ভোরের আলোয় হঠাৎ দেখি তোমায়-
       শিয়রপানে দাঁড়িয়ে আছ।
প্রতিটি দুর্বাঘাসের আগায়, বিন্দু বিন্দু মুক্ত ছড়িয়ে,
ঘুম ভাঙালে।   বাইরের আলো এখনও চোখ মেলেনি,
   সূর্যটা এখন, তোমার টিপের মত লাল
মানিয়েছে সুন্দর, আকাশের কালো কপালে।


স্নানের পর তোমার ভিজে চুলের থেকে ফোঁটা ফোঁটা...
শিশিরগুলো নিঃশব্দে ধানের শিষে,   পাতার-
         ডগা বেয়ে, শুকনো মাটির বুকে।
     পোষা মোরগগুলো আজ হয়ত ছুটি নিয়েছে।
     কিংবা তোমায় দেখে, মুগ্ধ চোখে-
         পাথর হয়ে, ডাকতে ভুলে গেছে।।


  সন্ধ্যাবেলা দূরে কোথাও, সেই ভোরে ঘর ছেড়ে বেরনো,
        একঝাঁক নাম না জানা, অচিন পাখি-
   কিঁচির মিচির করে উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল।
     হঠাৎ সব নিশ্চুপ, তোমার শিঞ্জনে-
      আমার মত, তারাও আত্মহারা।


গন্ধরাজ আর হাস্নুহানারা, আজ তাদের
এসেন্সের দোকান খোলেনি, খুলবেও না আর-
তোমার প্রতি হিংসায় না মুগ্ধতায়, বোঝা দায়।
      পরে বুঝলাম,   তোমার শরীর থেকে...
      তাদের অহংকার দর্প করেছ চূর্ণ-
      আপন শাখা হতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,
      স্বীয় মৃত্যুকে তারা করেছে বরণ।
তুমি তবুও এক এক করে মাটি থেকে-
গন্ধরাজ আর হাস্নুহানাদের, শবদেহগুলো
তোমার নরম হাতে, সযত্নে তুলে রাখতে আঁচলে।


খরস্রোতা নদীও আজ, সফেন ও ঢেউ বিহীন;
অনেক দূরের বাঁকে, দিগন্ত রেখা ব্যাপী-
       আকাশের সাথে নদী, এখনও সঙ্গমরত।
তোমার মত দুর্বার, তাদের আপন গতির ধারা-
          আমার মতই আপনভোলা ওরা।



দূরে সভাইপুরে,   তার আদিঅন্তহীন বাওড়ে,
     অগনিত বৃহৎ বৃহৎ পদ্মপাতার উপর
  হাজারো, পদ্মখরিশ যুগলের, উন্মত্ত প্রেমালাপ-
  পদ্মমধূলোভাগত মধুমক্ষীকাদের প্রলয় নাচন,
বিষাক্ত মধুমক্ষীদের, বিষাক্ত হুল্ সারা শরীরে...
   পদ্মখরিশদের, ছুঁচের থেকেও তীক্ষ্ণ দাঁতের
    বিষাক্ত ছোবল উপেক্ষা করে,     আমি-
লক্ষাব্দের পর লক্ষাব্দ ধরে, সভাইপুরের  বাওড়ে-
উথাল পাথাল করে,     সাগর মন্থন করে,
        খুঁজে চলেছি, না পাওয়া অবধি
        বিরামহীন, মৃত্যুহীন।    আমি-
   খুঁজে চলেছি, তোমার চুলে, গুজে দেব বলে,
      পূর্ন বিকশিত একটা,    গাঢ়  নীলপদ্ম।।
------------------------------x----------------------------------