বেয়াল্লিশটা বছর পেরিয়ে গেল
সেই কবে, শুকিয়ে পচে-গলে মাটির সাথে
মিশে যাওয়া সেই ডুমুর গাছ;
স্মৃতির মণিকোঠা থেকে বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে,
জীবন্ত দেখতে পায় গৌতম।


অনিমিখ্‌ মধু যামিনী, এই ডুমুর গাছ তলায়
গৌতমের বুকে মাথা রেখে অর্পিতা,
সাজিয়ে দেখিয়েছিল, কত শত স্বপ্ন বাসর।
আজ নিজের উপর বড় আফশোস হয় গৌতমের
কেন যে সেদিন বোঝেনি এই অম্বরবিদারিভিদ
সিংহমহল, শুধু যে তাসের ঘর।


একটু সাহায্য ভিক্ষা করেছিল অর্পিতা।
নিজের সাফল্যের মই হেলায় তুলেদিয়ে,
তার গোঁড়া শক্ত করে ধরে দাড়িয়েছিল গৌতম।
যতক্ষন না সাফল্যের চুড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছায়, অর্পিতা
সাফল্যের আকাশে উঠে, কোন্‌ এক সাদা মেঘে ভেসে
উড়ে বেড়ায় আকাশ জুড়ে।
শুষ্ক নয়নে, গৌতম তাকিয়ে দেখে-
তার মেঘে ভেসে আসা যাওয়া,
পোড়া মাটির বুকেতে দাঁড়িয়ে।


ভরা বসন্তের কোন এক রাতে
জানালাগত জ্যোৎস্নালোকে,
দেবী ভিনাসের মনুষ্যাকৃতি মনে হত-
ঘনকাকার স্থূলকায় অর্পিতাকে। তার নশ্বর তনু,
তার প্রতিটি ভঙ্গিল ভাঁজের অতল গহ্বরে
ডুব দেওয়া, দিয়ে ভেসে ওঠা, সুউচ্চতম প্রান্তে-
তার কোমলতা বেয়ে।
কখনও বা হারিয়ে যাওয়া বিভাজিকার গিরিখাদে।


দক্ষিনের জানালাদিয়ে এখনও জ্যোৎস্না এসে পড়ে,
গৌতমের বিছানাতে।
চন্দ্রিমালোকের হাত ধরে, শূণ্য বিছানায়
খুঁজে চলা – একটু উষ্ণতার ছোঁয়া।
কত শত নদী, মাঠ ঘাট, সকল তন্ন তন্ন করে,
গৌতম খুঁজে চলে, সেই একটুখানি ছোঁয়া,
একটুখানি সেই উষ্ণতা।
ছোঁয়া ও তার উষ্ণতা তো অনেকই পাওয়া যায়-
কিন্তু তাতে সেই আবেশ কই, কই সেই আগুন।
অতঃপর আবার সেই উষ্ণতার সন্ধান...


পূর্ণশশধরাচ্ছন্নালোকে, এক মধু যামিনীতে, এই ডুমুরতলায়-
অর্পিতা এসেছিল ভেসে, মেঘের ভেলায়
সে দিন ফাগুন মাস,   শুক্লপক্ষের প্রথমা;
বলেছিল এই গাছে যেদিন ফুল ফুটবে,
সে ফিরে আসবে চিরতরে।
শুধু সেই ‘‘বিকালে ভোরের ফুল” এর অপেক্ষা করতে।
এই বেয়াল্লিশটা বছরের অপেক্ষা, কালের গর্ভের ভীড়ে,
বিলীন হল শশীগ্রাসী কত নষ্টেন্দুকলা।
অর্পিতা কি মেঘের ভেলা থেকে
মুখ ঘুরিয়ে দেখেছিল কোনোদিন-
গৌতমের আকাশে আর চাঁদ ‎ওঠেনা,
ওর আকাশে এখন শুধুমাত্র কৃষ্ণপক্ষের দ্বিতীয়া।


সেই কবে, শুকিয়ে পচে-গলে মাটির সাথে
মিশে যাওয়া সেই ডুমুর গাছ;
এখনও রোজ সার জল দিয়ে চলে তার পরিচর্যা।
গৌতমকে কে বোঝাবে-
ও ডুমুর গাছ আর বেঁচে নেই,
ও গাছে আর ফুল হবে না, ও গাছে ফুল হতে পারে না।


গৌতমটাও আর, সুনীল বা জীবনানন্দ হয়ে উঠল না,
নীরা বা বনলতার মত, অমর হতে পারল না অর্পিতা।
গৌতম আজ বন্দী, রাঁচির চার দেয়ালে,
এই বেয়াল্লিশ বছর ধরে সমাজের বুকে, আমার চারপাশে,
কত গৌতমদের পাগলাগারদ অথবা আত্মহনন
করে যেতে দেখলাম।
কত অর্পিতাদের দেখলাম-
মাটির বালুকনা থেকে আকাশের শুকতারা হয়ে যেতে,
দেখতে পেলাম না শুধু-
কোন একটি তারাকে খসে মাটির বুকে ঝরে পড়তে।।
-----------------------x----------------------------
তাড়াহুড়ায় বানান সংশোধন করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। সপ্তা দুয়েকের জন্য বাইরে যাচ্ছি। যোগাযোগ রাখতে পারবনা হয়তো, তাই আগেই ক্ষমা চাইছি। ফিরে এলে আপনাদের পদধুলি থেকে যেন বঞ্চিত না হই, এই কামনাই করি সকলের কাছে।