তুমি পাশে থাকলে— আমার নির্বাসিত যাযাবর জীবনও
বেশ ভালো লাগবে। তপ্ত মরুতে একসাথে হাঁটার পর একদিন আরব্য গাছের নিচে বসে খেজুর ভাগাভাগি করে খেতে ভীষণ ইচ্ছে করবে! জোৎস্না ঝলসিত পূর্ণিমা রাইতে
আরব উপসাগরের কোলে নরম বালির পৃষ্ঠে আমাদের মুখোমুখি আড্ডা জমবে। হিমশীতল সাগরের হালকা ঢেউয়ের গুঞ্জনে সবুজ ইয়েমেনি চাদর ঝুলিয়ে— একে অপরকে প্রগাঢ় জড়িয়ে রাখতে মন বড্ড ব্যাকুল হবে!

মায়াময় তোমার চোখে ছড়িয়ে থাকবে আসমানের তারা,
তোমার মৃদুমন্দ হাসিতে ঝরবে জান্নাতের শুভ্র জলধারা!
শ্বাসে-প্রশ্বাসে থাকবে হাউজে কাওসারের প্রতুল মিষ্টতা!
বক্ষে জড়িয়ে থাকবে বিশ্বাসের বুকপাতা আবরণ!
স্মৃতিতে লেপটে থাকবে ভালোবাসা শাশ্বত, আমরণ!
মৃদুকণ্ঠে থাকবে দূর আরবের মক্কার মসজিদের সুর-শ্রাবণ! সুরের মূর্ছনায় আসমান থেকে খোশমেজাজে নুরের নক্ষত্র ভেসে পড়বে।

তুমি পাশে থাকলে— একদিন সাইবেরিয়ার বাতাস এসে
যাপিত কষ্ট উড়িয়ে নিয়ে যাবে! কাশ্মীরের অতিথি পাখি
ঠোঁটে ধারণ করা সোনালি রেশমি সুতোয়— ঘন কুয়াশার
দুর্দিনে- আমাদের হৃদয়কে একসূত্রে বেঁধে দেবে! তোমার পবিত্র স্পর্শে এতাবৎ সমূহ মনখারাপ ভেসে যাবে কোমল কাব্যিক সমুদ্রের মতো! খেজুর গাছের ফসলের মতো
হৃষ্টপুষ্ট মিষ্টি প্রেমে আমাদের জীবন হবে অনাদি-অনন্য।

বিরহের রাতগুলো হবে নেহাত চন্দ্রপৃষ্ঠের আলোর মতো। তোমার প্রতিটি উষ্ণ অভিমানী দৃষ্টি আমাকে অনাবিল স্নিগ্ধতা দেবে। শীতের সবুজ গিলাফে ওঁৎ পেতে থাকবে আমাদের প্রেম। গাঢ় গিলাফের নিবিড় নীলতায় লাল প্রজাপতির মতো আমরা বৃষ্টিস্নানে মেতে উঠব! আরশের ছায়ার নীচে প্রশমিত নির্মেঘ দিনগুলোর শীতলতা
আমাদের অন্তরে এক প্রশান্তিময় বসন্ত আনবে।  

তুমি পাশে থাকলে— এই আদি-উজবুক অন্তরে এক অবিশ্বাস্য প্রতিশ্রুতি থাকবে। সহজ শান্ত নদীর জীবন শেষে জান্নাতের পাতাশোভিত সুস্নিগ্ধ বাগানে হাতে হাত রাখার ভীষণ ভালো প্রতিশ্রুতি! চোখের কোমল জলে থাকবে সুখের অনন্ত প্রতিভাসিত প্রার্থনা— যেন জান্নাতে প্রথম পা রেখেই আমরা একে অপরকে মায়াভরে দেখি! চির-যৌবনোদ্দীপ্ত জান্নাতের ফাল্গুনী প্রতিটি পথ আমাদের জন্য উন্মুক্ত হবে। হাতের ছোঁয়ায় জুঁই ফুটবে শ্যামল ফিরদাউসের কাননে!

জান্নাতের প্রতিটি ফুল, প্রতিটি পাখি এবং প্রতিটি ঝরনা আমাদের একে অপরকে অন্তহীনভাবে ভালোবাসবে! হিরন্ময় প্রতিটি মৃগনাভি, প্রতিটি জাফরানের পলিমাটি এবং প্রতিটি মনিমুক্তার কংকর আমাদের পদতলে চির ধন্য হবে!