অরাজকতা বিষণ্নতার হাত ধরে
ধীরে ধীরে সাম্রাজ্য বিস্তার করছিল ধারণায়, মনে


নীরব ওলিগলি, বড় রাস্তার অচেনা ভীড়,
নির্জন গৃহের গাঢ় অন্ধকার স্রোত
আকুল হয়ে উঠেছিল, আঁকড়ে ধরবে বলে।


ঘুমহীন বিছানায় বর্ণবিহীন অলীক ঋণাত্মক ছবি
ভেসে উঠছিল দুর্বল চিন্তায়।
আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরছিল,
সাহস করে বলতে পারছিলাম না কাউকে।


আসরে থেকেও অনুপস্থিত, সব শুনেও বধির,
সব দেখেও না দেখার ভান
অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল,
যেন বহুরুপী শত্রুরা প্রতিশোধ নিচ্ছিল প্রতিক্ষণে,
জীবনের প্রতি বাঁকে জমা হচ্ছিলো অসফলতা, ব‍্যর্থতা ভিন্ন ক্ষেত্রে।


হীনমন্যতায় ক্রমাগত হেরে যেতে যেতে
মেনে নিতে শুরু করেছিল যে হয়তো এমনই হওয়ার ছিল আর
হাত থেকে সময় বেরিয়ে যাচ্ছিল জলের মতো।


অন্য রাতের মতোই গম্ভীর ক্লান্তে স্তব্ধ রাতের নীরবতা ভেঙে গৃহে প্রবেশ করেছিল যে,
তাঁর হাতে ছিল জ্বলন্ত প্রদীপ।
কী অদ্ভুত, সিলিংফ‍্যানের হাওয়ায় সে প্রদীপ নিভছিল না,
সেই প্রদীপের আলোয় দেখি, তাঁর দৃষ্টিহীন চোখে ছিল জল, কান থেকে বইছিল রক্ত আর ঠোঁটের হাসিতে ছিল গভীর স্তব্ধতা,
স্তম্ভিত চোখে চেয়ে ছিলাম নিস্পলক।
অতঃপর তাঁর স্পর্শের অনুভূতিতে ছিল অসীম সহানুভূতি ভালবাসা বিশ্বাস আর প্রদীপের আলোয় ছিল প্রেরণা, প্রতিবন্ধকতাকে বন্ধু করে এগিয়ে যাওয়ার তেজ, সহ‍্যের সীমায় দাঁড়িয়ে যন্ত্রণাকে আপন করা শক্তি।


চোখ খুলে যেতেই দেখি অমানিসায় মোড়া গৃহে কোনো প্রদীপ জ্বলছিল না, কোথাও কেউ ছিল না,
তবে বেশ বোধ করছিলাম যে মন গভীরে কোনো বিশৃঙ্খলা ছিল না, কোনো অন্ধকার ছিল না।


শুধু বিস্মিত ছিলাম, যে তাঁর এ কেমন আবির্ভাব আমার হতাশার অন্তরে,
এ কেমন ইতিবাচক অনুভূতির সঞ্চার করে গেলেন আমার বিষণ্নতার পাশে।


সত‍্যিই তাঁর জীবন দৃষ্টির ক্ষমতা সীমাহীন নিরন্তর,
আসলে সে যে ঈশ্বরের অনন্যা সন্তান,
দৃষ্টি শ্রবণ শব্দ ছাড়াই সে জিতেছিল ভালবাসা, মন
আর তাঁর চরিত-কথার প্রভাব আমার অবচেতনে
স্পষ্ট করেছিল সেই রূপ।


অবশেষে বুঝেছিলাম অন্ধকারের উৎস হতে
ঈশ্বরই হয়েছিলেন হেলেন কেলারের প্রতিনিধি।