পৃথিবীতে হাজারো সম্পর্কের ভীড়ে
তোর আর আমার সম্পর্ক একদম পারফেক্ট ছিলো।
যেসব থাকলে সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়
সে-সবকিছুই ছিলো, তবে বেশি ছিলো ইগো
নামের শব্দটা।


এ-যাবৎ কোন কিছুতেই পারফেকশন দেখি নি
বলে তোকেই পারফেক্ট জানলাম।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতি কারক
সেই অভিজ্ঞতা আমার একটুও নেই।
ঠোঁটের কালিমা তোর অপছন্দ বলে
তাই আর এই জনমে অভিজ্ঞতাটা নেওয়া হলো না।
বরং জ্ঞাত হলাম যে, ইগো ব্যাপারটা কতটা
ভয়ংকর ও ক্ষতিকারক সম্পর্কের মাঝে।


হুমম  ইগো,
আমাদের দূরত্ব টা যোজন যোজন
ফারাক বুঝিয়ে দিচ্ছে তোর অনুপস্থিতি তে
ঐ ইগোর ও সময়ের কারণে।
তুই হয়ত জানিস তারপরও জানায়,
খুব গভীর সম্পর্ক আমাদের চোখে
মেঘ আর বৃষ্টির। জল্পনায় কল্পনায়
চিকন বিনি সুতোয় বেঁধে রেখেছে কেবল তাদের
একে অন্যকে। বাস্তবতা কি জানিস.?
বাস্তবতা খুবই অদ্ভুত যে,
আকাশে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা হলেও
প্রতীক্ষা ঠিকই থাকে বৃষ্টির আশায়।
পরন্ত যখন বৃষ্টি শুরু হয়, কেউ মনে রাখে না,
মনে রাখে না কেউ মেঘের কথা।
এসব তো, কে, বা কারা,
কি কি ভাবছে না ভাবছে সেই বর্ণনা মাত্র।
এসব কিছুতেই মেঘ ও বৃষ্টি ধার ধারে না।


কথায় আছে,
""যে তোমার তাকে ছেড়ে দাও,
যদি সত্যিই তোমার হয়ে থাকে,সে অবশ্যই তোমাতে ফিরবে""
এসব কথা মনে জায়গা দেওয়া যায়,বল.?
আসলে ছেড়ে দিলে কি,ছেড়ে দেওয়া যায়.?
মন কি ছাড়তে জানে.?
আসলে যারা এসব কথা বলে গিয়েছেন,
তারাও ছাড়তে পারে নি।
কোনসময়,কোনদিন তাদের মনের বাতায়ন খুলেছিলো
একান্ত স্মৃতির আড়ালে
থেকে যাওয়া এমন মানুষটির জন্য।


তবুও মন আছে বলেই
আজ অনন্যার মন দোটানায়,
হ্যাঁ আমার আর অনন্যার সম্পর্কের
ভাঙ্গনের মেয়াদকাল দুবছর পূর্ণ হলো।
মেয়েটির মনে মনোহাওয়া অধিদপ্তর
কি জানালো, কোনো সংকেত দিলো কি না
তা আমি জানি না।
তবে যতটুকু বুঝতে পারছি,
মুঠোফোনে উদ্‌যাপন করতে
এবং কিছু বলতে চেয়েছে আজ।
কিছু কথা হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া মেঘের
ঘন ঘটায় বৃষ্টি হয়ে ঝরিয়ে দিচ্ছে তার হৃদয়ে।


সেদিন বাসা থেকে বের হলাম তোর পছন্দের
পাঞ্জাবি পড়ে। আমার অতটা ভালো লাগে না,
তারপরও পারফিউম টা মেখেছিলাম
শুধু তুই বলাতে।
যদিওবা রাতে ফোনে ফোনে আমাকে সাজিয়ে
দিয়েছিলি তাই সকাল বেলা সাজলাম।
খুব মুশলধারে বৃষ্টি পড়ছিলো সেদিন,
তোর যে সময়ের জ্ঞান প্রবল তা আমার জানা।
কিন্তু সময়ের স্রোতে যে আমাকে ভাসতে হবে
জানতাম না রে, ফোনটা কেটে দিয়ে প্রমাণ
করেছিস, তুই আর আমার নেই।
কলের পরিমাণ বেড়েছে ঠিকই,
তবে তোর ঐ কয়েক ডিজিটের নাম্বার টা বন্ধ রইলো,
সময়ের বাঁধনে তুই আটকে গেলি।
জানিস, মুহূর্তেই রাস্তাটা আমার ভীষণ অপরিচিত মনে হলো।


ভেবে দ্যাখ,
রাগ ভালোবাসা মান অভিমান ঝগড়াঝাঁটি
এসব তো কমতি ছিলো না সম্পর্কের মধ্যে।
পার্কে এক সিটে পাশাপাশি বসে হাসিঠাট্টা,
পলকবিহীন দু'জন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকা,
ঠোঁটের লেপ্টে মাখানো আইসক্রিম খাওয়া,
এসব স্মৃতি গুলো আর মনে রাখতে মন চায় না,
ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সব ভুলে গিয়েছি একদম।
সব ছেড়ে গিয়েও আবার কেন মনে
করিয়ে দিতে চাইছিস যে,
কিছু একটা ছিলো আমাদের মধ্যে।


