প্রিয়, কেমন আছো তুমি?
আমায় মনে পড়ে তোমার?
স্মৃতিতে বিদ্যমান আছি কি আমি তোমার?
স্বপ্নে আসি কি আমি তোমার?
ব্যস্ততার প্রান্তে স্মরণে আসি কি আমি তোমার?
একটু বেশীই আশা করে ফেলছি বোধহয়
যেমনটা আগে করতাম,
আশা তোমাকে কাছে পাবার,
তোমার সঙ্গে থাকবার,
তোমার ভালোবাসা অর্জনের,
আদর প্রাপ্তির,
তোমার সহিত অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর,
তোমার সংসারে সুখের আধার হবার,
তোমার জীবন আনন্দময় করে তুলবার নিমিত্ত হবার।
জীবনটা পার করে দিয়েছি আমি
কেবলই তোমায় ভালোবেসে,
শুধুই তোমার প্রতি অনুগত থেকে,
তোমার অপেক্ষায় থেকে।
কেউকে তোমার মত ভালোবাসতে পারিনি,
ভালোবাসতে চাইনি,
কেউকে নিজের কাছে আসতে দেইনি,
কেউকে বিশ্বাস করতে পারিনি,
সংসারী হইনি,
কারো ঘরের লক্ষ্মী হতে পারিনি,
জননী হতে পারিনি,
নারীদেহের সম্পূর্ণতা অনুভব করতে পারিনি,
পারিনি নারীজন্মের সার্থকতার স্বাদ গ্রহণ করতে।
ওগো, কি কমতি ছিল আমার ভালোবাসায় যে
তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসতে পারনি,
আমায় কাছে ডাকতে পারনি,
বারংবার দূরে ঠেলে দিতে তোমার একটুও বাঁধেনি,
আমার চলে যাওয়ায় তোমার কিছু যায় আসেনি,
আমার নিখোঁজ হওয়াতে তোমার উদ্বিগ্নতা হয়নি,
আমায় ফিরিয়ে আনতে তোমার সামান্য ইচ্ছে পর্যন্ত হয়নি।
আমি তো ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা চাইনি
চেয়েছিলাম একটু মায়া,
তোমায় বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাইনি,
চেয়েছিলাম তোমার একটু পরোয়া,
তোমায় অন্য কারও হতে বাঁধার কারণ হতে চাইনি,
চেয়েছিলাম কেবলই মানুষ হিসেবে তোমার একটু দয়া।
আজীবন এটা ভেবেই কাটিয়েছি
আমি কি এতটাই অযোগ্য ছিলাম যে
তুমি আমাকে মূল্য দিতে পারনি,
আমার অনুভূতিকে সম্মান করতে পারনি,
আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে গ্রহণ করতে পারনি,
পারনি আমার অনুরোধের বিনিময়ে একটু সান্ত্বনার বাণী শোনাতে।
হয়ত আমি তোমার মনের মত ছিলাম না
তোমার বিস্তৃত পরিধির অংশ হবার যোগ্য ছিলাম না,
তোমার দৃষ্টিতে ত্রুটি মুক্ত ছিলাম না,
ছিলাম না তোমার চোখে সৌন্দর্যের অধিকারিণী,
কিন্তু আমি তো একজন মানুষ ছিলাম,
যে তোমায় শুধু তোমায় ভালোবেসেছে,
তোমার সকল প্রয়োজনে তোমার পাশে থাকতে চেয়েছে,
নিজের সবকিছু তোমায় উজাড় করে দিতে চেয়েছে,
তোমার জন্য জীবন দিতে সদা প্রস্তুত থেকেছে।
সব জেনেও তুমি আমায় কদর করতে পারনি
যাতে আমি ক্ষতবিক্ষত হয়েছি,
কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি,
তোমার অবহেলায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছি,
তথাপি কিছু বলতে পারিনি,
তোমার উপেক্ষায় হৃদয়ে রক্তক্ষরন অনুভব করেছি,
পরন্তু কষ্ট ভাগাভাগি করিনি,
তোমার জন্য আজীবন কেঁদেছি,
কিন্তু নয়ন অশ্রুসিক্ত করিনি।
আজ আমার পৃথিবীতে শেষ দিন
আমার সকল কষ্ট লাঘবের দিন,
তুমি হীনা জীবনটা আমার কেবলই ছিল কর্মময়,
খ্যাতি পেয়েছি, যশ পেয়েছি,
শুধু তোমার সঙ্গ পাইনি,
কর্মগুণে ভালোবাসা পেয়েছি, কদর পেয়েছি,
কেবল তোমার সমাদর পাইনি,
কর্মস্বীকৃতিতে পরিবারের নাম উজ্জ্বল করেছি,
শুধু তোমার জীবনের আলো হতে পারিনি,
কর্মব্যস্ততায় সকল বেদনা সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করেছি,
পারিনি কেবল তোমায় ভুলে যেতে।
তুমি ছাড়া আমি বেশীদিন বাঁচতে চাইনি
চেয়েছিলাম মৃত্যু অবধি নিজ গুণে মানব কল্যাণসাধন,
কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সময়টা চলে আসবে ভাবিনি,
আমার সম্মুখে আছে আমার মা,
সেটা তো আমি চাইনি,
সন্তান হারাবার যন্ত্রণা দিতে চাইনি।
মাগো, তোমায় আমি সুখ দিতে পারিনি,
কিন্তু আজ তোমায় সব থেকে বড় আঘাত দিয়ে যাচ্ছি,
আমার একাকী জীবন যাপনের সিদ্ধান্তে তুমি যে কষ্ট পেয়েছ,
তা কমানোর চেষ্টা করিনি,
নিজ সিদ্ধান্তের অটলতা থেকে বেরোতে পারিনি,
উপরন্তু তোমার সব থেকে বড় কষ্টের কারণ হতে যাচ্ছি,
তোমার হাসির কারণ হতে পারিনি,
তথাপি তোমার আজীবন কান্নার কারণ হতে যাচ্ছি।
মাগো, আমায় ক্ষমা কোরো,
তোমার যোগ্য মেয়ে হতে পারিনি বলে,
আমায় মাফ কোরো,
নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে ডুবে থেকেছি বলে,
মার্জনা কোরো,
অনিচ্ছাকৃতভাবে তোমায় নরক যন্ত্রণা দিচ্ছি বলে,
পারলে আমায় বিদায় দিয়ো,
আমার দেয়া সকল আঘাত ভুলে যেয়ে।
প্রিয়তম, বিদায়
ভালো থেকো তুমি,
মনে রেখো,
সারাজীবন শুধুই তোমায় ভালোবেসেছি,
তোমার প্রতীক্ষায় থেকেছি,
তোমার মঙ্গল কামনা করেছি,
আমার সকল প্রার্থনায় তোমায় স্মরণ করেছি,
তোমায় চিরসুখী দেখতে চেয়েছি,
তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করেছি,
তোমার মৃত্যুর পূর্বেই আমার জীবনাবসান চেয়েছি।