দীপান্বিতা, তোর পেটের কাছে
আমার দন্তক্ষত কি আজও আছে?
ভালোবাসা হা-হুতাস, বসন্তের দীর্ঘ্যশ্বাস।
আমার ছাদের আকাশ থেকে
তোর আকাশে যাবো-
কিন্তু মধ্যে যে আরেকটা ফাঁকা আকাশ
তারে ক্যামনে সরাবো।
থাক সেসব...
পুরনো কাথা কি আর, একটি বারও পড়বে মনে।


মনে আছে তোর, একসাথে কতগুলো দিন গেছে কেটে,
হাতধরে হাঁটতাম-আমি রেললাইনে, তুই ফিসপ্লেটে।
তোর লিপিস্টিকের দাগ লাগা, সেই জামাটা-
যত্ন করে আলমারিতে...
রাতের বেলা জালনা ধারে, তপ্ত বাতাস ধাক্কা মারে
কতগুলো জোনাকি ঢুকেপড়ে মশারিতে।


আমি এখন চোখ খুলে ঘুমাই
চোখ বন্ধ করলে তুই আমায় বড্ড জ্বালাস
তোর লেখা চিঠি, শুকনো গোলাপ,
তোর সাথে দেখা সিনেমার টিকিট,
তোর খাওয়া চকলেটের র‍্যাপার...
আমার ঘরে, আমার বুকে মিউজিয়াম...


আমার পছন্দের সেই কালো জামদানিটা-
এইতো সেদিন তোর কাজের মেয়ে...
শর্ত ছিলো, ও শাড়ি যে পরবে তাকে,
বাসবো ভালো সারা জীবন-
তাই বলে কি, এখন আমি!ঐ কাজের মেয়ে...


তোর পিঠেতে খোলাচুলে মেঘ ঘনাতো
আমার ছাদে আর বৃষ্টি হয়না, বুকের মাঝে খরা-
জন্মদিনে আমায় দিলি এক মস্ত বড়ো পুতুল,
বললি, পুতুলের মধ্যে তোর প্রাণ রয়েছে।
আমি যদি কোনো দিন, তোকে ভালো না বাসি
পুতুলটা যাবে বুড়ি হয়ে-
এখনও রোজ পুতুলটাকে খুব আদর করি।
পুতুল এখন পূর্ণ যুবতী।
ও: বলতে ভুলে গেছিলাম
পুতুলটারও পেটের কাছে
এক মস্ত দন্তক্ষত আছে।


তোর ব্যবহারি সেই গন্ধ রুমাল
গন্ধে আজও ভরিয়ে তোলে এ ঘরটাকে
কালো দিঘির পাড়ে, আমার কাঁধে মাথা রেখে
বলেছিলি, তুই যদি কোনোদিন
আমাকে ভালো না বাসিস-
সেদিন সুর্যটা নিভে যাবে।
কিন্তু প্রতিদিন, সাকালে তো সুর্য ওঠে
তাহলে, তুই কি আমাকে এখনও...


কেন গেলি চলে? এই কথাগুলো বলে-
“ছোট্ট বেলায় সবাই রান্নাবাটি খেলে-
ছোট ছোট হাঁড়ি-কুড়ি আর বাসন কোসন নিয়ে
বড়দের মতো সংসার সংসার খেলে, মিথ্যেকরে,
পরদিনেই আবার তারা অন্য খেলা খলে।
যদিবা খেলে রান্নাবাটি, তবে অন্য কারো সাথে।’’
খেলা শেষের বেলায় বলে গেলি,“সংসার খেলবো-
অন্য কারো সাথে। যেমন করে বাচ্চারা খেলে।’’
আর বললি –
“কাঁদিস কেন? তুইও না হয়, খেলিস অন্য কারো সাথে।’’
আচ্ছা, যার সাথে তুই খেলবি বলে গেলি,
তার সাথে কি এখনও খেলিস, না কি অন্য কারো সাথে!
আমি ঠিক করেছি, রন্নাবাটি আর খেলবো না।
সংসার সংসারও আর খেলবো না-
কারোর সাথে না। তুই আবার খেলতে এলে, তাও না।
সত্যি বলছিস, দীপান্বিতা, তোর পেটের কাছে,
আমার দন্তক্ষত আজও আছে!


------x-------