জ্ঞানভিত্তিক একটি সমাজ ব্যবস্থা একটি জাতির জন্য কল্যাণকর আদর্শকে পুরো জাতির নিকট পৌঁছে দিতে পারে শুধুমাত্র জ্ঞানের বিনিময় করে।
এটি নির্ভর করে যেসব জ্ঞানীগণ এই আদর্শকে লালন করেন, চর্চা করেন সেই সব জ্ঞানীদের প্রমোট করা এবং বিনিময়ের মাধ্যম সহজতর করার উপর। একটি সময়োপযোগী ও সঠিক জ্ঞান একটি জাতিকে দ্রুত পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করে। কারণ কল্যাণকর বিষয়গুলো দ্রুত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং সমাজে এটির পজেটিভ ইফেক্ট তৈরী করে থাকে। পৃথিবীব্যাপী আদর্শ ও সমৃদ্ধ সমাজগুলো এভাবেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে মাথা উঁচু করে শক্ত খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। কোন কোন রাষ্ট্র এতোটা অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কাতারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে যে, সেটি ভাবলে ম্যাজিকের মতো মনে হতে পারে। কল্যাণমুখী জ্ঞান একটি রাষ্ট্রের উৎপাদন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আদর্শিক জীবন যাপন, মানকিবকাবোধসহ দৈনন্দিন যাপিত জীবনকে পরিচালিত করে থাকে।


বর্তমান পৃথিবীতে বহু রাষ্ট্র আছে যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এইসব বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয় দুটি কারণে। প্রথমত, তারা বিষয়টি বোঝেন না বা যারা বোঝেন তাদেরকে উৎসাহিত করার প্রয়োজন বোধ করেন না। এই কল্যাণমুখী জ্ঞানকে প্রমোট করার মতো দক্ষতা তাদের থাকে না। তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রের আইডিয়াকে নকল করে নিজেদের ক্ষেত্রে বেমানান হলেও নাগরিকের ঘারে চাপিয়ে দেন। শুধু চাপিয়েই শেষ নয়, সেখানে নকল আইডিয়াটি নিজের কৃতিত্ব বলে জাহির করেন এবং শাসন ব্যবস্থাকে দীর্ঘায়িত করার খায়েশে বহু বিষয় রাষ্ট্রকে তথা নাগরিককে মানতে বাধ্য করেন।


দ্বিতীয়ত, তারা বিষয়টি বোঝেন, কিন্তু সেটি কার্যকর করার প্রয়োজনীয়া বোধ করেন না। তারা নিজ নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এইসব বিষয় নিয়ে ভাবার চেয়ে নিজকে নিয়েই ভাবতে পছন্দ করেন বেশী। কোন কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন ভাবে তৈরী করা হয় যেখানে জ্ঞানী ও জ্ঞানের কদর করাতো দুরের বিষয়, জাতিকে সুশিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলার মাধ্যমে এক ধরণের মুর্খতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। দেয়া হয় এজন্য যে, তাতে যুগ যুগ ব্যাপী একটি দুঃশাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যে আকুতি রাষ্ট্রের মধ্যে বিরাজ করে, সেটিকে সমূলে মেরে ফেলার পায়তারা মাত্র। বামপন্থীগণ এই ব্যবস্থাকে ভূর্জোয়া শ্রেণী বলে গালি দিলেও এটি আসলে তা নয়। পৃথিবীতে শ্বৈরতন্ত্র নামক শব্দটি আসলে এখান থেকেই জন্ম হয়েছে।


জ্ঞানের চর্চা ও বিস্তার এই বিষয়গুলোর অনুপস্থিতিতে একটি জাতি রাষ্ট্র আশঙ্কাজনক ভাবে পিছিয়ে পড়ে এবং তার ঐতিহ্যগুলোকে দ্রুত হারাতে থাকে। রাষ্ট্রে এর বিরুপ প্রভাব পড়তে থাকে। রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলো এমন হয়ে পড়ে যে, যখন যা ঘটে তাকে অবশ্যম্ভাবী বলে চালিয়ে দেয়া হয় এবং অবশ্যম্ভাবী বিষয় হিসেবে মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরী হতে থাকে। এটি একটি জাতিরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের ও বিপদজনক। আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি এই প্রবনতা একটি জাতিকে নিজ নিজ ঐতিহ্য ভুলে একটি বর্বর জাতি হিসেবে পৃথিবীতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু এই অবস্থান থকে বেড়িয়ে আসার পথগুলো খুব একটা সহজ থাকে না।