অবশেষে এক দিন গিয়ে দেখি-
মন্দিরের জীর্ণ গায়ের থেকে,
খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা।
জীর্ণ শীর্ণ ইঁটের শরীর বিদারণ করে
যত্রতত্র বট অশত্থের শিঁকড়।
জালনাগুলো আজও ঠিক সেইভাবেই বন্ধ,
যেমানটা দেখেছিলাম শেষবার খোলার পর।
দরজা জালনার কাঠগুলো বৃষ্টির জল
কাঠপোঁকা ও ঘুনের ক্ষুন্নিবৃত্তির সামগ্রী।
লোহার কলকব্জাগুলো খেয়ে নিয়েছে মরিচা।
সর্বত্র এখন ভর্তি হয়ে গেছে আগাছা ও পরগাছায়।
টিকটিকি, আরশোলা, ইঁদুর, বাঁদুড়ের বৃষ্ঠা ও ধুলোয়
ঢাকা মন্দিরের মেঝে। আর কোনাগুলো ভর্তি
শতাব্দী প্রাচীন মাকড়শার ঝুলে। ভর্তি হয়ে গেছে উড্ডীয়মান
সহস্র চামচিকির পাখসাট, আর বিষাক্ত সাপ ও তাদের
সদ্য পরিত্যাক্ত কিছু খোলসে।      তবুও...
গুঁটখাখোরের  নোংরা দাঁতের মত, মাটির উপরে
আজও নিজের ধ্বংস ও উপস্থিতি জানান দিচ্ছে,
মন্দিরের শূন্য দেউলে দাঁড়িয়ে মনে পড়ে কত কি!
জানি মন্দিরে আজ কোন বিগ্রহ নেই:
দেবী স্বয়ং গিয়েছেন আপন বিসর্জনে।
বলা ভালো নতুন কোন ফুলেল কুঞ্জবনে-
অথবা হয়ত তোমারই মনের মায়া কাননে,
কেনো যে, কোন্‌ নিশির ডাকে বারবার ফিরে আসি এখানে;
এই পোড়ো মন্দির পানে।
আর কান পেতে শুনি,
মন্দিরের না বলা গভীর গোপন ইতিহাসের পদধ্বনি।
আজ যাকে নিয়ে তুমি প্রেম প্রেম খেল-
একদিন!
তিনিই ছিলেন আমার আরাধ্যা, আমার পূজার দেবী।
আমি তো চাই তোমাদের সকলের পাপী মন-
পাপী থেকে যাক। পূজার হোমানলে পুড়ে পুড়ে
আমার মনের মত;
যেন এই পোড়ো মন্দির না হয়ে যায়!
জানি না! একি আমার আশা, না কি
ভবিতব্য বিফল মনোষ্কাম।
আমি তো জানি! দেবী বড়ই চঞ্চলা
একই পূজারির পূজা তিনি বেশী দিন গ্রহণ করেন না।
ধীরে ধীরে দিকচক্রবাল বেয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে,
আমার পোড়ো মন্দির মনকে রাস্তার ধারে আবার
একলা পিছনে ফেলে রেখে,
মনহীন আমি, জীবনের পথে ধীরে ধীরে হেঁটে যাবো।
তারপর...
কি জানি আর কত পথ এইভাবে পাড়ি দিতে;
বাকী আছে তারপর...