয়া কন্যা ,
বৌ হয়ে এসে সে, বাড়ীতে এনেছিল
     আনন্দের এক মহা বন্যা ।


অচিরেই দেখা গেল, কোল জুড়ে এল তার
     আকাক্ষিত ফুটফুটে এক সন্তান ,
ছেলেটিই ছিল, এ সংসারে আমাদের
     দু'জনের একেবারে জান-প্রাণ ।


সে ছেলেও ধীরে ধীরে, বড় হয়ে একদিন
     নিজেই বনে গেছে বাবা ,
আমরাও হয়ে গেলাম বৃদ্ধ-বৃদ্ধা
     এখন নিতে হয় তাদেরই সেবা ।


বিনা নোটিশে একদিন, বৃদ্ধা গেল পরপারে
      এই নির্জন কক্ষে রইলেম একা ,
সেদিন থেকেই বুঝতে পেরেছি
       কেমন জ্বালা একা থাকা ।


ঘরের এক কোনে, ছোট্ট সেই কক্ষে
     দিন যাপন করি নির্জনে ,
বাড়ীতে কেউ এলে, উঁকি দিয়েও দেখেনা
      কোন বৃদ্ধ থাকে এখানে !


ইদানিং কেন জানি, শূণ্যে হাত কাঁপে
     খাবার টেবিলে যা, একেবারেই বেমানান ।
আমি যে এখন, ব্যাক ডেটেড হয়ে গেছি
     রুমে খাবার পাঠিয়ে, দেয় তা' জানান ।


স্ত্রী যখন ছিল, দেখ-ভাল করতো সে
    অসুবিধা হোত না যে তাতে ,
এখন কাজের ছেলেই, ভরসা একমাত্র
    সেই তুলে দেয় খাবার পাতে ।


নির্ভরশীল হওয়ায়, তার দাপটও কম নয়
    ডাকলেও সহজে আসে না ,
টাকার গরজেই দায়সারা করে কাজ
     আন্তরিকতার লেশ যেথা থাকে না ।


সে দিন কি যে হোল, একা উঠতে গিয়ে
     মাথা ঘুরে গেলাম নিচে পড়ে ,
বৌ যদি থাকতো এদিনে, নিশ্চিত লুফে নিত
     আমায় ফেলতো ঠিকই ধরে ।


পরপারে সে, চলে যাওয়া থেকেই
    হয়ে গেছি বড় অসহায়,
যে সংসার একদা আমারই ছিল
    সেথায় কেউ, চায়না নিতে মোর দায় ।


সঙ্গী হারিয়ে ঘরের এক কোনে
      একা নির্জনে শুয়ে থাকি ,
দৈবাত কেউ দেখা করতে এসে
     কিছু বললে, লাগে  মেকি !


বৃদ্ধের সাথে পায়নাতো মজা
      কেউ কখনো কথা বলে ,
তাই যে আসে, দূর থেকে হাত নেড়ে
      হ্যালো বলে যায় চলে ।


স্ত্রী না থাকায়, বৌমার উপরে
    পড়েছে আমার সব দায়িত্ত্ব,
যতটুকু পারে , করে যায় তবুও
    মুখে ফুটে উঠে সদা বিরক্ত ।


ছেলের অনুপস্হিতিতে সে ভাবখানা
    ফুট ওঠে আরো বেশি ,
ছেলে যখন থাকে, তার সম্মুখে
     মুখে ফুটায় মেকি হাসি ।


বুদ্ধিমান ছেলে শান্তি ফেরাতে
     দিয়ে আসে আমায় বৃদ্ধ আশ্রমে ,
আমারি ঘর থেকে আমাকে সরানোয়
    শান্তি আসলো যেন নেমে ।


এখন ঘরের সবার মুখে হাসি
    আপদ গেছে যেন দূরে ,
বিরক্তির ভাব উবে গেছে এখন
    সবার মেজাজ ফুরফুরে ।


ঈদের দিনেও , সময় হয়না দেখা করার
    টেলিফোনও করতে যায় ভুলে ,
এই ছেলেকেই একদিন আগলিয়ে রেখেছিলাম
    ব্যথা পেলে সে, বুকে নিতাম তুলে ।


একদিন যে বাড়ীর, আমিই ছিলাম সর্বেসর্বা
     সকলের বড় কর্তা ,
সেই আমি আজি, অথর্ব হয়ে দূরে নিক্ষিপ্ত
     এটাই এ যুগের শেষ বার্তা ।


শুধু " দীর্ঘজীবী হও " বলে, এখন যদি শুনি
      কেহ কাহরো করিতেছে দোয়া ,
আমি বলি অথর্ব বৃদ্ধ হয়ে বাঁচাটা
      এতো দোয়া নয় , বদদোয়া  ।