দিনগুলো কালের সাথে সাথে
পরিবর্তন হলো, অবাক করা পরিবর্তন।
রয়ে গেল সেই পুরনো ক্যালেন্ডারে এক কোণায়,
আদরে ভালোবাসা মাখানো দিনগুলো।


জীবনের আগামী দিনগুলো তে
শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে
নতুন মাসের সাথে আলিঙ্গন হয়।
এক এক করে ত্রিশ টা দিন পেছনে ফেলে
এলেম, শুধু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে,
এগিয়ে রইলো সময়।


দিন চলে যায় থেমে থাকে না,
ভাবতে গেলে খুব বোকা বোকা লাগে নিজেকে।
খুব হাসি পাই সেসব ভেবে,
স্কুলের প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য
বন্ধুদের সাথে কত ঝগড়া,
কত মান অভিমান হতো,
সহজ বা কঠিন বাকযুদ্ধে বা হাতাহাতিতে হেরে
শেষমেশ পেছনে বসতে হলেও,
জীবনের পথের প্রান্তে
তাঁরাই সামনে-পেছনে থাকে।
টিফিন পিরিয়ডে একসাথে কথা বলতাম।
আর যেটায় হোক সেসব
বন্ধু-বান্ধবীরা সাথেই ছিলো,
পাশে ছিলো, ছিলো কোন একদিন
সাক্ষাৎ না হওয়া গল্পের মাঝে।
কি অদ্ভুত ব্যাপার, কালচক্রে ক্রমান্বয়ে
সেসব বন্ধুগুলো হারিয়ে গেলো।


অবাক পৃথিবী তে এখন শুধু লড়াই,
শুধু লড়াই হয় দেশের প্রখ্যাত
বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ টেনে নিজেকে দেখানো।
আমরা লুকাতে ভালোবাসি,
পরবর্তী তে প্রকাশিত হবার জন্য।
নিজের অবস্থান নিজেকে তৈরি করা
এখন একাই লড়তে হয়।
মা বাবার সোজাসাপটা উত্তর
মুখোমুখি শুনতে হয় নিজেকে শুধু প্রতিষ্ঠিত করা।


স্কুল থেকে আসতে না আসতেই
খেতে না খেতেই অপেক্ষায় থাকতো
খেলাগুলো, কত খেলা বাকি,
মা বাবার বকুনির ভয়ে
বন্ধুরা নিস্তব্ধতায় এসে করতো চুপটি
করে ডাকাডাকি।
খেলা খেলা খেলা..!!
কত খেলা খেলতাম তখন জীবনের সাথে,
আর আজ খেলা খেলতে হয়
এই পুরো জীবনটাকে নিয়ে।


খেলার মাঝে হাসাহাসি ঝগড়াঝাটি
খুব ঝামেলা কম হতো না,
টাকা না থাকলে কোন রকম একটা
চকলেট পেলেই বন্ধুরা মিলেই ভাগ করতাম।


এখন রাস্তায় পড়ে থাকা
কত পথশিশু কত ভিক্ষুক ভিক্ষুণী
হাত পেতে চাই ভরাট করে দিতে।
খুব একটা দয়া বা সহানুভূতি হলে
এক বা দুই টাকার ঊর্ধ্বে হাত উঠে না।
কি আর করবো এই পৃথিবী.!
অন্যকে নাকি দান করতে হয়
নিজেকে ফকির না করে।


আর এখন পকেট ভর্তি চকলেট থাকলেই
ভাগ বসানোর মানুষও নেই পাশে,
নেই ঝাপটা দিয়ে কেড়ে নিয়ে খাওয়ার বন্ধুগুলো।
তখন জ্যোৎস্না রাতের তারার মেলায়
বলতে পারতাম কোন তারা টি আমার আপনজন,
হুমম আজ মনেও পড়ে না
শেষ কখন খোলা আকাশের নিচে হেঁটেছি,
দু-চোখ ভরে আকাশ কবে দেখেছি।


