আজ আড়াই মাস পর
আনুষ্ঠানিক লকডাউন উঠিয়ে নিলো সরকার,
শুনলাম, এখন আমাদের আর গুপ্ত ঘাতকে ভয় নেই,
শহর ধুয়ে মুছে মানুষের বসবাসের উপযোগী করেছে
একদল বিপ্লবী সেনা।
ছোট্ট দুটি কামরায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে
রাত্রির বিষন্নতায়, নিদ্রাহীন পালকের খোঁজে
যেন হাজার বছরের একমুখী যাত্রা।


বাসার নীচেই মিলন নাপিতের মায়ের আশির্বাদ হেয়ার কাটিং
বায়ে সালে আহমেদের মুদিখানা,
পরের দোকানটি সুমন ডাক্তারের চেম্বার,
দোকানগুলো সব বন্ধ।


অল্প মেঘলা দিন হলেও
সূর্যের দেখা নেই সকাল থেকেই,
যেন নিস্তব্ধ, দাঁড়িয়ে আছে বাড়িঘর পুরনো সভ্যতার আদলে।
বেলায়েত নিশ্চয়ই মা ভিলায় আছে এখনো-
আহাদ করোনা দুর্যোগের আগেই চলে গিয়েছিলো পাতার হাট,
আহাদদের মাছের আড়ত আছে বরিশালে,
শহর চুকে বুকে একেবারে চলে গেছে ব্যবসায়।


আনন্দধারা ব্রিজের কাছে আমাদের একটা আড্ডা হতো অবেলায়
আশ্চর্য, কেউ নেই এখানে,
তাহলে ওরা সব গেলো কোথায়?
ওরা কি জানেনা লকডাউন উঠে গেছে?
মা ভিলার মূল ফটক বন্ধ,
হারুন চাচা এখানকার দাড়োয়ান, তিনিও নেই,
মনিরের লন্ডি দোকান বন্ধ,
মনির অবশ্য চাঁদপুর থেকে হয়তো এখনো আসেনি।


বিশ্বরোডের ঢালে আমার ডাক্তার বন্ধু মিজানের চেম্বার
মিজানের দোকানের সাইন বোর্ডটি ভেঙ্গে গেছে,
শুধু মিল্লাহ ফার্মেসী দেখা যায়,
এটি আসলে বিসমিল্লাহ ফার্মেসী হবে,
বিশ্বরোডে একটি অস্থায়ী পুলিশের টেকপোস্ট,
পূর্ব পাশে যেখানে বসতো অস্থায়ী গরুর হাট
সেখানে সারি সারি নতুন কবর, এতো এতো কবর এখানে?
চারদিক নিস্তব্ধ, শুনশান
যেন ক্ষুধার্ত পেটে উপুর হয়ে শুয়ে আছে রাজপথ।


দুরে একটি এম্বুলেন্সের আওয়াজ
আজকাল এই বেদনাবিহ্বল ধ্বনিটি শুনেও আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়িনা
কারণ মৃত্যু হয়েছে আমার দিনের পর দিন।
আমার অনুভুতিগুলো খাবিখায় আর ফিরে আসে
এভাবেই কেটেছে আমার গত আড়াইটি মাস,
এর মধ্যে একদিনও গোধুলীতে আছাড় খাওয়া সুর্য দেখিনি।
আমি কি মরে গেছি?
না বেঁচে আছি?
আমি কি আটকে আছি শুন্যতার জালে?
আশপাশে কেউ নেই,
কার কাছে জিগাই এটি কোন উপত্যকা?