আমি যখন জুরং গেটওয়ে রোড ধরে হাঁটছিলাম, তখন দেখেছি
পৃথিবীর শতকোটি মানুষ দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে
আনন্দ কুড়াতে জড়ো হয়, চাঁদের স্নিগ্ধ জোছনার আলোয়,
কিন্তু আকাশ থেকে মাটি অবধি একটি বেড়া ঝুলে থাকে নাকের ডগায়;
আর পথে প্রান্তরে বিছানো থাকে বুড়ির খাপছাড়া কাঁটা,
তবে আকাশের গায়ে কিন্তু স্বপ্নের কথা চিত্রায়িত ছিলো আগে থেকেই,
সেখান থেকে কেউ কেউ চরম ধূর্ততায় একটি মানচিত্র আঁকতে পারলেও
অনেকেই সেই দুঃখপঞ্জীর মর্মার্থ  বুঝতে পারেনা;
তাই একটি জটিল অংকের আবর্তে পড়ে যায় জীবন ও পৃথিবী,
তা কি স্বাধীনতার ইঙ্গিত বহন করে!


এই যে দেশে দেশে স্বাধীনতা, পতাকাকে আমরা ইজ্জত দিয়ে থাকি
এটি হয়তো আমাদের অনাগত গর্বের ধন ও বিভ্রান্তি,
অথচ পুরো পৃথিবী থেকে প্রতি নিয়ত গরম নিঃশ্বাস বেড়োতে থাকে,
চারদিকে মহা কারিগরী আন্তানা থেকে বেড়িয়ে আসে
আলখেল্লা পড়া প্রভুর দূত, কুড়িয়ে নিয়ে যায় খাঁটি টুকরো নিঃশ্বাসগুলো;
তাতেই অক্সিজেনের ঘাটতিতে পড়ে যায় জীব বৈচিত্রে;
এখানে পৃথিবীর মানুষের স্বাধীনতা ভোগের কোন অপরাধ না থাকলেও
তারা কিন্তু নিজেদের অপরাধী ভাবতে বাধ্য হয় জবর দখলের আতঙ্কের কারণে,
আর তাই অনিষ্ক্রান্ত অপরাধের দংশন থেকে বাঁচতে
মানুষ দিন রাত ছুটতে থাকে কাল থেকে মহাকালের পথে।


সুগন্ধযুক্ত হালকা মাদকতায় লুকানো খ্যাতি ছড়িয়ে
সূর্যের আলোকে ফাঁকি দেয়া হয়,
তাতে দুর্গন্ধের ধোঁয়ায়ীত অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়;
এই সুযোগেই মোহময় আড়ষ্টতার জাদু চলতে থাকে আকাশের পর্দায়,
আমরা মোহাবিষ্ট হয়ে পরি সেই কারিশমায়,
আর হাঁটতে থাকি সেই পুরনো পথ ধরে, যে পথে
হাজার বছর ধরেই সভ্যতা হেঁটেছে অনন্ত কালের যাত্রায়।
আমাদের খুবই স্পর্শকাতর অনুভূতিগুলোকে পুণঃ পুণঃ জাগ্রত করে
লাল গালিচা হিসেবে বিছিয়ে দেয়া হয় ক্ষুধার্ত হাঁটা পথে;
আমরা কুণ্ঠিত বোধ করি অবলীলায়,
আবেগের ঝাপি খুলে পরম শ্রদ্ধায় দেশপ্রেম নুয়ে পড়ে
এই দেখে অদৃশ্যে থেকে হেসে কুটি কুটি ঈশ্বরের দূত,
সভ্যতা হয়ে পড়ে কসাই খানা, লুট হয়ে যায় সভ্যতার সর্বস্ব!
স্বাধীনতা নামের বায়বীয়টি দিয়ে আম জনতা কোন কালে লাটে উঠেছে বলে ইতিহাস নেই,
এটি একটি জীবন বিনাশী মুলার শরবত হিসেবেই গ্লাসে গ্লাসে গেলানো হয়েছে যুগে যুগে।
স্বাধীনতা এবং কথিত বিপ্লবী চেতনা একটি জুতসই হাতিয়ারের নাম,
যা দিয়ে বঞ্চিতকে সুযোগ বুঝে নিষ্পেষণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
---------------------------------------


[মূল প্রেক্ষাপট : যুগে যুগে দেশে দেশে স্বাধীনতা একটি আলাদা ভুখন্ড ও পতাকা দিয়েছে, তাতে আমরা দেশ মাতৃকার জন্য গর্ববোধ করি, আবেগে আপ্লুত হই। আমরা সাধারণ জনগণ দেশকে নিজের জন্মধাত্রী মায়ের মতোই ভালোবাসি। এটি আমাদের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি আবেগের জায়গা। কিন্তু এই স্বাধীনতা বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্রান্তিক শতকোটি মানুষের জীবন, ক্ষুধা, বেঁচে থাকার অনুসঙ্গ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভয়হীন জীবনের নিশ্চয়তা কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছে? দেশগুলোতে জগদ্বল পাথর হয়ে বসে থাকে একটি দুষ্ট শাসন। আমি আমার দেশ এবং প্রতিবেশী বন্ধু দেশগুলোতে একাধিকবার গিয়ে দেখেছি মানুষের জীবন ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম। দুনিয়ায় টিকে থাকার অত্যন্ত অমানবিক ও মর্মান্তিক যুদ্ধ। বিশেষ করে ভারত বর্ষ স্বাধীনতা পায় ৪৭এ, আর বাংলাদেশ ৭১এ। এই দেশগুলোতে অতি সাধারণ মানুষের একটি রাষ্ট্র ও একটি পতাকা ছাড়া আর কি কিছু আছে? সাধারণ মানুষতো স্বাধীনতা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, বিদেশনীতি এসবের কিছু নিয়েই মাথা ঘামায় না। শুধু দুবেলা দুমুঠো খেয়ে শান্তি মতো ভয়হীন একটি সুখী জীবন যাপন করতে চায়। অত্যন্ত সীমিত চাওয়া পাওয়া। তার কি কোন নিশ্চয়তা কোন কালে কেউ দিতে পেরেছে? অথচ অত্যন্ত হাস্যকর ভাবে বলা হয়, রাষ্ট্রগুলোর মালিক নাকি জনগণ। রাষ্ট্রগুলোর মালিক যদি জনগণ হয়ে থাকে, এই মালিকানার স্বাধীনতার কোন নমুনা কি কোন কাজে দেখা যায়? এসব দেশগুলোতে সাধারণ মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করা হয় এবং মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় বুধ করে যে যার আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে উন্নত দেশে পাচার হয় অথবা কুক্ষিগত হয়। আর মানুষগুলো যুগে যুগে একই অবস্থায় থেকে যায়।]