তাহারে দেখিবার তরে মৌমাছিরা ভুল করে রানী ভাবে
জল জ্যোৎস্নায় চাঁদ বুঝি হারায় সৌন্দর্য তাহার তরে
মাটির ঘরেও বুঝি ঝিলিক মেরে পূর্ণিমা লুটায়  
দেহ খানা তার কামুক ডাকিনীর, ঠোটেঁ তাহার হাসি
মরিলেও বুঝি ভোলা যায় না অনাথ এ এলোকেশি’র
মোহ মায়ায় কোথায় বুঝি বাজে প্রেমের বাঁশি।


প্রদীপ-পলাশ হিন্দু মুসলিম, কহিবে কে তাহারা জমজ নয়?
ভাই নয় বন্ধু, এক দমেই সাঁতরে পার পুকুর কিংবা দীঘির
দুরন্তপনায় কেউ কারো কম নাহি যায়, গ্রাম জুড়ে বিস্তর তাদের খ্যাতি
দু’জনেরই চোখে স্বপ্নের বাসার, এলোকেশি’র চোখেই করবে স্নান
প্রশ্ন জাগে মেয়েটি কি হিন্দু না মুসলিম? দু’জনেই চলে যায় মাসির দুয়ারে
জিজ্ঞাসিলে মাসি’র উত্তর, আমরা তো খুকি বলেই ডাকি
পেয়েছি অনাথ, রাখা হয়নি কোন নাম তার, না হয়েছে ধর্মের স্নান
যাহার গলায় জুটিবে খুকি’র মালা হবে তখন নাম ধাম ধর্ম পরিচয়।


দুই বন্ধু’র ধন্দ বাড়ে, তবে ধর্মের নির্ণয়নে কি করা যায়
পলাশ হাসিয়া কয়, পুরুষের ধর্ম অন্দর আর বাহিরের লেবাসে
নারী শুধু বহিরাবরণে ধমের্র প্রকাশালয়, যদি আমি অর্জন করি তাহাকে
নাকফুল-ঘোমাটায় করিয়া নিব মুসলিম, আর পাও যদি তুমি তাহারে
নাকফুল-সিদুরেঁ দেবতার পাদদেশে করিবে তাহারে সর্মাপন
দু’জনেই বেশ আড়ালে আবডালে  করে চলে প্রেম নিবেদন
এভাবেই চলছিল দিন বেশ যুবকদ্বয়ের বিছাইয়া পিরিতীর জাল।


অস্থির সময় চারদিক ভেসে যায়, গুঞ্জন ওঠে ভারত বুঝি এক থাকিবার নয়
হিন্দু মুসলিম বাড়িতেছে ভেদাভেদ, প্রদীপ-পলাশ শংকায় কাটায় বেশ
এরই মধ্যে জয় রাম বলিয়া ধরাইলো কেহ আগুন, নারায়ে তাকবীর বলিয়া
চলিল রক্তের স্রোত, উনিশশো সাতচল্লিশ সালের দেশভাগে যশোর রেখায়
পড়িয়াছিল পুরুষ নারী শিশু পুত্রের লাশ, বিকৃত বিভৎসতায়।


এলোকেশিকে নিয়ে দু’জনের মনেই ছিল জ্যোৎস্না বিলাস
প্রদীপ কুড়াচ্ছিল লুটিয়ে পরা লাশের মাঝে টাকার সমাহার
বীভৎসতার মাঝেও পলাশ নিয়েছিল খুজেঁ স্বর্ণের অলংকার
হঠাৎ দেখে অন্ধাকারে চন্দ্রের আলো, নাকফুলে এলোকেশির ছিন্নতা
হৃদয় তখন অমাবস্যার অমানিশায় চিৎকার করে বলে
এ হবার নয়, ভাল করে দেখে কপালে সিদুঁর নাই
কোলাহলে পলাশ পালায়, প্রদীপের দল যখন কাছে আসে
এ কি তাহার ভালবাসা আজ ছিন্নতায় মাটিতে লুটায়, নাক ফুলটায়
ওঠে চান্দের ঝিলিক, না মাথায় ঘোমটা নাই, তবে লাশ
কি করিবে দাহন? দূর সাইরেনে পুলিশের দল আসে বুঝি
পালিয়ে যায় আবার সদলবলে জয় রাম রাম ধ্বনি তুলি।


দু’বন্ধুর দ্বিধা মনে, নাকফুলে বরণ করেছিল কে এলোকেশিকে?
কিন্তু ছিলনা সিঁদুর কপালে কিংবা ঘোমটা ছিলনা মাথায়?
কি হয়েছিল ছিন্ন দেহটার? হয়েছিল দহন বুঝি জল জ্যোৎস্নায়!
খোদা আর দেবতার চালে এলোকেশির আত্না ভাসে অনন্ত আকাশে
কার ঘরে হবে বাস মুসলমান না হিন্দুর? নাকি তারা হয়ে রবে চিরকাল?
যা কিছু হয়েছিল ফয়সালা উর্দ্ধাকাশে, জমিনে তার কিসের দায়?