শ্রীচরণেষু বাবা -
যেদিন হতে শিখেছিলাম
একটু একটু করে বুঝে নিতে পরিবার সংসার,
সমাজে চলার কিছু নিয়ম কানুন আর আরোপিত ফরমান,
জেনেছিলাম বড় বাঁচতে চাইতে তুমি এই ইহ জীবনকে,
ঋজু এক উন্মুক্ত উদার মন নিয়ে,
হেসে খেলে সম্মানে সকলের মুখে হাসি দেখে ।


পার হয়ে আসা ঐ কিছুটা সময়েই আমি করেছি হৃদয়ঙ্গম ,
সময়ের কঠিন শিকলবেড়ি আর তার খামক্ষেয়ালিপনাগুলো -
দেয়নি তোমাকে ওরা গাঁথতে জীবনের মালাখানি কাঙ্খিত সুগন্ধ সৌরভে ।
ক্লান্ত তোমাকে দেখেছি চার্মিনার বা বিড়ি হাতে বিছানার কোনে -
ওগরানো ধোঁয়ার একরাশ ধোঁয়ার কুন্ডলিতে !
বাবা - আমি যে বড় ছেলে তোমার,
তখন নিতান্ত এক পড়ুয়া আমি ভালই বুঝতাম,
তবে খুঁটিতে বাঁধা বাছুরের মত,
সে সময় ছিলাম বড় অসহায় নিতান্ত অপারক এক দর্শক হয়ে।


কালে কালে বদলেছিল পালা হয়তোবা অনেকটাই,
তুমিও নিয়েছ তার কিছু সুঘ্রাণ,
হয়ত কিছুটা আবার নিয়েছিলে বুক ভরে নিঃশ্বাস আঁধারে জোৎস্নার রেশ ।
কিন্তু আমি জানি হাসতে পারনি তুমি, ঠিক যেমনটি তুমি চাইতে এ' জীবন,
তোমার সেই পছন্দের 'দূর শুয়োর' কিংবা 'বুইঝলি নিকি' বলা
'হা হা' সেই প্রাণখোলা হাসি আর হাসতে পারনি তুমি অতঃপর ।


তবুও চলতে হয় তাই বুঝি চলা
আর তারই মাঝে একদিন কিন্তু চলেই গেলে তুমি
সব ঋজুতা গরিমা গ্লানী গচ্ছিত রেখে আজব এই দুনিয়ার বুকে,
বাঁচার এই কৃচ্ছতাকে নীরবেই উপহাস করে ।
বাবা - কতগুলো বছর মায় যুগও অতিক্রান্ত আজ।
হয়ত অনেক ভালও আছি - ওই বাহ্যিক আড়ম্বরে,
খাদ্য বস্ত্র আচ্ছাদনে সুরক্ষিত থেকে ।


কিন্তু বাবা -
আজ আমিও যে হাসতে পারিনা ঠিক আমার মত করে,
ভাবনাগুলোকে পারিনা আমিও রূপ দিতে যেমনটা চাই ।
কেন এই অকারণ প্রতিবন্ধকতা ?
ছুটেছি যৌবনে কত বেগবান হয়ে জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যমে,
আজও ছুটি তবে বড় ক্লান্ত হয়ে -
ধূসর জীবনকে টেনে জীবিকার থালা হাতে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে,
মুখ আজ প্রায়শই হাসে নিয়মের ভাঁজে,
অন্তরে নিয়ম রক্ষার বোঝা, বেদনারা বারবার পিছু হতে টানে ।
বড়ই হাসতাম আমিও একদিন, বিরক্তি হত যেই গোমরা মুখগুলো দেখে,
আজ আমিও বোধ হয় সেই একই পংক্তিবদ্ধ আর এক রামগরুঢ় !
কারা যেন হাসতে দেয়না আর আমাকে প্রাণ খুলে, মুখ চেপে ধরে।


বাবা - একি এক চক্রবৎ পরিব্রাজন নাকি কোনও অভিশাপ ?
নাকি ঋজু থাকার প্রচেষ্টায় আমারও এই দন্ডভোগ, প্রাপ্য উপহার?
আজ আমিও যে ক্লান্ত বড় , কিছু ব্যথা ক্রমেই জমে ওঠে বুকে।
সুকোমল উদ্যোগী মনকে দেখি আজ বড় অসহায় -
আচ্ছাদনহীন ঊষর এক আগ্রাসী জীবনমরুর ইচ্ছাধীন হয়েছি শিকার ।


বাবা - চলে যাব আমিও একদিন
সব বেদনা অভিমান নালিশগুলো রেখে ঠিক তোমারই মতন ।
তবে অন্তরের নিভৃত হতে চাই আগামীর এই সবুজ পৃথিবী হোক -
জাতি বর্ণহীন, শোষণ ও ধর্ম রাহাজানিমুক্ত,
হোক প্রকৃত স্বাধীন সভ্য এক সুশোভন চারনভুমি।
_________________________
অমিতাভ (১২.৪.২০১৭)