আজ আমার বন্ধু বান্ধবীরা আমায় দেখতে
এসেছে, অনেক বছর পর,
বলা যেতে পারে ছোট্ট পুনর্মিলন।
ওদের নাকি ভার্চুয়াল জগতে
আর ভালো লাগছে না,
সোস্যাল মিডিয়ায় কি আর সব অনুভূতি গুলো
প্রকাশ করা যায়,
তাই সবার সাক্ষাত সান্নিধ্যে আসা।
তারা ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে ও
গল্প করতে এলো,
অগোছালো একা ঘর আমার।
পুরনো বন্ধু বান্ধবী মানেই,
বুঝতেই তো পারছো কি বলতে চাইছি।


খুব মজা হবে আজ,ভালো লাগছে তাদের দেখে।
পুরনো সবকিছু উৎকৃষ্ট হয় একটু বেশি।
এই যেমন ধরো---
পুরনো গান, পুরনো কথা, পুরনো প্রেম,
পুরনো কাপড়, পুরনো বেয়াদব দুষ্ট মিষ্টি
বন্ধু বান্ধবী গুলো, আর আমাকে খুঁড়ে খুঁড়ে
খাওয়া সেসব পুরনো স্মৃতি,
যা তুমি দিয়ে গেলে।
তুমিও যে আজ পুরনো তালিকায় নাম লেখালে।


ওদের শুরুতে ই হাসাহাসি কথা বলা,
আমি গেলাম তাদের জন্য চা বানাতে,
আমার হাতের চা তাদের খুব একটা অপ্রিয় না।
রাতুল আর মনি চেঁচিয়ে উঠে বললো,
আরে তুই কই,তাড়াতাড়ি চা নিয়ে আয়।


আমি দূরে থেকে নিশ্চুপ হয়ে তাদের চেহারা দেখছি,
তাদের হাসি-ঠাট্টা লক্ষ্য করছিলাম,
ওদের দেখে কত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
ওদিকে হঠাৎ আমার ডায়েরিটা
মিমির চোখে পড়লো,
হাতে নিয়ে পড়া শুরু করে দিলো।
মেয়েটি এমনি, যে কারো লুকানো ব্যক্তিগত
জিনিস ধরতে ও পড়তে ভালোবাসে।
ও মেয়েটার বিশেষ আকর্ষণ থাকে
অন্যদের ডায়েরী এবং প্রেমপত্রে,
সেই কলেজ জীবন থেকেই।
আজ-ও বোধহয় স্বভাব টা পাল্টাতে পারে নি,
শত বাঁধা দিলেও মানবে না মেয়েটি, সে ধরবেই।
তাই আজ আর বাঁধা দেওয়া শোভা পায় না।


তোমার দেওয়া ঐ পুরনো ডায়েরিতে,
যার ঘুমন্ত পৃষ্ঠায় শুধু তোমায় নিয়ে আঁকা আঁকি,
তোমায় নিয়ে লেখালিখি।
খুব করে আগলে রেখেছি এখনো।


কথায় আড্ডায় সবাই তাদের কেন্দ্রবিন্দু তে
আমাকে রেখেছে, আমি নাকি তাদের খুব প্রিয়।
শুধু তুমি ব্যতীত,ওদের কাছে আমি অনন্য।
কথায় কথায় মনি'র একটাই অভিযোগ
আমি নাকি চুপচাপ স্বভাবের হয়ে গিয়েছি,
আগের মতো মন খুলে কথা বলা, দুষ্টামি করি না।
অন্যদিকে রাতুল বলে,
উড়নচণ্ডী ছেলেটা আজ নিরামিষ জীবন্ত প্রাণী।


তুমি আমাকে ক'টা বই উপহার দিয়েছিলে
একটা বই খুলে দেখি হাঁটু অবধি জল,
পড়তে পড়তে শেষ পৃষ্ঠায় দেখা হলো
তীর হারা নদীর ঢেউয়ের সাথে,
কিছু সময় পর সেই ঢেউ গুলে সাগরে মিশে যাবে।
তুমি তো উদ্ভিদ বিদ্যায় সিদ্ধহস্ত
সেখানে আমি পথ হারিয়েছি,
গাছগাছালি প্রচুর পরিমানের ভিড়ে।
বন-জঙ্গলের ভেতর রবিরশ্মি দেখা যায় না,
এমন আলোর প্রতীক্ষায় থেকে,
নিজেকে অন্ধকারে ডুবালাম।


ঝর্ণা তোমার খুব পছন্দ ছিলো,
এখন অবশ্য সেই পছন্দ টা
অন্যের ধারে সমর্পণ করেছো কি না জানি না।
ঝর্ণা ধারায় ভিজতে ভালো লাগতো।
তবে যতদূর জানি,
এক মস্ত বড়ো হৃদয়ে তোমার ঝর্ণা ধারায়
জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে, থামতে চায় না,
কভু থামতে একটুও চায় না।


তোমার দেওয়া অগণিত বইগুলো তে
আমার স্পর্শ ছিলো, আজ-ও আছে।
তবে জানো কি.?
শুধু তুমি আমার স্পর্শের বাইরে।
সবকিছু তে আজ দু-দু মরুভূমি
গভীর পর্বত মালা তৈরি হলো,
দিনের সূর্য দিক দিগন্তের এপাড় থেকে ওপাড়ে
আলো ঠিকই দেয়,
শুধু সে আলোর প্রতিবিম্ব আমি পায় না,
অনেকদিন হলো তো ভোরের আলো গায়ে
আসে না।


আমার ঘরে ছোট্ট লাইব্রেরী তে অধিকাংশ
তোমার দেওয়া বই, ধুলো জমতে একটুও দিইনি।
লাইব্রেরী দেখে বন্ধুরা নানান
প্রশ্নের তীর ছুঁড়ছে আমায়,
আমি পারি না তাদের সাথে হাসি খুশির বাক যুদ্ধে।
ওদিকে আমার ডায়েরী পড়ে
মিমি'র নিশ্চুপ নিস্তব্ধতা
একমাত্র আমিই বুঝেছিলাম।


সে আর যাইহোক,অসাধারণ মুহূর্ত কাটালাম আজ
কফি হাউজের তথাকথিত দুষ্ট মিষ্টি স্মৃতির সাথে।
বন্ধু বান্ধবীরা সন্ধ্যাবেলা যখন
বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলো,
দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে মিমি।
জিজ্ঞেস করলাম কিরে, কি হয়েছে তোর?


ততক্ষণে চোখের জল টলোমলো,
কেমনজানি মোম গলিয়ে পড়ছে তার চোখ থেকে।
যাওয়ার পথে ও আমায় বললো,
" নীল, তোর একাকিনী কেমন আছে আমি জানি না,
তবে তুই খুব ভালো থাকিস, নিজেকে ভালো
রাখিস রে, তোর লেখা ডায়েরী টা অনুমতি হীন পড়ার জন্য
আমি খুব দুঃখিত "


আমি হেসে হেসে বলছিলাম,
বাহ্..!!!
আমাদের মিমি ম্যাডাম আজ অনেক
বড় হয়েছে...!!!!!
অবশেষে আমার একাকী ভালো থাকাটা,
একমাত্র আমার কাঁধেই রয়ে গেলো।
**************★**********
০২/০২/২০২২ইং