আমার ক্ষুদ্রোপলব্ধিতে অনভূত হয় যে, কবিতা হল নানারঙের মিশ্রণে সৃষ্ট এক রসভাণ্ডার। কবিতার প্রথম উদ্দেশ্য হল রস সৃজন করা, সেই রসে প্রথম সিক্ত হবেন কবি আর যত বেশি পাঠক কবিতাতে কিংম্বা কবিতা উদ্ভূত অন্য মিঠারসে (যেমন - আবৃত্তি) মানুষ রসোসিক্ত হবেন ততই কবিতার সার্থকতা।


কবিতা হতে পারে নানারূপ রসময়ী:
রোমান্টিক রসে ভরা ক্ষীর,দ্রোহের রসে জ্বালাময়ী বাণী,কামরূপী যৌন রসে ভরপুর -কামোদ্দীপনার বাহক ( ভুলে গেলে চলবে না আমাদের দেশেই সৃষ্ট হয়েছিল মুনি  বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্র), অনন্ত শাশ্বত প্রেমের বাহকই আবার সেই কবিতা, কবিতা সময়োপযোগী বা বর্তমান বাস্তবিক চিন্তার ফসল যাকে আধুনিক বলা যেতে পারে, আবার কবিতা হতে পারে দুর্বোধ্য ( কিন্তু অবোধ্য নয়) শব্দের মারপ্যাঁচে বা ছন্দের বাহুল্যযুক্ত অথবা ছন্দহীন শব্দ সমষ্টি, ইত্যাদি। কিন্তু যাই হোক, কবিতা যদি রস সৃষ্ট করতে অপারগ হলে তাকে কবিতা বলা যাবে কিনা তা নিয়ে আমার মন সন্দিহান। তাই মনে হয়, মহান কবি মাইকেল বলে গিয়েছেন 'শব্দে শব্দে বিয়ে দিতে পারলেই কবি হওয়া যায় না'।


কালজয়ী কবিতা হতে গেলে কবিতার রসের সাথে সাথে দরকার তার বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা, চিরন্তন সত্যতা, ভাব প্রকাশ ভঙ্গিমা। কবিতার সহজ সরল শব্দ চয়ন হতে হবে হৃদয়গ্রাহী। কালজয়ী কবিদের থাকে এক সম্মোহনী শক্তি আর সেই শক্তি বিস্তীর্ণ পারবারে ছড়িয়ে পড়ে অদম্য উচ্ছ্বাসে; দিকে দিকে পৌছে যায় অবারিত গতিতে, ঝড়ের বেগে। কবিতার সম্মোহনী সূত্রিকায় আবব্ধ হয়  পাঠকবর্গ নিজের মনের অজান্তে। ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাঠককুল ভালবেসে ফেলে কবিতা আর কবিকে তাদের অন্তরে স্থান করে দেন চিরদিনের জন্য।


অতীব নিগূঢ় তাত্ত্বিক কবিতা অনেকের নিকট বিমূর্ত থাকলেও কবিভাবাপন্ন মানুষের চিন্তা শক্তির উৎসরূপে বিরাজশীল থাকে।সেই চিন্তার আধারেই উন্মেষিত হয় আরও নব নব ভাবনা। যার বহমানতা প্রবাহিত হয় এক কাল থেকে অন্যকালে।


----+++++++ অনুপম--++--++++++