.       ধন্য কবির দল, তবুও তাঁহারা  কাব্য করিয়া যায়
   লো সই, ওই চাহি দ্যাখ্‌, জ্যৈষ্ঠ ফিরিয়া চলিল ধায়-
পাগলিনীর বেশে আষাঢ়ে প্রাবৃষা, আজি আসিতেছে হায়!
   কালীকা ধূমিকারা আসিল যে ঐ, দিলরে গগন ছায়
   তিল ঠাঁই আর নাই, দিবসের-তমসায় এই অবেলায়
    ধন্য কবির দল, তবুও তাঁহারা  কাব্য করিয়া যায়।


     পলকের তলে আসিগেলা, সে আষাঢ় ধারায়
     মাঠ ঘাট পথ ভাসিল, আজি এ গহীন বর্ষায়।
           আমনের ক্ষেত  জলে গিয়াছে ভরে
         ঘনবল্লিকার ঝলকানি গুরু গম্ভীর স্বরে
     দোসর তাহার শ্রাবণ ধারা তাই অঝোরে ঝরে
  আপন গৃহকোণে একাকি আনমনে, পথে চাহি দেখি
যে জনা গৃহছাড়া, কৃষি করে তারা, বাটিতে ফিরিল কি?


         কৃষ্ণকায় দিগম্বর সাঁওতাল বালকগণ
      হেমপ্লবগ শিকারীতে কোলাহল, করিতেছে রণ।
        আউলা বাতাস, এখনও অবিরত বরিষণ
  পূবালি কুজ্ঝটিকার এই গুরুভার সহিতে নারে আর
তবুও বিটপ দ্রুম মহিরুহ, ভীষ্ম পণ মানিবে না হার।
নাতি দূরে সব ঝাঁপসিয়া যায়, এই শ্রাবণ ঘন বরিষায়
  ধন্য কবির দল, তবুও তাঁহারা  কাব্য করিয়া যায়।


          সপ্ত অহঃ গিয়াছে পার অঞ্জিষ্ণুর মুখ দেখি নাই আর
  প্লাবিত পথ মাঠ, চর্তুদিক জলাধার, তবুও শ্রাবণের কমে নাই ধার।
       শহুরে প্রেমিকের বিকল দূরাভাষ, এখনও সচল হয় নাই
          হিয়ার মাঝেতে তাই, বহিছে অনল, চাঁপা দিয়া ছাই
    প্রেয়সীনির সনে, এই সপ্ত সিন্ধু দিনে, কি রূপে অভিসারে যাই।
    চঞ্চল যৌবনে, শ্যাম আসে, কাম আসে, শ্রীরাধার আশেপাশে
ঘন বাদ্‌লায় উতলা যমুনায়, খেয়াকড়ি দিতে এপথে সে যায় আসে।



       কাকভেজা হইয়া বিশ্ব বিনোদিনী উরসিলা উষসী নারী
      মনশ্চক্ষু দিয়া করিয়া রাসলীলা, উরসী সিক্ত বাস তারই,
       কোমলতায় সঁপে দিনু সব, আপনার কাছে আপনি হারি।
       শ্রাবণীয়া বারি বরষায়, তারই মেঘমল্লারের মীড়মুর্চ্ছনায়
     শুক্লাদ্বাদশীর বাঁকা শশী, তার গোল সুডৌল সুনিপুণ বক্রতায়,
   চিত্ত চঞ্চল সুর ও ছন্দের দোলা, চলে বিনোদিনীর গুরু তানপুরায়,
লেলিহ্বান তপ্ত জীহ্ব, তার নলকিনীতে, বিহ্বল শ্রীরাধা, নবোষ্ণ ছোঁয়ায়।


           কোথা যেন ধ্বনি শুনি বাঁধ ভাঙিবার
  ও লো, কে কোথা আছিস তোরা, যাসনে ঘরের বার,
         ভাঙি গেলা বাঁধ, বানভাসি হইল চারিধার।
     একই বৃক্ষশাখে আসীন, মরদুম ফণাকার ভেক-
      গৃহ ধসি ভাসি গেলা, আশ্রয়হারা হইল অনেক
    বানভাসি মানুষেরা খানিক আহার ও আশ্রয় চায়
   ধন্য কবির দল, তবুও তাঁহারা  কাব্য করিয়া যায়।।


--------------------------------x----------------------------
                                     ( বরষার আয়োজন )


পাদটিকাঃ  আমার প্রিয় কবিদের তালিকায় “মাইকেল মধুসুদন দত্ত” আছেন। তার রচনাবলী থেকে আমার আজকের কবিতায় কিছু শব্দ নিয়েছি। এই সব শব্দ হয়ত অনেকের জানা নেই। তাই বোঝার সুবিধার্থে সেই সব শব্দের অর্থ এখানে দিয়ে দিলাম।
(প্রাবৃষা=বর্ষাঋতু),(প্রসর্পণ=সঞ্চার, বিস্তার),
(কালীকা=কালো),(ধূমিকা=মেঘ),(ঘনবল্লিকা=বিদ্যুৎ,বিজলী),(বাটিতে=ঘরে,গৃহে),(কৃষ্ণকায়=কালো দেহ যার),(দিগম্বর=নগ্ন),(হেম=সোনালী বা সোনা),(প্লবগ=ব্যাঙ,ভেক),(অহঃ=দিন),(অঞ্জিষ্ণুর=সূর্য), (উরসিলা=উন্নত বা বৃহৎ বক্ষ বিশিষ্টা),(উষসী=রূপবতী, সুন্দরী),(উরসী=উদ্ঘাটন,উন্মুক্ত করা),
(নলকিনীতে=নারীর ঊরুসন্ধি),(নবোষ্ণ=নব+উষ্ণ),(আসীন=থাকা,বসে থাকা,অবস্থান করা), (মরদুম=মানুষ),(ফণাকার=সাপ,ভুজঙ্গ),