পুরোনো বাঁশিওয়ালাকে শুধিয়েছিলাম সেই মেয়েটির কথা,
যে অজন্তার চিত্রমালায় বুলিয়েছিল আলতার রঙ।
আমোদিত বিকেলগুলো ভরে যেত ওর শিউলিপাতার গন্ধে-
টলিনালা দিয়ে বয়ে চলা যাওয়া কাগজের নৌকোকে দেখিয়ে বলেছিল
"শুনেছ,বেহুলারা আজও ভেসে যায় এই ভাবেই।
লখীন্দরের দেহখানা আঁকড়ে ধরে আজও বেহুলারা ভেসে যায় এভাবেই।
আজ স্বর্গ হঠাৎ মিলিয়ে গেছে কুয়াশামোড়া বাঁকে।"হাতখানি রেখেছিল আমার দুহাতে,
"পারো খুঁজে দিতে সেই পথ?সেই স্বর্গের পথ?"


রঙচটা মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে আছে খিদিরপুরের জাহাজি ঘ্রাণ।
দূরে চলে যায় সন্ধ্যার বালুকাবেলা চিরে ট্রেনের হেডলাইট,ঝিক...ঝিক...ঝিক...
এইখানেই তো আসতে বলেছিল সে,ঠিক দশ বছর আগের সেই বিকেলটায়।
এর মাঝে মরে গেছে কত নক্ষত্র,কত মাছি এসে বসেছে ভ্যানিলা গাছের সুবাসে-
মাঝে মাঝে স্বপ্নে এসে সে উঁকি দিয়ে গেছে,"কই,মনে আছে তো?ঠিক বিকেল পাঁচটা"।
"দাঁড়াও,দাঁড়াও,ঠিকানাটা..."আমার কথা মিলিয়ে গিয়েছে ঘুমের কর্পূরগন্ধা স্রোতে।


হ্যাঁ,স্বর্গের সন্ধান পেয়েছিল সেই মেয়ে।
যখন গলির মধ্যে হারিয়ে গেছে সারিন্দা হাতে সেই ভিখারীর গান,
যখন সুতো কাটা একটা অবাধ্য ঘুড়ি এসে বসেছে আমার ছাদের একাকী এন্টেনায়,
তখন সেই মেয়ে খুঁজে ফিরেছে স্বর্গের প্রথম কমলা আলো।
ভেবেছিলাম,সেই মেয়ে উন্মাদিনী।
নইলে কেই বা শহরের ভিড়ে মিশে সন্ধান করে সেই একান্ত নির্জনতাময় ঘাসফুলের চারার?
একদিন এসেছিল নৈ:শব্দের মাঝে,চুলে গন্ধ মাখিয়ে দিয়েছিল পারিজাত।
"পেয়েছি সন্ধান,"কি মায়াবী সে হাসি!"এসো...কি হল,এসো!"
ঘুম ভেঙেছিল প্রদীপ নিভে যাওয়া ঘরে।
"ঠিক বিকেল পাঁচটা..."


কেটে গেল কতগুলো দিন।আংটির ফাঁক দিয়ে গলে গেছে কত পাঁচটা বেজে যাওয়া বিকেল।
আজও শুধাই,"বাঁশিওয়ালা,কোথায় গেল সেই মেয়ে,ও বাঁশিওয়ালা?"


বাঁশির মেঠো ধুন আজ বড় তপ্ত হয়ে জমে আছে শহরের নীলচে শিরায়।