‘কে তুমি দাঁড়িয়ে বনপ্রান্তরে এই পড়ন্ত বিকেলে?
আঁধার ঘনাবে সহসা এখানে, বিপদ শ্বাপদের দেখা পেলে
চিবুকে তোমার দুরন্ত খেলে বিদায়ী রোদ্দুর
উদাসী তুমি, উতলা হয়ে কী খোঁজ, কেন এসেছো এত দূর?’


‘আমি যে খুঁজি সাহসী সে জনে, যে জন দিয়েছে আশা
খোঁপায় পড়াবে গভীর বনের রাস্নার ভালোবাসা
হিসেব মতে তার ফিরে আসাতে কিছুটা হচ্ছে দেরি
আমার জন্য সে ঝুঁকি নিতে পারে, তবে আমার কিসে তাড়াতাড়ি।’


‘কে হয় সে তোমার, এমন কষ্ট একাকী সইতে যায়?
বেশ হতো যদি  বুদ্ধি করে সঙ্গে নিতো হায়!
রূপসী তুমি নির্জন পথে একলা দাঁড়াতে নেই
চাও যদি তুমি বাকী সময়টুকু আমি সঙ্গ দেই।’


‘তোমাকে আমি দেখিনি কখনো, বিশ্বাস করি কোন ভুলে?
অমন অভয় সকলেই দেয় অবলাকে কাছে পেলে
ঠিক জানি আমি কথার ছলে সাহায্যে বাড়াবে হাত
সেই হাতখানি দানব হবে একটু গড়ালে রাত।’


‘সতর্ক থাকো বেশ, তোমার ভাবনা অমূলক নয় মানি
ভুল ভাঙ্গাতে দিয়ে ফেলি তাই আমার পরিচয় খানি
শুনেছো বুঝি ‘পরাণ বাউল’ গান গায় ঘুরেঘুরে  
সংসারটাকে ছেড়ে দিয়ে পৃথিবীর পথ ধরে
আমি সেই স্বভাব কবি, গীত বাঁধি মুখে মুখে
মানুষের যতো দুঃখ আছে, ঢাকি সুরের নরম সুখে।’


‘শুনেছি আমি তোমার গান কবিগানের আসরে
এই প্রথম দেখেছি তোমায় বিকেলের অবসরে
কতো কেঁদেছি তোমার গানে, মেতেছি উচ্ছল প্রাণে
ভাবিনি তোমার উদয় হবে এই বনের নির্জনে
ধন্য হবো ধরো যদি গান তোমার মধুর গলায়
কতো রমনী পথ চায় শুধু তোমাকে দেখার আশায়।’


‘হায় এ কী বল! অপবাদ পাবে শেষে
বন্ধু তোমার ফিরে এসে না তোমায় ভুল বুঝে বসে
পুরুষের গড়া এ সমাজে যদি পাণ থেকে চুন খসে
নারীর পায়ের শক্ত জমিন সহসা যায় ধ্বসে
আজ তবে চলি গান শোনাবো কোন আসরে দেখা হলে
স্রষ্টাকে ভেবো অকস্মাৎ কোন অশুভর দেখা পেলে।’


‘মিথ্যে বলেছি, কেউ সাথে নেই এই পথিমধ্যখানে
পাছে একা ভেবে তুমি অপমান করে বসো সজ্ঞানে
তোমাকে পেয়ে স্বস্তি পেলাম বাকি পথটুকু যেতে
ভুল বুঝোনা কবিয়াল তুমি আমাকে নেবে কি সাথে?
যদি হতে চাই চির সাথী, জীবনের চড়াই পথে
তোমার গানে সঙ্গত করি মন্দিরা নিয়ে হাতে?’


‘পরাণ বাউল না চেয়েই পায়, আবার প্রমাণ হলো
আস্থা যদি থাকে এতোটুকু না হয় সঙ্গে চলো
ময়ূরপুচ্ছ ভীষণ তুচ্ছ যদি না পেখম মেলে
সুন্দর তুমি সুরভিত হবে সুরের পরশ পেলে
এবার না হয় আস্তানা গড়ি, হবে বছর বছর মেলা
আখড়ায় ঠিক ভীড়বে এসে আমার ভাবের চ্যালা।’


‘এই ধরো হাত, সুর তোল সাথে, আজ প্রণয়ের গান গাই
অতীত ভুলে জীবন ভেলায় নিঃশঙ্ক ভেসে যাই
জীবন মধুর, হয়না সাধুর, কাঁটার ঘায়েই সুখ
তবু ভরসা, দুঃখসময়ে পেতে দেবে তুমি বুক
একতারা দিয়ে অমর করবো তোমার আত্মদান
অনাগত কাল ঠিক বেঁচে রবে প্রণয়সিদ্ধপ্রাণ।’


২৬-৫-১৯। রাত ৯-৪৮। সেনওয়ালিয়া