-আকাশে নবমীর হেলানো চাঁদ
পাতায় পাতায় ভয়ঙ্কর রুপালী কারুকাজ
আছে নিস্তব্দ কোলাহল,
প্রকৃতির বিষণ্ণ আয়োজন।
-ক্লান্তির হাত ধরে বহু আগে ঘুমিয়ে গেছে
এই গ্রামের ছমির মুন্সি।
তার শীর্ণ হাতের তর্জনী এক মুঠোয়
জড়িয়ে ধরে আছে ছোট্ট ঘুমন্ত মেয়েটি।
-বৃদ্ধ সরাফত মিয়া এখনো কেশে যাচ্ছে
অনবরত, বিরক্তিতে কুঞ্চিত ভ্রু বাড়ির কর্তা
ছেলেটির, সমর্থন যুগিয়েছে গৃহবধূর অবজ্ঞায়
মুখ বাঁকানোকে। বৃদ্ধ সরাফত তার কিছুই জানেনা।
-জোনাকিরা আলো জ্বেলেছে রাতের ঘাস ফড়িঙের জন্য।
সেই পথ ধরে হেঁটে চলেছে মঘা কোরবান, হাতে তার
ধারালো কোঁচ আর কাঁধে বেটজাল। কিছু মাছ যে আজ
পেতেই হবে, ঘরে তার চার মাসের পোয়াতি বউ।
-পরান মাঝি চেয়ে আছে ভাঙা ঘোলা চাঁদটির দিকে,
হাতে তার ধাবমান বইঠা আর চোখে এক ছলাত রুপালী জল।
মহাকালের কি এক বিষণ্ণতা গ্রাস করেছে তাকে;
এই ঘোলা চাঁদই কি তার কারণ ?
-আনু চোরা বিশাল এক ফন্দি এঁটেছে আজ
মাঝরাতে বড় এক দাঁও দিবে আমিন হাজীর সদনে;
হাজী ফিরেছে গত হপ্তায় হজ সেরে।
তেলের শেষ বিন্দুটিও আনু মেখেছে আঙুলের ডগায়।
ক্যাংডা শরীর তার জবথব তেলের বাহার।
দুয়ারে ঠেস দেয়া শাবলের মাথাখানি
চকচক করছে আনুর তৈলাক্ত শরীরের মতই।
হাজীর সম্পদে আজ এক অনধিকার ভাগ পড়ে গেল।
-চোখে ঘুম নেই হারু মোক্তারেরও
মাথায় মামলার মিথ্যা প্যাচের গ্যাজাল।
মামলার মিথ্যা সাজাতে সাজাতে
মাথা বড় সেয়ানা হয়েছে হারুর।
মহারাজা বলা যাবে তারে নিশ্চিন্তে
মিথ্যা বানের রাজ্যে।
-ঘুম নেই আরও একজনের চোখে,
মনা শেখের ছেলের বউ শিউলির।
স্বামীর চিন্তায় এক রাতে কেটে যায় তার শত সহস্র রজনী।
শহর ফেলে এসেছিল মানুষটা গত বর্ষায়।
এই ছ মাসে সিথানের বালিশটি কতবার আদ্র
হয়েছে শিউলির চোখের জলে,
সে খবর কে রাখে ?
-ধনু শেখের কলেজ পড়া ছেলে মানিকের
কি হলো কে জানে ?
ঘুমের মধ্যে কি সব আবোল তাবোল বকে,
দিনের চোখেও শুধুই উদাসীন।
ভালোবাসার মত কঠিন ব্যাপার ধরেছে বোধহয়,
নতুন যৌবনের প্রথম বান, মেয়েটা কে ?
-তারু হারামজাদা আজও বৌ টাকে মেরেছে
আহা! বেচারি এই অল্প বয়সে মার খেতে খেতে
পিঠখানা শক্ত হয়ে গেছে তক্তার মত।
মুখখানা বালিশে গুঁজে বৌটা পড়ে আছে
অথর্বের মত।
নাক দিয়ে ঝর ঝর রক্ত ঝরছে অনবরত।
টকটকে জবা রঙ ধারণ করেছে সিথানের বালিশটা।
চোখের জলের নোনা স্বাদ মিশে এক হয়ে গেছে
রক্তের নোনা স্বাদে।
তারু দাওয়ায় বসে এখনো ফোঁস ফোঁস
করছে বন্য শুয়রের মত।
-মাঝরাতের আনন্দ-বেদনা, সুখ আর বিষণ্ণতা
বড় অদ্ভুত।
দিনের আলোর সাথে নেই তার কোন যোগাযোগ।
গ্রামের এই মাঝরাত বড় রহস্যময়।
পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঘুপরি অন্ধকার
এক একটি রহস্যের কোঠর, ঘোলা চাঁদ তারে দিয়েছে ইন্দন।
নিশাচরের চোখে আছে আলোক রহস্য।
-মাঝরাতের মানবমন এত রহস্যময় এত অদ্ভুত!
কি আছে এই আঁধারে ?