অঙ্কুরোদগম অপরিহার্য জেনেও
যারা শস্যদানাকে মাটিচাপা দিয়ে রাখে
তাদের পূর্বপুরুষ কখনোই কৃষক ছিলেন না।
আমাদের একখণ্ড চাষের জমি ছিল,
মায়ের শাড়িটা মলিন, বাবার লুঙ্গিতে মাটির দাগ
আমাদের উদোম শরীর, পেট ভর্তি ক্ষুধা।
আমরা সেই জমিটায় ধানের বদলে পান
পানের বদলে আলু, তরিতরকারি, পুঁইশাক  
বাজারে যখন যেটার দাম, সেটাই ফলাই,
বছর গড়ায়, আমাদের পেট ভরে না।

একদিন বিপুল উৎসাহে বাবা এসে খবর দিলেন
'আর চিন্তা নেই, এবার আমরা গোলাপের চাষ করবো,
শহরে প্রতিটি গোলাপ পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়'
মা তাঁর মলিন শাড়িটার আঁচলে চোখ মুছলেন,
বাবা তাঁর মাটি-মাখা লুঙ্গিতে হাত বুলাতে বুলাতে
আমাদের উদোম শরীরের দিকে চেয়ে বললেন
'নাহ, আগে তোদের জন্য জামা কিনে দেবো'।

আমাদের চাষের জমিটা ফুলের বাগান হলো  
বাবা ফুল চাষী আর আমরা সবাই ক্ষেতমজুর,
মহা ধুমধামে শুরু হলো আমাদের স্বপ্নের চাষাবাদ;
সমস্ত জমিতে ফুটলো কাঙ্ক্ষিত গোলাপ
শুধু এক কোনায় কয়েকটা গাঁদাফুল
কখন যে মা বুনেছিলেন, টের পাইনি।
অতঃপর আমাদের ফসল তোলার মহোৎসব!
ফুলের ফসল বাঁধা হলো সযত্নে-সন্তর্পণে,
এরই মাঝে মায়ের মৃদু ইশারায় বাবার গৃহপ্রবেশ
একটা ফর্দ পড়তে পড়তে বেরিয়ে এলেন নিমেষেই
সেই প্রথম বাবাকে আমরা পান চিবুতে দেখেছিলাম।

মঙ্গলবারের ফুলের হাট, বেশ সরগরম
রিকশা-ভ্যানের 'পরে গোলাপের পশরা সাজিয়ে
ফুল চাষী বাবার সাথে আমরা দুই সহোদর ক্ষেতমজুর,
মুহূর্তেই একটা খবর ছড়িয়ে পড়লো মুঠোফোনে-
দেখতে মানুষের মতো একদল অজানা গ্রহের মানুষ
শহরের সকল ফুলের দোকান ভেঙে তছনছ করে
গগন বিদারী চিৎকারে ফরমান জারি করেছে-  
'আজ থেকে এই শহরে ফুল বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলো'
আমাদের দুই সহোদরকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে
কী যেন কী বলতে গিয়ে মাটিতেই ঢলে পড়লেন বাবা!
তখনও তার মুখে জীবনের প্রথম পানের পিক।
-------------------------
১৭/০৪/২০২৫