সাদা ফেনার মতো শ্যাম্পু যখন গড়িয়ে পড়ে নখের ডগায়,ঠিক মনে হয় পাহাড়ি পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা জরাজীর্ণ পাইনকে পাশ কাটিয়ে,একটা বরফের চাঙর এসে আটকে দিল গাড়ি চলার পথ।অবরুদ্ধতার বেয়াদপির সামনে সজোরে হর্ণ মারছে চালকরা,কিন্তু বিপুলা তাচ্ছিল্য নিয়ে দুপাশের পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকে,ঠিক আমারই মতো তার ম্যানিকিওর করা রাস্তাঘাটকে দেখতে দেখতে।
একরাশ তারাকুচির মতো ঝর্ণা নামে দুকাঁধে।নীলচে ধারায় পিঠের জ্বলন্ত গহ্বরের থেকে ওঠে অভ্রের ধোঁয়া-কতকাল ধরে জমে ছিল মেদকুঠুরীতে।জলের ভীষণ আদরের মাঝেই হাত রাখি বুকে।কতদিন পরে ধরলাম-সেই আগের মতোই নমনীয় মাটি,শুধু প্রখর রোদের বেলাটা যাক,নববর্ষার দ্রাক্ষাবন আবার বেড়ে উঠবে বৃন্তমূলের আনাচে-কানাচে।
এলোকেশী কন্যা তার চুল ছড়িয়ে দেয় ধূসর উপত্যকা জুড়ে,কিংবা চিনারের আগায় আটকে গিয়েছে যে মেঘ,তা নিংড়ে রাখাল বার করে রূপালি শস্য,ছড়িয়ে দেয় লীদার নদীর ছলাৎ স্রোতে।বৈঠাভাঙা আমার চুলের স্রোত হলকে হলকে নামে পিঠজুড়ে,ঠিক যেন কালো মেঘের ছায়ায় ঢেকে গেল বনপুকুরের টলটলে মুখখানা।
মেঝের ফাঁকফোঁকর থেকে বলাকার মতো ওঠে ধোঁয়া।আবছা নৃত্যবিভঙ্গ-তালে তালে ভেসে ওঠে চায়ের প্রথম উত্তাপের শরিক হয়ে,শ্বাস ভারী হয়ে আসে কটিদেশের বুনো গন্ধে-যেখানে দূর্বার উন্মুক্ততায় চড়ে বেড়ায় পাঁচটা বাদামী ছাগল,তাদের গলায় বাঁধা ঘণ্টা সূর্যের আলোয় ধিকিধিকি জ্বলে।
সাবানের গায়ে জলকণার কি অদ্ভুত এক কণ্ঠহার!প্রথম অশ্রু ঝরেছিল যেমন আইসিসের চোখ থেকে,মিশরের রৌদ্রক্লান্ত বালিয়াড়ি ভিজেছিল ঐশ্বরিক শীতলতায়,জলকণার বর্ণচ্ছটা ঠিক যেন কৃষ্ণগহ্বর থেকে নির্গত নীহারিকাস্রোত।
ইতিহাসের বালুকণাদের মতো মুছে ফেলি জলবিন্দুদের,আমার আদিম নগ্নতার বেলাভূমি থেকে।পরের বর্ষার জন্য চাতকের মতো মাধবীবিতান অপেক্ষা করছে নাভিমূলে,দুজোড়া অব্যর্থ ঠোঁট আপাতত শুষে নেবে আমার নারীত্বকে,বিরহী পাখির মতো।আমার ঘাড়ে,ঠোঁটে,কপালে লেগে থাকবে তার আদরের তপ্ত প্রশ্বাসজাত রোদ।
আদর,আরো আদর করো আমায়।অতল কালো আদরে ডুবিয়ে স্নিগ্ধ করে দাও আমার বোধিবৃক্ষ,আমার চেতনামূল,আমার ছোপানো নীল আসমানি মেজাজ।