আসলেই বন্ধু বান্ধবী মানেই সেসবগুলো
যাদের আমরা অজান্তেই হারিয়েছি,
ছেলে নাকি মেয়ে ওসব ভেবে তখন
বন্ধুত্ব হতো না।
আর এখন বন্ধু বান্ধবী তাদেরকে বানায়
যাদের নাম থাকে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড।
খুব সুন্দর নামগুলো তাই না?
শুধু তুমি আর আমি
এর মধ্যে কোন তৃতীয় ব্যক্তির আগমন
সম্পূর্ণভাবে প্রেম আইনে নিষিদ্ধ।
এই আবেগের আইন টা যে কৃত্রিমভাবে গড়া
আমাদের আধুনিক যুগের।
তাদের ঘিরে সবটুকু,আবেগের অমর প্রেম,
এখন তো সবকিছু জুড়েই ওরায়।
সত্যি,আসলেই সত্যি হলো
সময়ের সাথে সাথে বিশালতার
পরিবর্তন চোখে দেখছি, বদলেও গিয়েছি অনেকটা।


এখনতো নিজেকে সোস্যাল মিডিয়ায়
পরিচিত করবার জন্য প্রকাশ করি।
কত অজানা বন্ধু বান্ধবী,
ওমা..!!! বলতে না বলতেই হাজার হাজার
ফ্রেন্ড ফলোওয়ারস চলে আসে।
আর যখন একা থাকি,খুব একা
তখন কেউ পাশে এসে শান্তনা দেয় না,
কথা বলার পর্যন্ত কাউকে কাছে পাই না।
এখন আমরা খুব প্রায়োরিটি দি
ফেইসবুক ওয়াটসআপ ফ্রেন্ডদের।


কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে
যখন ফেইস টু ফেইস হঠাৎ দেখা হয়,
সেসব হারিয়ে যাওয়া বন্ধু বা বান্ধবী দের সাথে,
দেখেও চোখের আড়ালে,
পাশ কাটিয়ে চলে আসি, এড়িয়ে যায়।
জানি না, আসলে জানি না মনের মধ্যে
কি চলছে? আত্মগোপন রেখে
আত্ম অহংকার নাকি এর চেয়েও
বেশি কিছু, জানি না।
খুব একটা তো ক্ষতি বা ক্ষয় হবে না
যদি হাসিমুখে কথা বলি।
কেমন আছো?
কথাটা জিজ্ঞেস করতেই পারি
সামনা-সামনি দেখা হলে,
কি পারি না?


কথায় আছে,
"দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও জীবন পাল্টাতে বাধ্য
জীবন খুব সুন্দর সাবলীল হবে"
এই কথাগুলো না, সোস্যাল মিডিয়ায়
যখন তখন, যেখানে সেখানে, যেভাবে সেভাবে
অহরহ নানান ভাবে নানানজন প্রকাশ করে।
বড় বড় অক্ষরে অক্ষরে প্রকাশ করে,
তাদের ওয়ালে বা টাইমলাইনে।
হুমম, যখন ওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়
তখন টাইম টা বেলাইনে চলে যায়।


কিন্তু বাস্তবে আমরা কেমন প্রকৃতির??
সময়ের বদল,মানুষের বদল,মনের বদল
বদলে যায়, বদলে যায়।
ছোট বেলার শৈশব কৈশোরের আদুরে
দিনগুলো পেরিয়ে আজ বড়বেলা পেলাম।
সূর্যেরও সময় আছে অস্ত যাওয়ার,
এই বড়বেলাও একদিন হারিয়ে যাবে,ফুরিয়ে যাবে
তখন এই আফসোস-আক্ষেপ নিয়ে কি করবো??
তা কি আদৌ আমরা জানি??
**********************
১৬ই ডিসেম্বর ২০২১ইং।