অনিবার্য কারণ বশত: আজ বিকেল টা মেঘলা থাকবে জেনেও
বেরিয়ে পড়েছে কাজল লতা।
এ দিক সেদিক ঘুরে চলে এলো পুরোনো পাড়ার দিকে।
এ পাড়াটা এমনিতেই চুপচাপ,
শুধু বৃষ্টি হলে গাছের পাতায় জল পড়ার শব্দ হয়
টুপ টাপ  টুপ টাপ।
বিস্টুদের দোতলা বাড়ির কারনিশ ছুঁয়ে আরো ওপরে উঠে গেছে
একটা মস্ত বড় লাল পেয়ারার গাছ।
সারাদিন সেখানে ব্যস্ততা,
কত শত পাখি, কত পিঁপড়ে, কত কাঠবেড়ালির নাচ।
উদয়াস্ত লাঠি হাতে বিস্টুর ঠাকমার সে গাছ পাহারা দেওয়ার বিফল চেস্টা।
তাতেও কি রক্ষে হয়? শেষ টা?
কাজল লতা হেসেই সারা,
বেমক্কা উড়ে এ পাড়া থেকে সে পাড়া।
তার খুব প্রিয় ঝাঁকড়া মাথার মস্ত বড় অর্জুন।
সারাক্ষণ তার ঘাড়ে বসে, মাথা নেড়ে নেড়ে, আজগুবি কত গল্প।
কাজল লতা বিশ্ব পাকা, সব বিষয়ে জানে অল্প স্বল্প।
আদর করে অর্জুন তাকে বলে,
ও আমার 'কাজল লতা' পাখি
বলনা তোকে আমার বুকের কোন কোটরে রাখি?


অর্জুন, ভারি মিস্টি ছেলে, মুখ চোরা, খুব লাজুক।
তার মন চাইত কাজল লতা, তাকে আরো, অনেক অনেক ভাল বাসুক।
প্রতিযোগী  ছিল শাল শিমুল, জারুল, দেবদারু।
কিন্তু সবাই কে হারিয়ে দিত ওই শ্যামলা ছেলে অর্জুন।
ওখান থেকেই কাজল লতার প্রেমের গল্প শুরু।


তারি সন্ধানে বেশ অনেক বছর পরে,
বিরহী কাজল মেঘলা বিকেলে আবার  এসেছে ফিরে।
অভিমানী অর্জুন কে দূর থেকে শুধু দেখবে,
গাছের আড়ালে পাতার ছায়ায় নিজেকে সরিয়ে রাখবে।


কিন্তু ও কি? কার দেহ ওটা?
কে দাঁড়িয়ে অমন কালো কাঠ হয়ে পুড়ে?
বজ্রাহত হয়েছে অর্জুন,
যে দিন কাজল গিয়েছে ছেড়ে।
তবু প্রাণ আছে শেকড়ের অনেক গভীরে।


সে যেন জানত কাজল আসবে ফিরে,
বসবে দু দন্ড স্থির হয়ে, তার বুকের ওপরে।


তাই ঠাই দাঁড়িয়ে ছিল সে এতককাল ।
এখন কোনো বাসনা নেই আর এ পোড়া দেহে ।
কেটে নিয়ে যাক মানুষেরা এসে টুকরো টুকরো করে
চিতায় জ্বালাক
অনাস্বাদিত মোহে।