অভাবের চিহ্ন বুকের মধ্যে সেই ছোট বেলায় খুব ভালো করে গেঁথে গেছে।
এখন আর অভাবের তাড়না তারা করে না আমায়।
শুধু কিছু দুশ্চিন্তা চেপে আছে মাথার উপরে।
কিভাবে এগারো মাসের নিষ্পাপ শিশুটিকে অভাবের তাড়না থেকে দূরে রাখবো।
কিভাবে স্ত্রীর মুখে পরে থাকা শিমুল ফুলের মত এক টুকরো হাসি ফুটা ব।
আমার বর্তমান অবস্থায় যদিও, সে কোন আবদার করে না, বরং আমাকে যথেষ্ট সঙ্গ দিয়েছে কানের দুল, গলার চেইন আর আঙ্গুলের তিনটি আংটি দিয়ে।
আমি তারে আজও কিছু দিতে পারিনি।
তবুও তার কিছু চাওয়ার নেই আমার কাছে।
আর কোন আবদার করে না।
অভাবের তাড়নায় বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি
কিন্তু মাকে দেখেছি প্রায় হাসি মুখে চোখ মুছতে।
দেখেছি সুপুরি খোল আর নারকেল গাছের পাতা কারো কাছে বিক্রি করে টাকা নিতে।
আমাকে আর সহোদর ভাইকে কত না উঠাইতেন সুপুরি-নারকেল গাছে,
অভাবের চিহ্ন বুকের মধ্যে সেই ছোট্ট বেলায় খুব ভালো করে গেঁথে গেছে।
বেশ অবুঝ ছিলাম যখন বায়না জুড়ে দিতাম বাবার ঘাড়ে, কি আর করার ছিলো?
চাওয়াটাই পাওয়া ভেবে অনায়াসে মেনে নেয়া হত সব।
বেশ রাগী ব'লে দ্বিতীয় বার আবদার করা হত না, সব আয়োজন রয়ে যেত নিরুউৎসব
বাবার দোষ ছিলো না, নয় সদস্যের সংসার আগলে রেখে বাস্তবতার কাছে ক্ষুদ্র ব্যবসাটা হারাতে হলো প্রতিযোগিতা র ঘাটে,
মাটির যত্ন না নেওয়ায় ফসল গুলো বড্ড অভিমান করে বসে চৈত্রের মাঠে।
অভাবের তাড়না তারা করে না এখন আর, বাবা বেশ কাৎরাচ্ছে কোমল বিছানায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে,
ছোট্ট শিশু স্ত্রী আর কিছু অনিবার্য প্রাসঙ্গিক তায় মাঝে মাঝে ব্যথা হয় বুকের মধ্যে।
এবার তাই প্রতিকূলতা র মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে, সামনে দু-হাত বাড়িয়ে, আঁধারের মধ্যে চন্দ্র যেভাবে পুলকিত করে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে সারা পৃথিবীর পথে ;
কত হিসেব জমা জীবনের খাতায় ঠিক অঙ্ক কষে নেব অভাবের সাথে।
চিহ্ন টা দেব মুছে, বুকের তাজা রক্তে হারাবার যা ছিলো তাতো হারিয়ে গেছে,
বুঝে না মন কোন শান্ত নায় ,
অভাবের তাড়না তারা করে না আমায়,
শুধু কিছু দুশ্চিন্তা, কিছু দুশ্চিন্তা আর দুশ্চিন্তা।