বিছানায় কান পাতলে শোনা যায়
বিদগ্ধ জৈবিক ইচ্ছের আর্তনাদ।
যন্ত্রণায় ছটফট করে। নিষেধাজ্ঞা মেনে কাটে রাত।


বুকে কান পাতলে শোনা যায় কান্না,
জাপটে ধরে বুকের ভেতরেই সীমিত।
দোমড়ানো-মোচড়ানো অন্তরাত্মা থেকে
বেড়িয়ে আসে ভেজা দীর্ঘশ্বাস।


স্বপ্নে কান পাতলে শোনা যায় অপ্রাপ্তির অভিযোগ।
স্বপ্নের জগতে দুঃস্বপ্নের রঙ মেখে
সং সেজে ঘুড়ে বেরায়,
সজাগ ঘুমে টুকরো টুকরো হয় স্বপ্নের রেশ।
স্বপ্নিল রাতগুলো রয়ে গেছে
ফেলে আসা ছেলেবেলার সাথে।


ঘড়ির কাঁটায় কান পাতলে শোনা যায়
খরস্রোতা সময়ের বয়ে যাওয়ার শব্দ।
বয়ে গেছে বহু নিজেস্ব।
বেড়েছে ধৈর্যের বয়স, বেড়েছে বলিরেখা।
স্তব্ধতা হয়ে উঠেছে প্রকৃত প্রাপ্তবয়স্ক।


নিশুতি রাতে দুলন্ত উইন্ডচাইমের শব্দে
কান পাতলে শোনা যায়,
মুখস্ত স্মৃতিদের বিদ্রূপ হাসি।
গভীর আলিঙ্গনের উষ্ণতায় ছিল নিবিড় স্নিগ্ধতা,
এই যেন সেদিনের গল্প।
শিশুর মতো দিনগুলো ছিল সরল নির্ভেজাল,
বাস্তবতা থেকে বহু দূরে।


রাত জাগা কুকুরদের চিৎকারে
কান পাতলে শোনা যায়
এলাকা দখলের লড়াই।
ঘর ভর্তি সফলতা সত্ত্বেও, লড়াই চলে সমানতরে।
প্রলোভিত সুখ দখল চায়, বাকি সব অনর্থক।


বেড়ালের গোঙানিতে কান পাতলে শোনা যায়
অশনি সংকেত।
মারণ রোগের বিষ ছেয়ে গেছে সম্পর্কের
শিরায় শিরায়।
নীরাবতা ও সমঝোতার অদ্ভুত টানাপোড়েন।
উভয়পক্ষের চক্রব‍্যূহ যাপন - মুক্তি চায়, মৃত‍্যু চায়।


দূর থেকে ছুটে যাওয়া দূরপাল্লার ট্রেনের শব্দ
শীতের রাতের নিস্তব্ধতা পেড়িয়ে
কানে এসে নির্দেশ দেয় -
কোনো অচিন দেশে নিরুদ্দেশ হতে।
কিছু মুখ, মুখ চেয়ে বাঁচে চিরকাল।
কিছু না মেলা হিসেব-
সমাধান চায় না, কৈফিয়ত চায় না।
হাতছাড়া হয় নিরুদ্দেশ হওয়ার ট্রেন।


চেনা শহরের অচেনা ভিড়ে কান পাতলে শোনা যায়
প্রতিযোগিতার ঘোষণা।
নিয়ম ভেঙে ছুটতে ছুটতে খেয়াল করে,
পাশে কেউ নেই। জিতছে না হারছে?
উত্তর মেলে না।
ক্লান্তির পাতে পরিবেশন হয় ঘৃণা।
ঝাপসা দৃষ্টিতে মেঘ জমে,
ক্ষণিক বৃষ্টিতে ভিজে যায় প্রতিযোগীর অস্তিত্ব।
ভুল গুনতে গিয়ে চুলে পাক ধরে, আর
অচেনা পর হয়ে ওঠে চেনা পর।