একটি মেয়ে আছে
নামটা না হয় উহ্যই থাক,
থাক অন্তরালে তার পরিচয়,
একটি অতি সাধারণ মেয়ে,
যার স্বপ্ন আছে কিন্তু আশা নেই,
যে ভালোবাসতে জানে তথাপি আকাঙ্ক্ষা নেই,
যে পরোয়া করে অথচ যার যত্ন নেই,
যে কদর করে পরন্তু যার সমাদর নেই।
শৈশবে সে ছিল দুরন্ত
শিশুসুলভ দুষ্টুমিতে ভরপুর,
সকলের আহ্লাদে আহ্লাদিত,
আলাপচারীতা ছিল যার নিজস্বতা,
সকলকে আপন করে নেয়া ছিল যার নিপুণতা,
কৃতকর্মে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি ছিল যার যোগ্যতা,
সকলকে মাতিয়ে রাখা ছিল যার সক্ষমতা,
শিল্পচর্চা ছিল যার দিনপঞ্জিকা।
সব বেশ ভালই চলছিল
জীবনে এলো বয়ঃসন্ধি,
অনুভূত হল দৈহিক এবং মানসিক পরিবর্তন,
হঠাৎ হল তার এক আত্মপোলব্ধি,
বোধগম্য হল শারীরিক সৌন্দর্যের এক উপাদানের অপ্রতুল উপস্থিতির,
শুরু হল তিরস্কারের,
অপরিচিত হতে লাগল প্রিয়জনেরা,
চিন্তিত হতে লাগলো সে তার অযোগ্যতার কথার স্মরণে,
সর্বক্ষণ ভাবনা তার অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের,
প্রশ্ন তার শারীরিক কমতির অগ্রাধিকার হেতু,
মানসিক আঘাত প্রাপ্তির প্রয়োজনীয়তার,
ব্যথিত সে তার অর্জিত গুণাবলীর বিস্মরণে,
সিদ্ধান্ত তার অন্তর্মুখিতার আগলায়নের।
সদা চঞ্চলতার অবসান ঘটিয়ে আজ সে নীরবতায় বিশ্বাসী
নিভৃতে সময় কাটানো যার স্বভাব,
বচন তটস্থতা যার প্রকৃতি,
রক্ষণশীলতা যার স্বরূপ।
অন্তর্মুখীতায়ও সে সদা হাস্যোজ্জল
আড্ডায় প্রানবন্ত,
বিশ্বস্ত সঙ্গীর সহিত কথোপকথনে আত্মবিশ্বাসী,
আশ্বস্ততায় সে অনুভূতি প্রকাশে আগ্রহী,
নিশ্চয়তায় সে ব্যক্তিগত ইচ্ছে প্রকাশে ঐচ্ছিক।
তবে স্বল্পবচনে সে অনেকের কাছেই নিন্দার পাত্র
আত্মকেন্দ্রিকতায় সে ভুল বুঝাবুঝির কারণ,
নিশ্চুপতায় সে অপমানের পাত্র,
প্রচারবিমুখতায় সে অযোগ্যতার প্রতীক,
সমালোচনাবিমুখতায় সে অবহেলার শিকার,
পাল্টা আঘাতে অবিশ্বাসে সে উপেক্ষার বস্তু,
প্রত্যাশাহীনতায় সে অকৃতজ্ঞতার অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ।
তার ভাবনা সব কষ্টের মূল তার ব্যক্তিত্বের গঠন
তার স্বভাবসুলভ অপ্রকাশ্যমানতা,
তার অনর্থক লাজুকতা,
তার অপ্রয়োজনীয় স্পর্শকাতরতা।
সে বুঝতে পারে তার সঙ্গে নেই আনন্দ
তার নৈকট্যে নেই ভালোবাসার অনুভব,
তার দূরত্ব বৃদ্ধিতে নেই বিষাদের ছায়া,
তাকে আটকে রাখাতে নেই প্রচেষ্টা,
তার অবিদ্যমানতায় নেই আশাভঙ্গ,
তার ব্যাকুলতায় নেই আস্থা।
তাই তার সিদ্ধান্ত সকলকে মুক্তি প্রদানের
বন্ধনের শৃঙ্খল ভাঙ্গনের,
সকল দায়িত্ব হতে অব্যাহতির,
সকল দোষারোপের অবসানের,
নিজ কাধে সমস্ত দায়ভার গ্রহণের,
সকল পরিস্থিতি একাকী মোকাবিলার,
একলা পথ চলার।
তার কিছু অব্যক্ত ইচ্ছে ছিল
প্রিয়জনদের কাছে থাকার,
তাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার,
তাদের নিত্যসঙ্গী হবার,
তাদের সকল প্রয়োজন মিটানোর সর্বাত্মক চেষ্টার,
নিজ গুণে তাদের নির্মল আনন্দ প্রদানের,
তাদের আদর-যত্নে ভরিয়ে দেবার।
সে আজ শুধু কাজ করে যায়
কর্মগুণে সর্বজনবিদিত হবার জন্য,
অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়,
কর্মক্ষেত্রে কাজের দ্বারা গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য,
আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়,
ক্ষণস্থায়ী তথাপি তাৎপর্যপূর্ণ জীবন যাপনের,
নিঃস্বার্থ দান করে যায়,
বৃহত্তর কল্যাণসাধনের জন্য,
সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে,
ব্যক্তিগত গ্লানি ভুলবার জন্য।
সে আজ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নিরুদ্বেগ
সে বুঝে গেছে সুখ তার কপালে নেই,
ব্যক্তিগত জীবন সমৃদ্ধি তার ভাগ্যে নেই,
একান্নবর্তীতা তার অদৃষ্টে নেই।
তার একটি আকাঙ্ক্ষা আছে
পুনর্জন্ম লাভের,
যে জন্মে সে হবে তার একান্ত আপনজনদের ভালোবাসার যোগ্য,
তাদের প্রত্যাশা পূরণে দক্ষ,
তাদের পছন্দসই হয়ে উঠতে পারক,
তাদের সান্নিধ্য লাভের উপযুক্ত,
তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তি লাভে সমর্থ,
তাদের স্নেহের দাবিদার,
তাদের হর্ষময় জীবনের অংশীদার।