বসে আছি বেলকনিতে আরাম কেদারায়
কদম গাছটায় মাংসল পুষ্পাধার এসেছে
পরিণত ফুল হলুদ-সাদায় প্রস্ফুটিত মঞ্জরি
প্রতি বর্ষায় অপেক্ষা, মাংসল কদম ফুলের
বিকীর্ণ বিন্যাস দেখার, কৈশোর পেরিয়ে যৌবন,
একদা নীপা নামের মেয়েটির খেলার সাথী হই
ওয়ালেট ভরা টাকা, দামী গাড়ী, হাই ভলিউম মিউজিক
পিচ ঢালা পথে আমার যৌবনে কাঁপন ধারায়, নীপা।


প্রথম প্রেম কি না জানি না, বর্ণনাহীন আবেগে ওড়া
নিম্ন-মধ্যবিত্তের মেয়ে এমন আর কি, সস্তা লেইস ফিতা
আমি ওকে কুমোরের মত ছেনিয়ে ছাচেঁ ফেলি
ওখানে দেখি মারলিন মনরো কিংবা ক্লিওপেট্রা
আমার দুরন্তপানায় নীপা শুধুই আমার খেলার সাথী।
না!  টাকার লোভে নয়, সে ভালবেসেছিল আমাকে
খোলা হুডে নীপা’র উড়ন্ত চুল, আমার গতি এক্সিলাটরে
নীপা আমাকে কদম ফুল, অসংখ্য রেণুর কথা বলে
অজস্র সুরু সুরু ফুলের বিন্যাস ও পরবর্তী ফলের কথা।
জীবনে আমি প্রথম কদম ফুলের কথা শুনি-
আমি এ রকম কদম ফুল চাইনি, আমি উড়তে চেয়েছি
ধরা দিতে নয়, আমি কদম ফুলটাকে বিনষ্ট করতে চাই
নীপ শিহরিত হয়ে উঠে, ওর কাজল চোখেঁ বর্ষা ঝরে
আমার কাছ থেকে কদম ফুল বাচাঁনোর, ওর শেষ চুম্বনও-
আমার এক্সিলেটর, মানি ওয়ালেট, পিয়ানো, কোথাও
ভালোবাসার দাগ কাটেনি, আমি দুরন্ত, যৌবনদীপ্ত খেলোয়াড়
নীপা’র অনিচ্ছায় আমি অপরিণত কদম ফুল নষ্ট করি, ভ্রূণ হত্যা করি।
নীপা খুনী বলেছিল, আমি মানি ওয়ালেট ছুড়েঁ দিয়েছি শুধু।


আমার প্রথম একটা মেয়ে হয়েছে, অনেকেই বলে পরী
সোনার চামাচে ওর শৈশব, আমি ভালবাসা বুঝতে শিখি
আশ্চর্য মেয়েটি আমায় কদম ফুলের কথা বলে!
আমি শিহরিত হই, কদম ফুল আমার ভালবাসা জাগায়
বর্ষা-ভালোবাসা-কদম ফুল আমার প্রিয় হতে থাকে।


আমার বাণিজ্যিক ফলদ বৃক্ষের অনেক শাখা
শিল্পপতী আমি, বিদেশেও বিপুল পরিচয়  বৈকি
এবারের ভাল ফলনে বৃক্ষ পরিবারের সবাই খুশী
বার্ষিক পার্টিতে আমি অবাক বিস্মিত, নীপা! এখানে?
আমার বৃক্ষ চাষীটি পরিচয় করে দেয় ওর স্ত্রী, নীপা’কে
সাথের কদম ফুলটিকে ,পরিণত, আমার মেয়ের প্রতিচ্ছিয়া
পরিণত কদম ফুল, পরিণত ভ্রূণ, আমি কাঁপি অপরিণত ভ্রুণ হত্যার
আমি ওদের কে চিনিনা, এত বৃক্ষচাষীর মাঝখানে চেনা উচিত নয়।
নিপা’র চাষীকে প্রমোশনে এক বাগানের পরিচালক করি
আমার পাপ, পূণ্য রূপান্তরের সাধ, আমি কদম ফুল ভালবাসতে থাকি।


সকালটা বাণিজ্যিক শুভ্র, আজ একটি বাগানের উদ্বোধন
মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার, নীপা’র কন্ঠ, অপরিচিত বহুদূর-
কান্নাধারা, তার পরিণত ভ্রূণ-প্রস্ফুটিত কদম ফুলের রেণু
কোন এক পুরুষ ছিড়েঁছে, মেয়েটি তার ধর্ষিতা, প্রাণহীন।
আমি বলতে পারিনি কিছু, আমি যে অপরিণত কদম ফুলের খুনী।
বৃক্ষ চাষীটি খুন করে ধর্ষককে, আমি চাষীকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম
আমি এখন পাপ বুঝি, ভালবাসা বুঝি, নীপা’র জন্য কিছু একটা-
পারিনি! শুধু বিচার বিলম্বিত করতে পেরেছিলাম অনির্দিষ্টকাল।
নীপা’র সাথে শেষ দেখা আদালতে, মানি ওয়ালেটটা ফিরিয়ে দিয়েছিল
সবকটা টাকা পুরানো, জীর্ণ কিন্তু একটিও খোয়া যায়নি
আমি নিজের কাছে সেদিন খুন হয়েছিলাম,
আমি এখন কদম ফুল বুঝি, ভালবাসা বুঝি, পূণ্য বুঝি।


আমার সময় এখন অফুরন্ত, সন্তানেরাও বিচ্ছিন্ন
বাইরের জগত নিরস বরং বারান্দা থেকে আমার বাগান,
চায়ের কাপে চুমুক, বই পড়া, কদম গাছ পরিচর্যা ভাল লাগে।
নীপা’র চাষীটি মৃত্যু দন্ডের রায়ে কনডেম সেলে
আমি ও কি কনডেম সেলে? বয়সের ভারে নুজ্ব, একাকী
চাষীটি ন্যায়ের পথে খুনী, আমি ও খুনী অপরিণত ভ্রূন বিনাশে
‘আস সালাতু খাইরুম মিনান নাউম’-ঘুম থেকে নামায উত্তম-
ফযরেই চাষীর ফাসিঁ, আজ আমিও প্রথম সেজদায় যাব
আমার ফাসিঁর দড়িটি আরেকবার পরীক্ষা করি, মনে স্নিগ্ধাতা
শুধু আফসোস, নীপাকে বলতে পারিনি, আমি কদমফুল ভালবাসি!
বলতে পারিনি ‘নীপ’ কদম ফুলের আরেক নাম, তুমিই যে কদম ফুল!