বেশতো ছিলাম অঙ্গে মেখে ইচ্ছেমত সুখের ধুলোবালি ,
অবাক বিস্ময়ে দেখে মাথার ওপর ভেসে চলা -
নীল আকাশের গায় উড়োজাহাজ থেকে ছোঁড়া সাদা পেঁজাতুলোর সারি ।
বেশতো ছিলাম ছোট্য দুপা ভিজিয়ে ঘাসে শীতের শিশির মেখে ,
ভোরের সোনারোদ লাগিয়ে খড়ের গাদায় গা এলিয়ে
জড়িয়ে গায়ে কল্কা আঁকা সুতির চাদর - আটপৌরে নীল সবুজ ।


দেখেছি চাঁদ তারা আর দুর্গাবাড়ি
জড়িয়ে মাকে আদরমাখা তার আঁচলখানি ধরে ।
অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে দালান কোঠাবাড়ি, নাটমহল, আর ওদের ।
বেশ লাগত ওই সুদুর হতে দেখতে ওদের বিলাস ব্যসন বৈভবের পসার ।
ঘুমিয়েছি রাতে স্বপ্নসুখে পরীর দেশে ডুবে ,
মায়ের হাতের অমৃত স্বাদ আধখানা ডিম ঝোলে ভাতে উদর পুরে খেয়ে ।
বেশতো ছিলাম সেদিনগুলোয় উড়িয়ে ঘুড়ি নীল আকাশে টুকরো মেঘের সাথে ।


স্বপ্ন ছিল চোখে - দেখব পুজো ছুটব সবাই করব হুড়োহুড়ি ,
অবাক হয়ে দেখব রাতে রঙ তুলিতে পটুয়াদের হাতে -
ঊঠছে ফুটে জাগ্রত ঐ দুর্গা সরস্বতী ।
চুমুক দেব গাছ থেকে নামিয়ে আনা কুয়াশা ভোরের টাটকা খেজুর রসে ।
মত্ত ছিলাম কাঁচের গুলি লাট্যু নিয়ে দীঘির জলে দস্যিপনা করে,
মজে ছিলাম চোখ লাগিয়ে দুপয়সার ঐ বায়স্কোপের ঢাকনা খোলা কাঁচে ,
বেশ তো ছিলাম হেসে খেলে ইজের প্যন্টে খালি পায়ে দৌড়ে সবুজ মাঠে ।


কালে কালে বদলে গেল কতইনা আজ ওরা
আমারও আজ অধিকারে দেখি -
ফ্রিজ টিভি এসির সাথে শীত তাপনিয়ন্ত্রিত গাড়ি বাড়ি ফরাস!
আবার মাঝে মধ্যে ফাইভ স্টারে ভোজনও হয় সারা,
কখনও বা একটু ভ্রমণ - বিদেশও যে ঘুরি !


তবে কোথায় সে সুখ -
মায়ের আঁচল, সবুজ মাঠে হুড়োহুড়ি, ঘুড়ির পিছে দৌড়?
তুলসী তলায় সাঁজবাতি আর শঙ্খধ্বনি ধুপ?
শীতের দিনে সন্ধ্যাবেলায় হ্যরিকেনের ঐ আধো আলো আধো ছায়ায় -
চাদর কাঁথা মুড়ি দিয়ে চৌকিতে আড্ডা!


সত্যিই আজ ভাবি বসে কখন যে সব বদলে গেল ওরা,
আর বুঝি কেউ জানবেওনা সেই আনন্দ সুখ ধরার ।
কালের গর্ভে আজ ওরা সব - শূন্য এ' হৃদয়,
উড়ো মেঘ ওই যায় যে সরে ছায় সে ঘন মেঘে ।
_________________________
অমিতাভ (২.৫.২০২১) গৃহকোণ