যে আমি লাভ ম্যাটেরিয়াল প্রেমিক নই
সে আমাকে তুই তোর করে নিয়েছিলি,
কোন একদিন একাকী পরিচিত রাস্তায়
হাতে হাত রেখে চিরকাল থাকবি বলে।
হুমম আজ আছি তো, আছি তবে তোর হয়ে নয়।
অন্যের শাড়ির ভাঁজে, শাড়ির আঁচলে আমায়
মুড়িয়ে রেখেছে যত্ন করে।
দীঘল কালো কেশ বাহুতে স্নিগ্ধ পরশ দেয়,
বেশ ভালো আছি, খারাপ আমায় একটুও রাখে নি।


রাত এক'টা কিংবা দু'টো বাজে তখন,
একটি ফোন এসেছিলো আমার মোবাইলে।
মৃত্তিকা রিসিভ করে হ্যালো বলাতে
কয়েক সেকেন্ড পর কেটে দিলো।
পরের বার হয়তো ফোনের ওপাশ থেকে
সব দ্বিধা কুণ্ঠা ছেড়ে আবার কল এলো,
আমি রিসিভ করি,
নিজেই পরিচিত পুরনো নাম্বার চিনে নিলাম,
হ্যালো বলে জিজ্ঞেস করলাম,


আমি- কিরে কেমন আছিস?
তুই ঘুমাস নি, এতরাত হলো জেগে রইলি যে.?
অনন্যা- না,,,মানে,,,ইয়ে,,,সরি,,,!!!
আমি অনন্যা তুই চিনেছিস আমায়.??
আমি- হ্যাঁ চিনবো না কেন,
অতো সহজে পুরনো কণ্ঠ কি ভোলা যায়,তো কিছু বলবি.?
অনন্যা- না আসলে হয়েছে কি, ঐ ভুলে
তোর একাউন্ট টা আমার মোবাইলে লগইন করা ছিলো,
আমিও ভুল করে তোর একাউন্ট থেকে
দু'টো গল্পের বই অর্ডার করে ফেলেছি।
এখন সীমিত সময়ের অফার পেলাম তো,
তাড়াহুড়োয় অর্ডার করে দিলাম।
তাই এখন আর ক্যান্সেল করার সুযোগ ও নেই।
তাই বলছিলাম যে,,,
তুই কি,, একটু কাইন্ডলী বইগুলো রিসিভ করতে
পারবি.?? আমি পেমেন্ট করেছি।
কি আর করবো রে,আই এম সরি,.!!
পারবি তুই.?


আমি- অনন্যা তুই এত রাতে এই কথাটা বলার জন্য
ফোন করেছিস, নাকি কিছু বলতে চেয়েও
ভুলে গিয়েছিস.?
আর তোর গলায় এত জড়তা কেন.?
অনন্যা কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকার পর বললো--
অনন্যা- হ্যাঁ রে, আমি এটাই বলার জন্য তোকে
এত রাতে ডিস্টার্ব করলাম, কিছু মনে করিস ন।
আমি- কিছু মনে করার দিনগুলো পার করে এসেছি রে,
আর নতুন করে কিছু মনে করতে চায়ও না।
ঠিক আছে, ভালো থাকিস তুই,
বইগুলো পেয়ে যাবি, ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।


এই বলে পুরনো কণ্ঠের সাথে
কথোপকথন সমাপ্তি হলো।
অন্যদিকে মৃত্তিকা ভেজা চোখ নিয়ে
আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
তোমায় খুব ভালোবাসি আমি,
তুমি শুধুই আমার হয়ে থেকো আর কিছু চায় না।
আমি হেসে বললাম, ভয় নেই পাগলী,
আমি তোমারি আছি আজীবন।
আসলে মেয়ে মানুষ তো,
যাকে ভালোবাসে, তাকে পুরোটা জুড়েই বাসে।
অন্যের উপস্থিতি একদম মেনে নিতে পারে না।
মৃত্তিকা এখন আমার এক বিশাল পৃথিবী।


হুম আজ আমার জন্মদিন,
বরাবর নিয়ম করে অনন্যা আমাকে অনেক
বছর পর হয়তো শুভেচ্ছা
জানাতে চেয়েছিলো আজ।
কিন্তু মৃত্তিকার কণ্ঠ শুনে,
অনন্যার কথার স্বর ও বিষয় পরিবর্তন।
এমন করে অগণিত না বলা চাপা কথা রয়ে যায়,
থেকে যায়, মনের গহীন বালুচরে,
এসব স্মৃতি উঁকি দেয় বাস্তবতার উপসংহারে।
^^^^^^^^^******^^^^^^^^******
৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং